তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

  ## A hellojanata.com Presentation . 

রবি ডাকুয়ার কথামালা ।। 





 ## তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস আর  গুড়।


গোলপাতা নামে গোল হলেও আকারে লম্বাটে ধরনের । অনেকেই ভাবেন গোল পাতা বুঝিবা গোল হবে । কিন্তু আদতে তা নয় । উপরে ছবি । আর  এই গোল পাতার গাছেই জন্ম নেয় গোল ফল । 

গোলফল হতে পারে খেজুর রসের বিকল্প এবং এ দিয়ে তৈরী হতে পারে গুড় যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ব্যপক সাড়া ফেলতে পারে বাইরের জেলা গুলোতে।পিঠা,পুলি, পায়েস সহ সকল মুখরোচক খাদ্যের মান সাধারণ আখ বা খেজুর গুড়ের মতই স্বাদ রাখবে অটুট এই গোল ফলেল রস ও গুড়।তবে স্বাদে কিছুটা নোনতা যাতে শরীরের লবনের ঘাটতি পুরন হবে বলে গবেষনায় জানাগেছে।

www. hellojanata.com

গোলপাতা - যার বৈজ্ঞানিক নাম  Nypa fruticans নাইপা ফ্রুটিক্যান্স

সুন্দরবনের স্বল্প  মধ্যম লবণাক্ত অঞ্চলে এটি জন্মে এর পাতা প্রায় - মিটার লম্বা হয় এছাড়াও ভারত মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের উপকূলীয় এবং মোহনা এলাকার একপ্রকার পাম  জাতীয় উদ্ভিদযাদেরকে 'নিপা পামনামেও ডাকা হয়

আগুনের উত্তাপে শুকিয়ে ঝোলা গুড় তৈরী করা হয় বরিশাল অঞ্চলে গুড়কে মিঠা বলা হয় স্বাদের গুণগত ভিন্নতার কারণে গোলপাতার গুড়কে খেজুরের গুড়  এবং তালের গুড়  থেকে সহজে আলাদা করা যায়৷ 

বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউটের তত্ত্বাবধানে বাগেরহাটের মংলা উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের খোনকারবেড় গ্রামে গোলপাতার রস থেকে গুড় তৈরীর প্রকল্প চালু আছে স্বাদের পাশাপাশি গোলের গুড়ের ঔষধিগুণ আছে

 


এই গোল পাতা ভারত মহাসাগর  এবং  প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলের  এবং মোহনা এলাকার এক প্রকার পাম  জাতীয় উদ্ভিদযাদেরকে নিপা পাম নামে ডাকা হয় এটি পামের একমাত্র প্রজাতি যা   ম্যানগ্রোভ  অঞ্চলে মেলে। গোলগাছের চাষ অত্যন্ত লাভজনক এবং সহজসাধ্য  গোল চাষে খরচ কম এবং ব্যয়ের অনুপাতে আয় হয় অনেকগুণ বেশি কারণ চাষে রাসায়নিক সার  কীটনাশক বিশেষ প্রয়োজন হয় না। গাছের বিশেষ কোন পরিচর্যা করতে হয়না। গাবনা বা গোলগাছের বীজ সংরক্ষণ করে তা নোনা জমিতে পুঁতে দিলেই চারা গজায়। একটি গোল-ছড়ায় একশ থেকে দেড়শটি বীজ থাকে ফলে একটা ছড়া থেকে দেড়শো গোল গাছ পাওয়া যায়

ম্যানগ্রোভ বা উপকূলীয় বনাঞ্চলে গোল গাছ প্রাকৃতিক ভাবে জন্মে কলাপাতা উপজেলায় গোলগাছ চাষ করা হয় নিচূজলাভূমিখালের পাড় ইত্যাদি জায়গায় যেখানে নোনা পানি  সহজলভ্য গোল গাছের বেড়ে ওঠার জন্যে লবনাক্ত পানি অপরিহার্য গোলগাছের বাগানকে বলা হয় গোলবহর  আষাঢ় মাসে  গোল গাছের ডাণ্ডিতে গাবনা ফল আসে পৌষ মাসে ফলসহ মাটিচাপা দিয়ে ডাণ্ডিকে নুয়ে দেওয়া হয় অগ্রহায়ণ মাসে ডাণ্ডিটি মানুষের পায়ের আলতো চাপে দক্ষতার সঙ্গে রসে ভার করার জন্য দোয়ানো হয় ১৫ দিন দোয়ানোয় পর গাবনা ছড়ার আগাছা পরিষ্কার করে ডগার মাথা থেকে গাবনা ফলের থোকা ধারালো দা দিয়ে এক কোপে কেটে ফেলা হয় ডাণ্ডির কাটা অংশ দিন তিনেক শুকিয়ে নেওয়ার পর সকাল-বিকেল দুইবেলা পাতলা করে চেঁছে ফেলা হয় দুই সপ্তাহ এভাবে চাঁচ দেয়া হয় দুই সপ্তাহ পরে প্রতিদিন বিকেলে উক্ত ডাণ্ডার মাথা থেকে কিঞ্চিত অংশ কেটে একটি ছোট্ট হাঁড়ি কিংবা ভাঁড় ঝুলিয়ে দেয়া হয় পরদিন খুব ভোরে রস সংগ্রহ করা হয় এবং ভাঁড়টিকে ধুয়ে শুকোতে দেয়া হয়

পৌষ থেকে  ফাগুন মাস  পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা হয়। একটি ডাণ্ডি থেকে ২৫০-৫০০ গ্রাম পর্যন্ত  রস  পাওয়া যায়। এই রসকে আগুনে জ্বাল দিয়ে ঘন করে  গুড়  প্রস্তুত করা হয়। রস জ্বাল দেওয়ার জন্যে গোলপাতা গাছের শুকনো মুথা (ডাটাব্যবহার করা হয়। ঘণ গুড়কে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ছেঁকে নেয়া হয়। ২৫-৩০ লিটার রস ধরে এমন এক কলসি  গোলপাতার গুড় থেকে তিন থেকে চার কেজি গুড় পাওয়া যায়৷




গোলপাতা সুন্দরবন সংলগ্ন ও এর আসপাশে সবারি একটি অতি পরিচিত নাম।দেখতে এটি নারকেল পাতার সাদৃশ্য। কিন্তু সকল পাতার চেয়ে এটা মজবুত এবং স্বল্প সময়ে এটি পচন ধরে না। স্থানীয় অধিবাসীদের ঘরের চালায় ছাউনি হিসেবে এটি ব্যপক চাহিদা রয়েছে। অদূর অতীতে স্থানীয় অধিকাংশ ঘরের চালায় এ গোলপাতার ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে।টিনের চালার বিপ্লবের যুগে বর্তমানে এর চাহিদা ততটা দেখা যায়ন।

তবে এর ফল ঠিক তাল বা নারকেলের মত ভিতরে পানি শাস সবই আছে। স্থানীয় লোকের এর ভিতরে শাস খুবই প্রিয়। তবে এর আর একটি বৈশিষ্ট ও গুনাবলি হচ্ছে এটি তালের মত কেটে রস ঝরানো যায় যা ‍দিয়ে খেজুর ও তালের রসের মতই খাদ্যে ব্যবহার করা যায়। এমনকি এ রস দিয়ে বিভিন্ন মিষ্টি সামগ্রি সহ গুড় তৈরী করা যায়।

সাম্প্রতীক সুন্দরবনের উপর গবেষনা ও ডক্টরেট করা একদল গবেষক এ বিষয়ে গবেষনা করে এর দিক খেয়াল করে ফলও সাফল্য পেয়েছেন।তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় সহ দেশের গুড়ের ব্যপক চাহিদা মেটাতে পারে এ গোলপাতার রস ও গুড়।

সুন্দরবন ছাড়াও এর আশপাশের জেলার অনেক বাড়িতে বা পতিত জমিতে এ গোলফলের আবাদ হয়। কোনটা বন থেকে ফল ভেসে আসা থেকে আবদ হয়, কেউ আবার চারা উৎপাদন করে তার চাহিদা মেটান।স্থানীয় অনেকে আজও ঘরে চালা সহ রান্না ঘর গোয়াল গরে নিয়মিত এ গোলপাতা ব্যবহার করছে।তাদের অনেকের কাছে এ ফলের শাস খাওয়ার জন্য খুব জনপ্রিয় হলেও এর ফল থেকে যে তালের মত রস বের করা যায় তা অনেকের অজানা বা ধারনার বাইরে। কিন্তু এটা খুবই সহজ এবং সফল একটি পদ্ধতি।এবং গোল ফল স্বাভাবিক ভাবেই নিচেই ধরলে এর রস সংগ্রহের জন্য কাটা ও রস সংরক্ষণ খুবই সহজতর হবে। স্থানীয়ভাবে খুব কম সংখ্যক ও পরিক্ষা মুলক ভাবে এর রস সংগ্রহ হলেও একে আরো জনপ্রিয় করতে ব্যপক প্রচারনা সহ প্রশিক্ষণ দরকার।

www. hellojanata.com

স্থানীয় অধিবাসীদের পতিত জমি বাড়ির আঙিনায় এবং নিকটস্থ নদী ও খালের পাড়ে এ ধরনের গোলপাতা থেকে বাড়তি আয় হতে পারে। অনেকে চাইলে এ ধরনের গোলপাতা চাষ করে আবাদ গড়ে তুলে ব্যপক সাড়া ফেলতে পারেন।যাতে স্থানীয় গুড়ের চাহিদা মিটে আয় হবে অনেকের।


সহায়তা - উইকিপিডিয়া ।। 



                                                                 ম.ম.রবি ডাকুয়া।।

কবি,লেখক, সাংবাদিক।।
বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি ।।
## লেখাটি আমাদের ব্লগ ও সামাজিক মাধ্যম সমুহে প্রকাশিত ।।
হ্যালো জনতা ডট কম ।।

হ্যালো জনতা ডট কম ।।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।