বাঙলা বানানে ভাইরাস-৬- আবদুল হাকিম ।।

 বাঙলা বানানে ভাইরাস-৬।।

আবদুল হাকিম ।।



প্রথম লেখা – ২০০৩ ।
সঙস্করন – ২০২১ ।

ধরা যাক ” জাতি ” শব্দ’টি । এখানে ই-কার ব্যবহার করা হয়েছে । কিনতু যখনই ” জাতিয় ” শব্দটি লিখছি তখন ঈ-কার এসে হয়ে যাচ্ছে ” জাতীয় ” । এ কেমন কান্ড ? এই কান্ডের কারনে হরহামেসাই আমারা এই শব্দদুটি লিখতে বানান বিভ্রাটের সৃষ্টি করে থাকি । আমরা যদি ই-কার দিয়ে ” জাতিয় ” শব্দটি লেখার অভ্যাস করতে পারি, কিছুদিন পরে ওটাই শুদ্ধ হয়ে যাবে । বানান বিভ্রাটের বড় একটা শঙ্কা থেকে আমরা মুক্ত হব । পন্ডিতদের স্থান অনেক উপরে । কিনতু সাধারন মানুষ, যারা বাঙলা ব্যাকরনের সন্ধি-বিচ্ছেদ বা প্রত্যয় সম্বন্ধে ততটা ভালো অবগত নন, তারা ” রবীন্দ্র ” বা ” জাতীয় ” শব্দদুটির বানানে ঈ-কারের কারন বুঝতে পারবেন না । তাই তাদের শব্দদুটি লিখতে গিয়ে বিভ্রান্ত হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত । অথচ তাদেরও বাঙলা ভাষা ব্যবহার করতে হবে । তাই এতো জটিল ফর্মুলার দরকারটা কি ? এ দু’টি শব্দের ক্ষেত্রে ই-কার ব্যবহার করলে মানে বুঝতে পারবেননা এমন একটি লোক খুজে পাওয়া যাবে কি ? যদি সত্যি খুজে পাওয়া না যায় তবে ঈ-কারের দরকারটা কি ? কেন এই জটিলতা ? এতে সাধারন মানুষ যেমন অনেক স্বস্তি পাবেন, তেমনি লেখকদের কলমও আটকে যাবে বলে মনে হয়না ।

জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের ” তেতুল বনের জোছনা ” উপন্যাসটির কথা ধরা যাক । তিনি বইটিতে ” জরুরি ” বানান লিখতে গিয়ে অনেকবার ই-কার ব্যবহার করেছেন । একই উপন্যাসে তিনি ” মেহেরবানি ” শব্দটি দুই জায়গায় লিখতে গিয়ে এক জায়গায় ই-কার এবঙ অন্য জায়গায় ঈ-কার ব্যবহার করেছেন । কাজটি যদি তিনি সচেতন ভাবে করে থাকেন তবে বুঝতে হবে তিনি ঈ-কারের প্রয়োজনিয়তা অনুভব করেননি বা এটা নিয়ে তিনি ততটা গুরুত্ব দেননি । আবার যদি অবচেতন মনে বা মুদ্রন বিভ্রাটের কারনে হয়ে থাকে তাহলেও আমাদের কারও শব্দ দু’টির মানে বুঝতে অসুবিধা হয়নি । আমরা এ নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাইনি । অর্থাত, বানানটি আমরা মেনে নিয়েছি । সাধারন পাঠকের কাছে কোন সমস্যা হয়নি ।



সাহিত্যগুরু সৈয়দ শামসুল হক তাঁর ” মার্জিনে মন্তব্য ” বইটিতে ” জরুরি ” শব্দটি লিখতে গিয়ে সবসময়ই ই-কার ব্যবহার করেছেন । আবার ” রঙিন ” শব্দটি লিখেছেন এভাবে – ” রঙিন ” । পৃষ্ঠা – ২৩৫ । একই বইয়ে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের গল্প ” ভয়ংকর ” উদ্ধৃত হয়েছে । সেখানে “ রঙিন “ শব্দটির বানান লেখা হয়েছে ঈ-কার দিয়ে । এমনি ভাবে ” তৈরি ” শব্দটি’র ক্ষেত্রেও একই কথা । ই-কার ও ঈ-কার উভয়ই চলছে, যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে । রবীন্দ্রনাথ কিনতু ” তৈরি ” লিখতে ই-কার ব্যবহার করে গেছেন অনেক আগেই ।

আবার ধরা যাক ” জানুয়ারি ” বা ” ফেব্রুয়ারি ” বানানের কথা । অনেক আগে থেকেই আমরা দেখে আসছি এ দু’টি বানানে ঈ-কার ব্যবহার হয়ে থাকে । কিনতু আনন্দের কথা, আজকাল জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি লিখতে প্রায়ই ই-কার ব্যবহার হচ্ছে । ফলে এই মুহুর্তে দু’টি বানানই চলছে । খুব তাড়াতাড়ি এ দু’টি বানান থেকে ঈ’কার একেবারেই ঝরে পড়বে, একথা জোর দিয়েই বলা যায় । এখানে আরও কিছু উদাহরন দেই । নাসরিন জাহানের পুরস্কার প্রাপ্ত উপন্যাস ” উড়ুককু ” । ১৯২ পৃষ্ঠায় তিনি এক জায়গায় লিখেছেন, —- ” যাহোক, শহীদ মিনারের কাছে এসে —- ।——–।——-। কিনতু আমার মধ্যে —– খাড়া শূন্য শহিদ মিনার অন্য সময় —–। ” এখানে তিনি “ শহিদ মিনার “ লিখতে গিয়ে একবার ই-কার, আর একবার ঈ-কার ব্যবহার করেছেন । আবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার বিখ্যাত উপন্যাস ” পূর্ব-পশ্চিম ” ২য় খণ্ডে লিখেছেন, ——– ” চায় রক্তস্নাত শহিদ । মা মনি আমরা সবাই শহিদ হয়ে যাবো । ” —। পৃষ্ঠা -৩০৩ । —– ” প্রথম শহিদ বাংলাদেশের মেয়ে —— একাত্তরের এক শহিদ মেয়েকে নিয়ে লেখা ” ——–। পৃষ্ঠা – ৫৬৭ । —— ” মনুমেন্ট হয়ে গেছে শহিদ মিনার । ” —— পৃষ্ঠা – ৫৮৫ । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় শহিদ লিখতে ই-কার ব্যবহার করেছেন । আমরা তার এই বানান নিয়ে কোন আলোচনা বা হৈ চৈ করছিনা । কারন অর্থ বুঝতে আমাদের কারো কোন অসুবিধা হয়নি । অর্থাত ওই বানান আমরা মেনে নিয়েছি । অভিধানেও ই-কার ও ঈ-কার, দুই ভাবেই উল্লেখ আছে, যা আরও বেশি বিভ্রান্তিকর । – ( চলবে- পরের অংশ আগামী শুক্রবার পাবেন)  । 



আবদুল হাকিম ।।
প্রবাসী লেখক ।।
বাল্টিমোর, আমেরিকা ।।
# জনাব আবদুল হাকিম হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।