সব পেয়েছির দেশে # ৩২# বাল্টিমোর থেকে আবদুল হাকিম ।।

সব পেয়েছির দেশে।।

# ৩২#
আবদুল হাকিম ।।



ঢিলেঢালা দোকান । তেমন একটা ব্যস্ততা নেই । এটা ওটা করে সময় পার করে যাচ্ছি । পাশের সু ডিপার্টমেন্ট থেকে নিকোল এগিয়ে এলো । হ্যালো আবদুল, হাউ আর ইউ ? ওর সাথে আমার একটা খায় খাতির হয়ে গেছে । ভালোমন্দ দু’একটা কথাবার্তা চলে । ও জিজ্ঞেস করলো, এক মাস উপবাসের পর ইদ উৎসব কেমন হল ? আমি বললাম, ভালোই কেটেছে । ওয়াশিঙটন ডি সি ভ্রমনের কথাও বললাম । তারপর ও আমার কাছে রোজার তাৎপর্য সম্বন্ধে জানতে চাইলো । আমাদের ধর্মে কেন এই রোজা বাধ্যতামুলক ? আমি বললাম, দেখো নিকোল, আমি কোন ধর্মিয় স্কলার নই । সাধারন ভাবে আমি যা বুঝি তাই তোমাকে বলতে পারি । – বেশ, বল দেখি । আমি বললাম – প্রত্যেক মানুষের ভিতর কিছু না কিছু পশুবৃত্তি থাকে, যার কারনে পৃথিবিতে বিভিন্ন রকম অপরাধ, অঘটন ঘটে থাকে । এই পশুবৃত্তিকে দমন করার জন্যই মুলত আমাদের ধর্মে এই বিধান । বাহ্যিক ভাবে আমরা সারদিন না খেয়ে থাকাটাই দেখি । কিন্তু না খেয়ে থাকাটাই একমাত্র বিষয় না । নিজেকে কন্ট্রোল করাই এর মুল উদ্দেশ্য । সে ক্ষেত্রে শারিরিক কন্ট্রোল একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয়তো বটেই । অনেক ধরনের অসুখ বিসুখ থেকে রোজা মুক্তি এনে দেয় । এ ছাড়া রোজা অবস্থায় কোন প্রকার অন্যায় অপরাধ করা যাবে না । যেমন ধর, মিথ্যা বলা যাবে না । চুরি করা যাবে না । কাউকে কটু কথা বলা যাবে না । অবৈধ লেনদেন করা যাবে না । যৌন মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে । খুনখারাবি’তো অনেক বড় অপরাধ । এই সব অপরাধ করলে সারাদিন না খেয়ে থাকাটা বৃথাই যাবে ।

– এক্সকিউজ মি স্যার, হোয়্যার ইজ দা ব্যাথ্রুম ? – ও । গো স্ট্রেট, দেন টার্ন রাইট । – থ্যাঙ্ক ইউ স্যার । – ইউ ওয়েলকাম । হ্যা নিকোল, যা বলছিলাম । তুমি মনে করতে পারো রমদান মাসটি একটি ট্রেনিঙ পিরিয়ড । কেউ যদি এই একটি মাস সঠিক ভাবে রোজা পালন করতে পারে, তবে সে বাকি এগারো মাস নিজেকে সৎপথে চালাতে পারবে বলেই আশা করা যায় । মানুষ বলে কথা । এই অভ্যাস ক্রমশ সিথিল হয়ে আসতে আসতে পরের বছরের রোজার সময় আবার এসে যাবে । এ ছাড়া জাকাতের ব্যাপারটাও নিকোলকে বুঝিয়ে বললাম । নিজেদের আপনজনদের ভিতর থেকে, যারা খুবই অভাবগ্রস্থ তাদের খুজে বের করে জাকাত দিতে হবে প্রথম । তারপর অন্যান্য অভাবগ্রস্থরা প্রাপ্য । অনেক অভাবগ্রস্থ আছে, যারা লজ্জায় কাউকে তার অভাবের কথা কাউকে বলতে পারে না, অথচ তাদের ভিতরের খবর কেউ রাখে না । তারাই প্রথম প্রাপ্য । সবচেয়ে ভালো হল, যদি জাকাতের এই অর্থ দিয়ে একজন অভাবগ্রস্থকে স্বাবলম্বি করে গোড়ে তোলা যায় । সঠিক ভাবে জাকাত আদায় করলে দেখা যাবে এমন একটা সময় আসবে যখন জাকাত দেবার মত আর কাউকে খুজে পাওয়া যাবে না । ধনিদের জন্য জাকাত প্রদান আমাদের ধর্মে বাধ্যতামুলক । একজন মানুষ এভাবে নিজেকে সঙশোধন করতে পারে ও সৎপথে চলতে পারে । আমাদের সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্ট স্রেষ্ঠ জিবকে এভাবেই দেখতে চান । তাই কেউ যদি তাঁর নির্দেশ মতো ইহকাল অতিবাহিত করতে পারে তবে পরকালে তাকে বেহেস্তবাসি করবেন বলে মহান সৃষ্টিকর্তা প্রতিস্রুতি দিয়েছেন । এখন এটা বিশ্বাস করা বা না করা যার যার ব্যাপার ।

নিকোল এতক্ষন মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমার কথাগুলো শুনছিল । এবার বড় একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো – জানতাম না । তোমাদের ধর্মটা আসলেই ভালো । আমি প্রায় রবিবারে চার্চে যাই । ওখানে অনেক বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হয় । আমি তোমার এই কথাগুলো ওখানে বলবো । তুমি যদি চাও, তবে তুমিও আমাদের চার্চে যেতে পারো । আমি খুশি হয়ে বললাম, ঠিক আছে নিকোল যাওয়া যাবে একদিন । – তোমাকে অনেক ধন্যবাদ । তা আমি এখন ক্যাসিয়ারের ট্রেনিঙ নিচ্ছি । ওখানে যেতে হবে । ইচ্ছে করলে তুমিও এই ট্রেনিঙটা নিতে পারো । যারা চায়, তেমন সব এমপ্লয়িকে এখন ক্যাসিয়ারের ট্রেনিঙ দেয়া হচ্ছে ।

আমি স্টোর ম্যানেজারকে ক্যাসিয়ার ট্রেনিঙের জন্য আমার আগ্রহের কথা জানালাম । তিনি বললেন, তোমাকে কোন ক্যাসিয়ারের সাথে কাজ করতে হবে । দেখো কেউ তোমাকে হেল্প করে কি না – । তার কথায় মনে হল, আমি যে এই কাজটি করতে পারি, তা যেন তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হল না । আমি এক এক করে কয়েকজন ক্যাসিয়ারের কাছে আমার অভিপ্রায় জানালাম । কেউ তেমন একটা পাত্তা দিল না । এমন একটা ভাব, এই লোকটা আবার ক্যাসিয়ার হতে চায়, এ তো ইঙলিস বুঝতেই পারে না ।

পাকিস্তানি একটা মেয়ে কিছুদিন আগে জয়েন করেছে । ওর নাম সুমায়রা । ও ফ্লোরেও কাজ করে, আবার ক্যাসেও কাজ করে । দেখলাম ও পিছনের রেজিস্টারে কাজ করছে । কি করব ! ওকে বলব ? না কি – একটা দ্বিধায় পড়ে গেলাম । পাকিস্তান নামটির প্রতি আমার দারুন এলার্জি । ওই নামটি শুনলেই আমার বুকের ভিতর এক রনসঙ্গিত বেজে ওঠে । – মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি — । ঠা ঠা ঠা —- ( চলবে )



আবদুল হাকিম ।।
প্রবাসী লেখক ।।
বাল্টিমোর, আমেরিকা ।।
# জনাব আবদুল হাকিম হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।