‘জীবন থেকে নেয়া’-আমার খোলা চিঠি — বনলতা বোস মোনা ।।

 জীবন থেকে নেয়া--- আমার খোলা চিঠি - বনলতা বোস মোনা ।। 


আমার আজকের চিঠি সকল পাঠক  বন্ধুদের উদ্দেশ্যে , তার প্রধান কারণ দেশে এক অস্থির সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে দূর্গা পূজা মহোৎসব কে কেন্দ্র করে , তার ই কিছু ভাবনা আমার এবারের লেখায় । কেউ কেউ হয়তো মনে করতে পারে  সবাই তো দায়ী নয় এই ঘৃণিত কান্ডে , তবে কেন এখানে লেখা ??


উত্তর হলো , " আমরাই দেশের বর্তমান , আমরা যদি নিজেদের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ না করি তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কে আমরা কি শিক্ষা দেব ?? বর্তমান হিসেবে আমাদের কাজ অসাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করা  আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে।


আমার সব লেখাই আমার জীবনের লেখা , এটাও আমার জীবন থেকে নেয়া । 


ভারতে থাকাকালীন আমার কাজের মেয়ের নাম ছিল রুখসানা , বোরকা পড়ে কাজ করতে আসতো । বোরকাটা ব্যালকনিতে ছেড়ে তারপর কাজ করতো । রুখসানার শুক্রবারের নামাজ টা আমার বাসায় পড়তো ঘরের এক কোনে পশ্চিম মুখী হয়ে । আমার একটা নতুন শাল ওর জন্য বরাদ্দ থাকতো , ওই শাল আমি কখনো গায়ে দেইনি । নাহ , কোন মুসলমান নামাজ পড়েছেন বলে না , ওটা ওর প্রার্থনার জন্য দরকারি কাপড় , তাই আমি সযত্নে রেখে দিতাম। 

রুখসানার সাথে আমার ভীষণ সখ্যতা , ওকে আমি পরিবারের সদস্যদের মতো রাখতাম ।


আমার জন্মদিনে সেই রুখসানা একটা রাধাকৃষ্ণের মূর্তি নিয়ে এসে উপস্থিত গিফট হিসেবে । আমি তো খুব বকাঝকা করেছি টাকা খরচ করবার জন্য , তবে ওর গিফট সিলেক্ট করবার উদরতায আমি মুগ্ধ ।  রুখসানা হয়তো মেট্রিক পাশ ও করেনি , কিন্তু উদার মানসিকতায় সে পি এইচ ডি করেছে !   


জীবনের একটা নিয়ম আছে ,আর সেটা হলো 

" তুমি জীবন কে যা দিবে , জীবন তোমাকে তাই ফেরত দিবে " 


হয়তো আমি যে ওর জুম্মা বারের নামাজ পড়ায় সাহায্য করেছি , তাই হয়তো ও আমার জন্য  ও সব সংকীর্ণতা পেরিয়ে এই গিফট নিয়ে এসেছে । আমার ঘরের শোকেসে ওর দেয়া  উপহার টা এখোনো শোভা পায় ।


রুখসানা ঈদের সময় সেমাই নিয়ে আসতো গরম গরম , কোনদিন মনে হয়নি ওটা ঈদের মুসলমানদের সেমাই , ওটা খাওয়া যাবে না । আমার বাড়ির পূজোর নাড়ু তো ওর সবচেয়ে প্রিয় , প্রতিবছর এই নাড়ু বানাতে সাহায্য করতো অতি উৎসাহী হয়ে ।


আচ্ছা , এই গ্রুপে (লেখকের নিজস্ব গ্রুপ)  আমরা তো সবাই আই এ পাশ । রুখসানা যদি পড়ালেখা না জেনেও  আমার পূজোর সব ধরনের সাহায্য করতে পারে , আমি যদি ওর সব ধরনের ধর্মের অনুভূতি কে শ্রদ্ধা জানাতে পারি ,  তাহলে তোরা কেন পারবি না ??দেশের মিলাদে কি কোন হিন্দু মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি যায় না ??পূজোর প্রসাদের জন্য ফলমূল মিষ্টি কি কোন মুসলিম এর দোকান থেকে আসে না ??  তবে কেন এই ভেদাভেদ ?? 


রাজনীতিবিদ রা অনেক খেলা খেলবেন,আর আমাদের দেশে ধর্ম হলো এই খেলার মুল উপাদান । কিন্তু আমরা যেন তাতে বিহ্বল না হই । তোরা/তোমরা সবাই আমার বন্ধু জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে । তোদের উৎসব যদি আমায় ছুঁয়ে না যায় , আমার উৎসবে যদি তোরা আনন্দিত না হতে পারিস তাহলে তো আক্ষেপ ছাড়া আর কিছু করার নেই । 


জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার কবিতায় কিছু লাইন---  


মোরা এক ই বৃন্তে দুইটি কুসুম হিন্দু মুসলমান

মুসলিম তার নয়নের মনি , হিন্দু তার প্রাণ ।

এক সে আকাশ মায়ের কোলে যেন রবি শশী দোলে 

এক রক্ত বুকের তলে , এক সে নাড়ির টান 

মোরা এক ই বৃন্তে দুইটি কুসুম হিন্দু মুসলমান ।।

----

@ সাম্প্রদায়িকতা নিপাত যাক , অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আমাদের আজীবনের স্বপ্ন । সুস্থ থাক সবাই , এই প্রত্যাশা সদাই ।

# দেশে অনেকের সাথেই আলাপ করেছি ,অন্যান্য ধর্মের বন্ধু বান্ধব যেন অনেক বেশী লজ্জিত হয়েছেন বলে মনে হয়েছে আমার । তাঁদের প্রতি আমার সম্মান রইল । 

---- 

বনলতা বস মোনা ।।

প্রবাসী লেখক ।

ক্যালিফোর্নিয়া , ইউ এস এ।

# হ্যালো জনতার নিয়মিত কলাম লেখক( বৃহস্পতিবার )।। 



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।