" বাঙলা বানানে ভাইরাস " ৫ আবদুল হাকিম ।।

 " বাঙলা বানানে ভাইরাস "

    ৫ 

আবদুল হাকিম ।।  





ঈ অক্ষরটির কথা প্রথমে একটু আলোচনা করা যাক । মন্ত্রি / প্রধানমন্ত্রি, এ’দুটি গুরুত্বপুর্ন শব্দ লিখতে আমরা সাধারনত ঈ-কার ব্যবহার করে থাকি । কিন্তু যখন আমরা লিখবো মন্ত্রিসভা, মন্ত্রিগন অথবা মন্ত্রিপরিষদ, তখন ? তখন কি বানান লিখতে হবে ? আপনার আসেপাসে একবার খোজ নিয়ে দেখুন’তো কতজন শিক্ষিত লোক সঠিক উত্তর দিতে পারেন ? হ্যা । প্রচলিত ব্যাকরনসম্মত সঠিক বানান হচ্ছে, মন্ত্রী / প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভা / মন্ত্রিগণ / মন্ত্রিপরিষদ । যখনই “ মন্ত্রী “ শব্দটির সাথে সভা, গন বা পরিষদ যুক্ত হচ্ছে, তখনই ঈ-কারের বদলে হয়ে যাচ্ছে ই-কার । অদ্ভুত এই ব্যাকরনতত্ত্ব আমাদের কতজনের পক্ষে আত্মস্থ করা সম্ভব ? তাইতো বানান ভুলের এই মহামারি চলতেই থাকবে ।        


 


ধরা যাক, " জরুরি " শব্দটি । এই শব্দটি লিখতে গিয়ে ই-কার, ঈ-কার উভয়ই ব্যবহৃত হচ্ছে । অফিস আদালতে “ জরুরি “ আর হাসপাতালে “ জরুরী “ । সরকারি দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে লেখা থাকে “ জরুরি বিজ্ঞপ্তি “ । তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বলে কথা ! তাই বোধ হয় তারা প্রতিজ্ঞা করেছেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ঈ-কার দিয়েই লিখতে হবে, “ জরুরী বিভাগ “ । অভিধান হাতড়ে দেখি, দুইরকমই দেয়া আছে । এ’তো আরও বড় সমস্যা । বাড়ি গাড়ি পাখি এগুলোর ক্ষেত্রে'তো ই-কার না ঈ-কার হবে তা নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই । ফ্রি স্টাইলে চলছে । " সরকারি "  শব্দটি'র বানান লিখতে ই-কার না ঈ-কার হবে, তা নিয়ে সরকার নিজেই বোধহয় দ্বিধাগ্রস্থ । সেদিন চোখে পড়ল বৈশাখি বানান । ১৬ এপ্রিল ২০০৩ তারিখের  " দৈনিক ইত্তেফাক " লিখেছে, “ কালবৈশাখীতে রাজধানীতে দেয়াল ধসে শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু । " একই দিনে " প্রথম আলো " লিখছে, " কালবৈশাখিতে প্রাচীর ভেঙে ২ বোনসহ ৪ জনের মৃত্যু । "  আমি এখন কি করব ?  বৈশাখি বানানটি'তো আমাকেও লিখতে হবে । আমি ই-কার দেব, নাকি ঈ-কার দেব ?  অভিধান খুলে দেখি ঈ-কার দেয়া আছে । কিনতু " প্রথম আলো " দেশের একটি প্রধান পত্রিকা । সে কি অভিধান মানে না ?  না কি ?  তার কথাও ফেলে দেই কিভাবে ?  ভাবলাম, “ বৈশাখি “ লিখতে যদি ই-কার দেয়া হয়, “ প্রাচির “ বানানে কেনই বা ঈ-কার রয়ে গেল ?  এমনি উদাহরনের শেষ নেই ।  


 



অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী রবীন্দ্রনাথের বানানে ঈ-কারের বদলে ই-কার স্থাপনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন । রবি+ইন্দ্র = রবীন্দ্র । সন্ধি বিচ্ছেদ সঠিক । এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । কিনতু যার পক্ষে এ সন্ধি বিচ্ছেদ মনে রাখা সম্ভব হলনা, বা আদৌ যিনি জানেন না,  তিনি যদি “ রবীন্দ্র “ লিখতে গিয়ে ই-কার দিয়েই বসেন, তাহলে ভাবতে হবে তিনি কেন এই কাজটি করলেন ? বিষয়টি রিতিমত একটা গবেষনার । তিনি কি ইচ্ছাকৃত এটা করেছেন ? না কি না জেনেই করেছেন ? ব্যাকরনসিদ্ধ বানান না জানার অপরাধে তিনি কি তা’হলে শব্দটি কোথাও লিখবেন না ?  অথবা তিনি কি কম্পিউটার কর্মি হবার অধিকার হারাবেন ?  বাঙলা ভাষার চর্চা থেকে তিনি কি তার অধিকার হারাবেন ? অজ্ঞতাবসত হোক বা ছাপার ভুলই হোক,  ই-কার দিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখলে কেউ মাথায় বাড়ি মেরে তা দ্বিখন্ডিত করতে যাচ্ছে না । অথবা ই-কার যুক্ত রবীন্দ্রনাথের মানে কি ?  অথবা তিনি কে ?  কোথায় তার ধাম ?  এসব প্রস্ন উত্থাপিত হবে বলেও মনে হয়না । রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথই থেকে যাবেন । তবে কারও নামে হাত দেবার অধিকার কেউ রাখে না, এ কথা যেমন সত্যি, তেমনি এই বিভ্রাটটির জন্য ঈ অক্ষরটির সঠিক ব্যবহার না জানাটাও তেমন সত্যি । এখন প্রস্ন হল, কতদিনে ঈ অক্ষরটির সঠিক ব্যবহার প্রতিটি বাঙলাভাষি সঠিকভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হবে ? না কি অনন্তকাল কাল ধরে এই জটিলতা চলতেই থাকবে ? যদি তাই হয় তবে বুঝতে হবে, ঈ অক্ষরটির আর কোন প্রয়োজন নেই । অথবা সে তার প্রয়োজনিয়তা হারিয়েছে ।  


 


উচ্চারন করতে গিয়ে ই এবঙ ঈ'তে যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে তা সুধু মাত্র ই দিয়েও বহাল রাখা সম্ভব । আতকে ওঠার কিছু নেই । এদুটি বর্ন বা অক্ষরের উচ্চারন বা অর্থ বহনে পার্থক্য থাকলে’তো তার শব্দের অর্থেও পার্থক্য থাকবে । এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে কি আমরা সবসময়ই ই-কার, ঈ-কারের সঠিক প্রয়োগ দেখতে পাচ্ছি ? “ তৈরি “ শব্দটি লিখতে ই-কার বা ঈ-কার যাই দিই না কেন, উচ্চারন বা অর্থ কিন্তু একই থাকছে । ই-কার দিয়ে “ তৈরি “ লিখলে তা কাঠের তৈরি, আর ঈ-কার দিয়ে “ তৈরী “ লিখলে তা লৌহ নির্মিত, এমনটি বোঝায় কি ? হাসির ব্যাপার না ? তা অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এমনকি কবি সাহিত্যিকদের হাতে পর্যন্ত ই-কার ঈ-কার প্রস্নবিদ্ধ হয়ে চলেছে অহর্নিশি । যদি এভাবেই চলতেই থাকে, আর কাজে অথবা বাঙলা ভাষা চর্চায় যদি ওই বানান বিভ্রাট কোন বাধা হয়ে না দাড়ায়, তবে অহেতুক ওই ঈ অক্ষরটিকে বাচিয়ে রাখার দরকারটা কি ? - ( চলবে-পরের পর্ব আগামী  )   




আবদুল হাকিম ।।

প্রবাসী লেখক।।

বাল্টিমোর ,ইউ এস এ ।। 

#  হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।