বাঙলা বানানে ভাইরাস -৭- আবদুল হাকিম ।।

 

বাঙলা বানানে ভাইরাস -৭- 

আবদুল হাকিম ।।


 প্রথম লেখা ২০০৩-  সঙস্করন – ২০২১


একই শব্দে দুই রকম বানান ! ব্যাপারটা হাস্যকর বলেই মনে হয় । এর ফলে সুধু জটিলতাই সৃষ্টি হয় । দুটি বানানই যদি শুদ্ধ হয়, তাহলে একটিকে বেছে নিলেই হয় । আর তাই যদি হয়, তাহলে ঈ-কারের দরকারটা কি ? ই-কারে ঈ-কারে যদি উচ্চারনে বা অর্থ বহনে কোন পার্থক্য থেকেই থাকে, তাহলে’তো এমনটি হতে পারে না । জরুরি ও জরুরী এ’দুটি শব্দের অর্থও’তো ভিন্ন হয়ে যাবে । গুনিজনেরা বলেন, প্রত্যেকটি অক্ষরের একটি স্বতন্ত্র উচ্চারন ও অর্থ নিয়ন্ত্রন খমতা আছে । যথার্থ । যদি তাই হয়, তাহলে’তো বানান ভুল হবার কথা না । সে খেত্রে একই শব্দে দুই রকম বানান কিভাবেই বা মেনে নেয়া সম্ভব ? সেই কবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গাড়ি বাড়ি পাখি বানানে ই-কার ব্যবহার করে গেছেন, কিনতু আজও আমরা এই বানানগুলো লিখতে ই-কার না ঈ-কার হবে তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলি । যেমন কবি সমুদ্র গুপ্তের ” সাত সমুদ্র ” কাব্য গ্রন্থের একটি কবিতায় তিনি লিখেছেন, ” ——– তুমি আমার বাড়ীতে এসো । ” পৃষ্ঠা – ৪২ । একই গ্রন্থে অন্য একটি কবিতায় তিনি লিখেছেন, “—— বিশাল বাড়ি কপাট বিহীন । ” পৃষ্ঠা – ৪৫ । এখানে তিনি বাড়ি লিখতে গিয়ে একবার ই-কার, আর একবার ঈ-কার ব্যবহার করেছেন । বেশিদুর যেতে হবে না, আপনার এলাকার স্কুলের স্রেনিকক্ষের ফলকের দিকে তাকালেই হয়তো ঈ-কারের প্রয়োজন অপ্রয়োজনের দুএকটা উদাহরন খুব সহজেই পেয়ে যাবেন । যতদিন পর্যন্ত ঈ-কার বেচে থাকবে, ততদিন এই তালগোল পাকানো থেকে আমাদের রেহাই নেই ।

তেমনিভাবে ” একাডেমি ” বানান লিখতে গিয়েও যে ঈ-কারের বদলে ই-কার এসে যাবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই, যা সুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র । ইতোমধ্যে শুরু হয়েও গেছে । যেমন – ডঃ হুমায়ুন আজাদ তার ” আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম ” বইটির ১০১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন “——– বাঙলা একাডেমির মহাপরিচালককে —— ” । এ ছাড়া আধুনিক পত্র পত্রিকার পাতায় লক্ষ্য করলে একাডেমি বানানে ই-কারই দেখা যায় । অত্যন্ত আনন্দের কথা, আজ ২০২১ সালে এসে খবর পেলেম, বাঙলা একাডেমি “ একাডেমি “ বানানে ই-কার সঙযুক্ত করতে সম্মত হয়েছেন । এখন লিখছেন “ একাডেমি “ । তাহলে এখানে একটা প্রস্ন এসেই যায় – এতকাল ধরে যে ঈ-কার দিয়ে লেখা হচ্ছিল “ একাডেমী “, তা কি ভুল ছিল ? না কি কর্তৃপক্ষ বানানটি জানতেন না ? তাই বা কি ভাবে সম্ভব ? একাডেমির শুরু থেকে যে সব নমস্য পন্ডিতবর্গ এর সাথে জড়িত ছিলেন, তাঁদের ভিতর আছেন – ড মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সৈয়দ আলী আহসান, ড নীলিমা ইব্রাহীম, ড মাযহারুল ইসলাম, ড আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ড আশরাফ সিদ্দিকী প্রমুখ । তাহলে ? ঈ-কারের বদলে ই-কার সঙযুক্ত করায় “ একাডেমি “ শব্দটির অর্থ বা উচ্চারনের খেত্রে কি কোন হেরফের হয়েছে ? ঈ-কার যুক্ত “ একাডেমী “ আর ই-কার যুক্ত “ একাডেমি “ তে কি পার্থক্য তা অন্তত আমার কাছে বোধগম্য নয় । অনেকে বলেছেন, এটা যুগোপযোগি বা আধুনিকায়ন করা হয়েছে । খুবই চমৎকার কথা । এই কথা অনুযায়ি ঈ-কার, তথা ঈ অক্ষরটি সেকেলে বা প্রাচিন । তাই যদি হয়, তবে সুধু একটি শব্দ থেকে ঈ বাদ দিলে’তো হবে না, বাঙলা ভাষা আধুনিকায়নে ঈ অক্ষরটি পুরোপুরি বাদ দেয়াই বাঞ্ছনিয় । অতএব, বাঙলা ভাষায় ঈ অক্ষরটির আর কোন দরকার আছে কি না, গুনিজনের কাছে আমি এই প্রস্নটি রেখে গেলাম ।


আর কতদিন ? আর কতদিন ই-কার আর ঈ-কারের এই গোঁজামিল সাধারন মানুষকে মুখ বুজে মেনে চলতে হবে ? পন্ডিতজনের হাতে কি এমন কোন দাওয়াই আছে যা দিয়ে এই সঙক্রামক ব্যাধির উপসম হয় ? না কি তাঁরা এই রোগের উপসম চান না ? উচ্চারনের ক্ষেত্রে অনেক দুরবর্তি স আর শ’কে দিয়ে যদি ছ’র কাজ চালানো যায়, তবে নিকটবর্তি ই’কে দিয়ে কেন ঈ’র কাজ চালানো যাবেনা ? মাত্র কয়েকটি শব্দের জন্য এই ঈ ‘কে পুষে রেখে বানান প্রয়োগে তালগোল পাকানোর চেয়ে ওটাকে ঝেড়ে ফেলে দেয়াই’তো উত্তম । এর ফলে বাঙলা ভাষা হবে অনেক গতিশিল, ঝামেলামুক্ত এবঙ ভুল হবার আশঙ্কামুক্ত । আমরা আমাদের ভাষা’কে সহজ সরল ও জটিলতামুক্ত দেখতে চাই । সমস্যা সুধু একটাই, আর তা হল এতদিনের অভ্যাসটাকে বদলানো । ফুটো কলসিতে পানি ভরার বৃথা চেষ্টা না করে ওই ফুটোটা বন্ধ করে দেয়াই কি মঙ্গলজনক নয় ? – ( চলবে- পরবর্তী অংশ আগামী মঙ্গলবার পাবেন ।। )





আবদুল হাকিম ।।
প্রবাসী লেখক ।।
বাল্টিমোর, আমেরিকা ।।
# জনাব আবদুল হাকিম হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।