# ধরলার চোখ জুড়ানো কাশফুলের সৌন্দর্য #
# ধরলার চোখ জুড়ানো কাশফুলের সৌন্দর্য #
মহসিন আলি মঞ্জু ।।
ধরলা নদী । আর সেই ধরলার পলি মাটি দিয়ে তৈরী ফুলবাড়ীর জনপদ।মোগলহাটের কাছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হতে বাংলাদেশের ফুলবাড়ীতে প্রবেশ করে চিলমারিতে ব্রহ্মপুএ্যের কাছে মিশেছে । ধরলা নদী এ অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার উৎস।
www. hellojanata.com
যুগের পরে যুগ ধরে ধরলার চরের চোখ জোড়ানো সবুজ ধানের ক্ষেত,সবজিক্ষেত,কলাবাগান,ঝাঁউবন,লাটাবন আর শরতের মন হারানো আকাশের উড়তে থাকা হালকা সাদা সাদা মেঘের নিচে দিগন্ত জুড়েই ছড়িয়ে থাকা সাদা কাশফুল এনে দেয় এক অদ্ভুত শান্তি ও মনে আনে প্রশান্তি।
সুজলা -সুফলা প্রাকৃতিক রুপ বৈচিএ্যের এ ভূমি হাতছানি দিচ্ছে মানুষকে।মাইলের পর মাইল দূষ্টি নন্দন ভূমির ধানক্ষেত অপরূপ মোহনীয় হয়ে ধরা পড়ে। চরের সারি সারি কলাগাছ,কাশবন,ঝাঁউবন,কাটাবন,মানুষের প্রাণ জুড়ায় না,অর্থনৌতিক স্বাচ্ছন্দ্যও এনে দেয়।সুজলা-সুফলা ফুলবাড়ী ধরলা নদীর অবদান।প্রাচিন কাল থেকেই এ অঞ্চলের উৎপাদিত ফসলের কদর ছিল দেশজুড়ে।
ধান,পাট,সরিষা,সুপারি,পান,পেঁপে,কুমড়া চলে যেতো সারাদেশে ও বিদেশে।উত্তর অঞ্চলের কিংবদন্তির চাঁদ সওদাগর তাঁর চৌদ্দ ডিঙ্গায় ভরে এ অঞ্চলের কৃষিপণ্য ধরলা নদী পথে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিয়ে যেতেন। বিনিময়ে বিদেশ থেকে নিয়ে আসতেন মূল্যবান পাথর ও সোনা রূপার বিভিন্ন অলংকার।চাঁদ সওদাগরের চৌদ্দ ডিংগার স্মৃতিচিহ্ন এখনও এ অঞ্চলের বিভিন্ন জনপদে দেখা যায়। ধরলার বইরালি, কর্তি, চিলকি,আইড়,বাঘাআইড়, বাইন, বোয়াল,প্রভৃতি মাছের সুনাম সারাদেশে।কুড়িগ্রামের বিখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পী কছিমউদ্দিন ধরলা নদীর মাছের প্রশংসা করে গেয়েছিলেন,
‘ধরলা নদীর ফলুয়া কর্তি তেলে ভাজা করেছে –জামাই এসেছে শশুর বাড়িতে’ ।
www. hellojanata.com
ধরলার সুস্বাদু মাছ দিয়ে জামাই আদর হলেও মাছ গুলো এখন নদী থেকে বিলুপ্তপ্রায়।
একসময় ধরলার চরে দাপিয়ে বেড়াত গরু মহিষের পাল।গৃহস্থদের পালে যতবেশি গরু -মহিষ থাকতো তার সামাজিক মর্যাদা তত বেশি হত। মহিষের পিঠে চড়ে দোতারা বাজিয়ে নিজের জীবনের সুখ-দুঃখ,প্রেম,ভালবাসা,নিয়ে মুখে মুখে ভাওয়াইয়া গান বাধত মহিশালরা।
এসব গানে এঅঞ্চলের মানুষের সুখ – দুঃখ,ভালোবাসা, সরল জীবন যাপন এবং খোলা মনের পরিচয় পাওয়া যায়।৩০-৪০বছর আগেও নদীর দুপাশের বাঁশঝাড়ে ,বনে -বাদারে,দেখা যেত ডাবকি,শল্লী,বক,শালীক,হাড়গিলা,চখা-চখি,কোড়া ইত্যাদি পাখি। প্রবীণ দের মুখে শোনা যায়।বিখ্যাত গায়ক আব্বাছ উদ্দীন ফুলবাড়ীতে এক অনুষ্টানে গান গাইতে আসার পথে, ধরলা নদীর পাড়ে, রাখাল বালকদের পুঁটি মাছ দিয়ে ফাঁদ পেতে বকপাখি শিকারের দৃশ্য দেখে,রাস্তায় গরুর গাড়িতে বসে গান লিখে, সুর করে,রাতের নির্ধারিত অনুষ্টানে গেয়েছিলেন– ফাঁন্দে পড়িয়া বগা কান্দে—–রে।
সেই গান আজ দেশের মানুষের মুখে-মুখে ফিরলেও ধরলার বকপাখি আজ বিলুপ্তির পথে।
ধরলার এসব অতীত ঐতিহ্য আজ শুধুই স্মৃতি ।পানি শুকিয়ে দিনে দিনে নদী মরে যাচ্ছে।ধরলার বুকে জেগে ওঠেছে অসংক্ষ্য চর।ফসলের ঢেউখেলানো সবুজ সমাহার আর শরতের কাশফুল।বিশাল পরিস্কার লীল আকাশ,সাদামেঘের নানা রকম ভাষ্কর্য, বাতাসে ঢেউ খেলানো জাদুতে অতুলনীয় হয়ে উঠে ধরলার সেই অতীত রুপ-লাবণ্যকে স্বরণ করলেও ধরলা আজ ধংসের পথে। ভারতে বাধের কারনে নাব্যতা হারিয়ে ধরলার বুকে অসংখ্য চর পরলেও সেখান ঝাঁউবন,কাটাবন ও কাশফুল হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে।বিশাল চরে রাখালের বাঁশির সুর আর শোনা যায় না।সারাদিন চলে চরের বুক চিরে কৃষকের খোঁড়া খুড়ি।
খাদ্যের প্রয়োজন শরতের কাশফুলের সৌন্দর্য্য আর মানূষের মনে দোলা দেয় না।অনেকে নদীও মেরে ফেলে খেতে চায়।তবুও শরতের এই অবিছেদ্দ সৌন্দর্য্য রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই।শুধু খাদ্য নয় সৌন্দর্য্য মানুষের মনকে সিগ্ধ এবং আলোকিত করে। ধরলার অবশিষ্ট সৌন্দর্য্য টুকু রক্ষা করার দায়িত্ব মানুষেরই।
মো:মহসিন আলী মনজু।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন