মেটাভার্স কি এবং কেন? রাফিউল ইসলাম ।।

 

মেটাভার্স কি এবং কেন?

রাফিউল ইসলাম ।।

ধরুন, আপনার হাতে আমি একটি জাদুর চশমা ধরিয়ে দিলাম আর পড়িয়ে দিলাম এক ম্যাজিক হেডফোন এবং বললাম এই চশমাটা চোখে দিয়ে হেডফোন টা কানে দিলেই আপনি একটি নতুন দুনিয়ায় প্রবেশ করবেন। সেই দুনিয়ায় আপনি চাইলেই আপনার মনের ইচ্ছা মত তৈরী করে নিতে পারবেন সবকিছু। যেমন ধরুন, আপনি প্রতিদিন আপনার বাসার জানালা দিয়ে পাশের বাড়ির মহিলার তার কাজের মেয়ের সাথে রুটি বানানো নিয়ে করা চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে আর ঘুম ভাংগাতে চান না। তাই আপনার ইচ্ছা হলো আপনি ঘুম থেকে উঠে দেখবেন আপনার বাড়ির পাশেই পাহাড় এবং সেই পাহাড়ে এসে এক সমুদ্র মিশে গেছে। তাই চশমাটা চোখে দিয়ে সেই ম্যাজিক দুনিয়ায় আপনি বানিয়ে নিলেন ঠিক এমনই একটি বাসা। সেটা এমনই এক জাদুর দুনিয়া যেখানে আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইল, ল্যাপটপ, কিংবা কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে দেখা ইউটিউব এর ভিডিও কে মঞ্চ নাটকের মতো চোখের সামনে প্রদর্শিত হতে দেখবেন। এই দুনিয়ায় ঢুকলে টিকিট না কেটেই সরাসরি স্টেডিয়ামে বসে দেখতে পারবেন ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ । মনে করেন, সেই দুনিয়ায় আপনি চাইলেই আপনার সামাজিক মাধ্যমের গ্রুপের সব বন্ধুকে চয়াটিং এর থ্রেড এর বদলে সামনা সামনি একই সাথে এক রুমের মধ্যে পাবেন এবং ইমোজির বদলে দেখবেন স্বয়ং তাদের ভাব ভঙ্গি এবং কান দিয়ে শুনতে পাবেন তাদের কথা। চাইলেই মনের মত করে সাজিয়ে নিতে পারবেন আড্ডা দেওয়ার জন্য কোন এক কফি হাউজ বা মাউন্ট এভারেস্টের উপর এক ব্রেকফাস্ট ক্লাব। সেই দুনিয়ায় আপনি চাইলেই ঘুরে আসতে পারবেন এক মুহূর্তে পৃথিবীর যেকোন কোথাও। শুধু তাই না, মহাকাশ ভ্রমণে গিয়ে বন্ধুদের সাথে বসে খেলতে পারবেন ফুটবল ম্যাচ। সেই দুনিয়ায় প্রেমিকাকে সত্যিই আকাশের চাঁদটা হাতে ধরে এনে দিতে পারবেন। অথবা মঙ্গল গ্রহের কোন এক অজানা স্থানে বসে নির্জনে করতে পারবেন প্রেমের আলাপ।

কি? বিশ্বাস হচ্ছে না কিছুই? না, এটা আলাদিন এর জাদুর প্রদীপ কুড়িয়ে পাওয়ার মতো কোনো গল্প নয়। এসব আকাশকুসুম জল্পনা-কল্পনা কে বাস্তবে ঘটিয়ে দেখানোর পরিকল্পনা নিয়েই ইতিমধ্যে হাজির হয়েছেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। গত ২৮ অক্টোবর ২০২১ ফেসবুক কোম্পানির নাম “মেটা” (Meta) তে পরিবর্তন করার ঠিক পরের দিনই এই আজব দুনিয়ার গল্প নিয়ে হাজির হলেন মিস্টার জাকারবার্গ। অসম্ভব কে সম্ভব করা এই দুনিয়ার নামই হচ্ছে মেটাভার্স (metaverse)।

মার্ক জাকারবার্গের বর্ণনামতে মেটাভার্স (metaverse) বানানোর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে একত্র করা এবং যোগাযোগের দূরত্ব কমানো। এককথায় এটা হচ্ছে দ্বিমাত্রিক ইন্টারনেটের ত্রিমাত্রিক এক আকার মাত্র। অন্যভাবে বলা যায় যে যেই সোশ্যাল মিডিয়া কে আমরা এতদিন ভার্চুয়াল জগত হিসেবে আখ্যায়িত করেছি, সেই দুনিয়াকে এখন অনুভব করার এবং উপস্থিত হয়ে স্বচক্ষে দেখার উদ্দেশ্যেই বানানো এই অগমেন্টেড রিয়েলিটি দুনিয়ার নাম ই হচ্ছে মেটাভার্স (metaverse)।


ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট বা গ্লাস সম্বন্ধে আমরা ইতিমধ্যেই পরিচিত। তেমনি কোন গ্লাস বা হেডসেট পড়ে প্রবেশ করতে হবে এই অগমেন্টেড রিয়েলিটির দুনিয়ায়। তারপর ধীরে ধীরে নিজের সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইল তৈরি করার মত তৈরি করতে হবে সেই দুনিয়াটি। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য প্রোফাইল পিকচার এর বদলে সেখানে থাকবে কার্টুনের মত নিজস্ব একটি এভাটার৷ যে এভাটার টি একটি ব্যক্তিকে গোটা মেটাভার্স (metaverse) দুনিয়ার সামনে ত্রিমাত্রিক ভাবে প্রদর্শন করবে। মজার ব্যাপার হল ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য একেক রকম এভাটার ব্যাবহার করা যাবে। যেমন অফিসের মিটিং এর কাজের জন্য ঠিক নিজের চেহারার মতো একটি এভাটার, বন্ধুমহলে আড্ডা দেওয়ার সময় শুধুই বন্ধুদের বোঝার মত কোন চেহারা কিংবা গেমস খেলার সময় কোনো কাল্পনিক আকৃতির স্বরূপ। ইন্টারনেটে ক্লিক করে এক পেইজে থেকে আরেক পেজে চলে যাওয়ার মত এই দুনিয়ায় নিমিষেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় টেলিপোর্ট এর মাধ্যমে চলে যাওয়া যাবে। এই দুনিয়ায় প্রবেশ করার পর প্রত্যেক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে বাস্তবে নিজের চোখের সামনে দেখার মতো করে দেখতে পারবে এবং তাদের কথা শুনতে পারবে ও ভাব ভঙ্গি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবে। এই অনুভব করানোর ব্যাপারটাই মেটাভার্স (metaverse) এর মুল উদ্দেশ্য। এভাবে যত বেশি মানুষ এই দুনিয়ায় প্রবেশ করতে থাকবে দুনিয়াটা ঠিক ততই বড় হতে থাকবে। বাস্তবজীবনে কাজের ফাকে মুহুর্তের জন্য এই দুনিয়ায় প্রবেশ করার ক্ষেত্রে মোবাইল ডিভাইস, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কিংবা অগমেন্টেড রিয়েলিটি হেডসেট থেকে শুরু করে যেকোনো কিছুই যে কোন সময় ব্যবহার করা যাবে। আবার বাস্তব দুনিয়ায় অনলাইনে শপিং করার মতো এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ঢুকেও কেনাকাটা করা যাবে। এভাবেই হয়তো একদিন মেটাভার্স (metaverse) এর মাধ্যমে এতদিন ধরে জমানো বিটকয়েনের মালিকরা অনেক ধনী হয়ে যাবে।

এরকম একটি কৃত্রিম জগত উদ্ভাবনের প্রভাব আমাদের বাস্তব জীবনে কিভাবে এসে পড়বে তা হয়ত বিতর্কের বিষয়। যেহেতু মেটাভার্স (metaverse) হচ্ছে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কে সশরিরে অনুভব করার একটি ত্রিমাত্রিক (3D) রুপ, তাই আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং জাতীয় জীবনে ইন্টারনেট এর প্রভাবেরই বড় কোন এক রূপ হয়ত আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এই মেটাভার্স (metaverse) এর আগমন এর মাধ্যমে। এতদিন যেখানে মানুষের সকল মনোযোগ ছিল মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে, সেই মনোযোগ এখন একটি নির্দিষ্ট ডিভাইস থেকে সরে গিয়ে চলে যাবে সেই ভার্চুয়াল দুনিয়া কে সরাসরি অনুভব করার দিকে। তার মানে এতটুকু নিশ্চিত ভাবে বলাই যায় যে এই মেটাভার্স (metaverse) এর প্রভাবে হয়ত মোবাইল স্ক্রীন এর তাকিয়ে রাস্তা পার হতে যেয়ে এক্সিডেন্ট এর কবলে পড়া স্মার্ট মানুষ জন এর সংখ্যা কমবে। কিন্তু ঘরের কোনে বন্দী হয়ে ভার্চুয়াল জগতের নেশায় রাত পার করা তরুন দের সংখ্যা ঠিক ই বাড়বে। এর প্রভাবে হয়ত আরো ছোট হয়ে আসবে বিশ্ব এবং খুলে যাবে এন্টারটেইমেন্ট এর নতুন দুয়ার, কিন্তু রক্তে মাংসে গড়া মানুষের আসল পরিচয় ভুলে গিয়ে তৈরি হতে পারে নিজ পরিবারের মাঝেও বিশাল দূরত্ব।

আগামী দশক এর ভিতরেই মেটাভার্স (metaverse) আসছে অসীম সম্ভাবনা আর অজানা এক অনিশ্চয়তা কে সামনে নিয়ে । এটা আসার কাজ ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। মেটাভার্স (metaverse) কে বাস্তবে পরিণত করার জন্য প্রায় সকল প্রযুক্তিই আমাদের মাঝে ইতিমধ্যে বিদ্যমান। এখন শুধু এসব প্রযুক্তিকে একসাথে জোড়া লাগিয়ে সামনে নিয়ে আসার অপেক্ষা। আমাদের পৃথিবী বর্তমানে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন। বিশ্বজুড়ে চলছে এক মহামারি, চলছে নানান দেশের মাঝে ধর্ম, জাত, ক্ষমতা ও শক্তি নিয়ে বিরোধ ও স্নায়ুযুদ্ধ। এমতাবস্থায় এই ম্যাজিক দুনিয়ার আবির্ভাব এর খবর তেমন কোনো আহামরি পরিবর্তন এর অঙ্গিকার নিয়ে আসেনি। অন্তত উপরে বর্ণিত কোনো সমস্যার সমাধান ই মেটাভার্স (metaverse) দিবে না।


গোটা বিশ্বের নেতারা যখন বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন এর গতি রোধ করে আগামীর ভবিষ্যত কে বেঁচে থাকার একটা সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে স্কটল্যান্ড এর গ্লাসগো তে এক হয়েছেন, ঠিক তখন ই মার্ক জাকারবার্গ মেটাভার্স (metaverse) এর প্রত্যাবর্তনের সংবাদ নিয়ে হাজির। নতুন এই ভার্চুয়্যাল জগতের আগমনের ভিড়ে আমরা যেন আমাদের সুন্দর এই ধরনীকে বাচিয়ে রাখার জন্য কাজ করতে সবাই মিলে এগিয়ে আসতে ভুলে না যাই সেটাই সবার কাছে কাম্য রইল।


রাফিউল ইসলাম ।।
লেখক ।।
# হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
# লেখাটি আমাদের ব্লগে প্রকাশিত ।।
আমাদের ব্লগ — সাবস্ক্রিব করুন ।। .
https://hellojanata350.blogspot.com/

Copy and paste to your browser .

## হ্যালো জনতা ডট কম ##
Follow us on—-
#Twitter–
# # @BinMostanjir
# inastagram —
# # 121kamalbd
# linkadin
# # https://www.linkedin.com/feed/
——————————

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।