কেন এমন ছন্দ পতন?? – রাফিউল ইসলাম ।।

 


## hellojanata.com Present’s ##

কেন এমন ছন্দ পতন?? –

রাফিউল ইসলাম ।।

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১। যদিও বাংলাদেশের জন্য এর হিসাবের খাতা আরো অনেকদিন আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত বাজে পারফরমেন্সের কারণে সমালোচনা, বিশ্লেষণ, কাটাছেঁড়া এবং কটু কথা কম হয়নি। সামাজিক মাধ্যমের দরুন এদেশে এখন সমালোচকের কোনো অভাব নেই। এদেশের কোটি কোটি মানুষ সবাই যেন এক একজন ক্রিকেট বিজ্ঞানী। অবশ্য মনে অনেক ব্যাথা আর দেশের প্রতি ভালবাসা ছিল বলেই এমন কথা গুলো সামনে এসেছে । কিন্তু কি জানেন, ২২ গজে একটা লেগ স্পিনার খুঁজে পাওয়া যায় না সারা বাংলাদেশ থেকে। কিংবা খুঁজে পাওয়া যায় না জস বাটলার, আসিফ আলি, জিমি নিশাম দের মত বলে কয়ে ছক্কা মারা ব্যাটারদের। যাই হোক, সেই আফসোসের কথা না হয় আরেকদিন বলবো। বিশ্বকাপের হতাশা ভুলে সবাই এখন পাকিস্তান সিরিজের দিকে মনোযোগী। পরিবেশ আপাতত একটু হলেও ঠান্ডা। এই ঠান্ডা কে আরও পরিণত রূপ দিতে বৃষ্টিছন্ন নভেম্বর এর গভীরে আমরা ৷ তাই এটাই মোক্ষম সময় শেষ বারের মত আরেকবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখার যে “কেন এমন হলো এবারের বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স?”


গোড়ায় গলদ:-

একটি টি২০ ম্যাচ এ যখন টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়ে একটি দল ১১.৩ ওভারের ভিতর মাত্র ৫৫ রান এর বিনিময়ে প্রতিপক্ষের ছয়টি উইকেট তুলে নেয় তখন ব্যাটিং করতে থাকা সেই দলটির পক্ষে বাজি ধরার জন্য মানুষ প্রায় পাওয়াই যাবে না। বোলিং এ এমনই দারুন পারফরম্যান্স দিয়েই এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করেছিল টাইগাররা। কিন্তু সেই প্রথম ১২ ওভারের পারফরম্যান্সের পর থেকেই যেন সবকিছু বাংলাদেশের বিপক্ষে যেতে থাকে এবারের বিশ্বকাপে। স্কটল্যান্ড এর বিপক্ষে সেই ম্যাচ সহ এরপর বাংলাদেশ আরো পাঁচটি ম্যাচে হেরেছে। স্মরণকালে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্স বোধহয় আর নেই। আর সেই সব কিছুই শুরু হয়েছিল স্কটল্যান্ড এর ম্যাচ দিয়ে। শুরুর সেই মানসিক ধাক্কা যেন টাইগাররা আর কাটিয়েই উঠতে পারেনি।

কথার যুদ্ধ:-

দেশের হয়ে যেসব ক্রিকেটাররা খেলেন তাদের সবথেকে বড় অভিভাবক হচ্ছে ক্রিকেট বোর্ড। আর সেই ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান যখন স্কটল্যান্ড এর কাছে হেরে যাওয়ার পর ব্যক্তিগতভাবে সিনিয়র ক্রিকেটারদের আক্রমণ করলেন তখন স্বাভাবিক ভাবেই যেন দলের মনবলে আরো আঘাত লাগল। এরপর পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই চলেছে এই কথার যুদ্ধ।



কখনো সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ক্রিকেটাররা, কখনো সামাজিক মাধ্যমে বা মিডিয়া কিংবা টক শোতে ক্রিকেট বোদ্ধা এবং সাবেক ক্রিকেটাররা থেকে শুরু করে সাকিব আল হাসানের স্ত্রী ও পর্যন্ত এই বিতর্কে সামিল হয়েছেন। যেই বিশ্বকাপের স্মৃতিতে থাকার কথা ছিল ভালো কিছু জয়, দুঃখজনকভাবে সেই বিশ্বকাপেরই স্মৃতি হয়ে থাকবে মাঠের হতাশা এবং বাইরের এসব তর্ক বিতর্ক।

যাচ্ছেতাই ক্যাচিং:-

ক্রিকেটের যেকোনো ফরমেটেই ফিল্ডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ছোট ম্যাচ হওয়াতে একটা রান আটকানো ও অনেক বড় ব্যাপার। অথচ বাংলাদেশ এই বিশ্বকাপে মোট ১১ টি ক্যাচ ফেলেছে। এর মধ্যে শ্রীলংকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ম্যাচে এমন মুহূর্তে ক্যাচগুলো মিস হয়েছে যখন বাংলাদেশ চালকের আসনে ছিল। যে কেউ যুক্তি দেখিয়ে বলতেই পারে যে শ্রীলংকার সাথে ওই ম্যাচ জিতে গেলে দলের মানসিকতা টা অনেক পজিটিভ থাকত। ক্রিকেটে একটা প্রবাদ সবাই জানে, “ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস”। এখন পাঠকের কাছে আমার প্রশ্ন, একটা ক্যাচ মিস হলে যদি ম্যাচ মিস করার সমান ধরা হয় তাহলে এগারোটা ক্যাচ মিস হওয়া কে আপনি কি বলবেন?

প্রশ্নবিদ্ধ ক্যাপ্টেন্সি:-

ক্যাপ্টেন হিসেবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে খুবই উচ্চমানের ধরা হয়। যার প্রমান মিলে তার অধিনায়কত্বে বিভিন্ন সময়ে বিপিএলে তার দলের অনেক কঠিন অবস্থা থেকে জয় লাভের ইতিহাস ঘাটলে।


কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কিছু সিদ্ধান্ত খুবই চোখে ধরার মত ছিল। সাকিব কিংবা মুস্তাফিজের ওভার বাকি থাকা সত্ত্বেও পরপর তিন ওভার পার্টটাইম স্পিনার দিয়ে বল করানো ছিল শ্রীলংকার সাথে ম্যাচ হারার অন্যতম কারণ। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে আবুধাবির সবুজ পিচে মাত্র দুই পেসার খেলানো ছিল খুবই ভুল একটি সিদ্ধান্ত। এসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কোচ এবং অধিনায়ক দুইজন একসাথে মিলে নেয়ার কথা। এরকম না হয়ে থাকলে সেটা অবশ্য অন্য আলোচনা। তবে হ্যা, বড় কোনো টুর্ণামেন্টে জাতীয় দলের হয়ে এটাই ছিল রিয়াদের প্রথম ক্যাপ্টেন্সি। তবে এই বিশ্বকাপ এ কোনো এক কারণে রিয়াদ কে আক্রমণাত্মক মেজাজে খুব ই দেখা গেছে। ঠিক মত এটাকিং বোলিং করলে স্কটল্যান্ড সেই ম্যাচ এ ১০০র ভিতর প্যাকেট হয়য়ে যাওয়ার কথা ছিল। এক ই ব্যাপার পাপুয়া নিউগিনির মত দল এর বিপক্ষেও দেখা গেছে। আক্রমণাত্মক মানসিকতা রাখা একটা টি টোয়েন্টি দল এর জন্য কতটা জরুরী তা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার খেলার ধরন চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন।

বায়ো-বাবল ফ্যাটিগ:-

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এবারের বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছে বায়ো-বাবল বা জৈব সুরক্ষিত পরিবেশে। এরকম একটি বাবলের ভেতরে থাকা যে কারও জন্যই অনেক বড় একটি মানসিক চাপের ব্যাপার। বেন স্টোকসের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এই মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে বিশ্বকাপে খেলেননি। বিশ্বের আরো অনেক বড় ক্রীড়া তারকাদের মধ্যেও এই মানসিক সুস্থতা-অসুস্থতা নিয়ে আলোচনায় আসার উদাহরণ দেখা গিয়েছে। তাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার পর টাইগাররা কেন আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি সেটার পিছনে এই জৈব সুরক্ষিত পরিবেশের ভূমিকা থাকতে পারে। আমরা হট ফেভারিট ভারতের পারফরমেন্সেও দেখেছি যে মাসখানেক ধরে আইপিএল এর কারণে বায়ো-বাবল এ থেকে বিশ্বকাপে আসার প্রভাব কেমন হয়েছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড রা বিশ্বকাপ এর ঠিক আগ দিয়ে কোনো সিরিজ খেলেনি। যেগুলো খেলেছিল সেগুলোতে দলের মুল খেলোয়াড় অনেকেই বিশ্রাম এ ছিল। তাই বাবল ফ্যাটিগ তাদেরকে তেমন একটা গ্রাস করেনি হয়ত।

আসলে সব কিছুর পরও আমাদের সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে নিয়ে মিথ্যা স্বপ্ন দেখেছি। বাস্তব অর্থে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খুব ভালো কোন দল নয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাংলাদেশ কোনদিন দ্বিতীয় পর্বে একটি ম্যাচও জেতেনি। ঘরের মাঠে মিরপুরের স্লো উইকেটে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় সারির দলের সাথে সিরিজ জিতে মনোবলকে চাঙ্গা করার প্রয়োজনীয়তা হয়ত ছিল। আর এতেই ভক্তদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। কিন্তু তাতে পালটে যায়নি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ ক্রিকেট এর আসল পরিচয়।

তাই সময় এসেছে দায় কার সেটা না খুজে আগে সব ঢেলে সাজানোর। বাংলাদেশে প্রায় দেড় যুগ ধরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটকে ওয়ানডের মতো করেই খেলে যাচ্ছে। তাই পরিবর্তন করতে হবে এই পন্থার এবং আনতে হবে সব পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিয়ে খেলার মনোভাব। বের করতে হবে ল্যাগ স্পিনার আর হার্ড হিটার। নয়ত আগামী বছর এর বিশ্বকাপের পরও এভাবেই হতাশ হয়ে ফিরতে হবে। আর ক্রিকেটারদের ও বুঝতে হবে যে সমালোচনা থামানো যাবেনা। ভালো পারফরম্যান্স এ যেমন বাহবা কুড়াতে কেউ মুখ লুকায় না, তেমনি সমালোচনাকেও ইতিবাচক মানসিকতায় গ্রহণ করতে হবে। মাঠের বাইরের আওয়াজ এ কান না দিয়ে জবাব দিতে হবে ব্যাট আর বল দিয়ে।

দেখা যাক পূর্ণ শক্তির পাকিস্তান এর বিরুদ্ধে কেমন হয় সেই জবাব।

রাফিউল ইসলাম ।।


মুক্তমনা লেখক ।।
হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক।।
হ্যালো জনতা ডট কম ।।
ফাইল ফটো-সংগ্রহ ।।
লেখটি আমাদের ব্লগে এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ।।
হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন-Subscribe our blog .
link—-
https://hellojanata350.blogspot.com/
# Copy and paste to your browser .
Follow us on —-
#Twitter–
## @BinMostanjir
# inastagram —
## 121kamalbd
# linkedin
## https://www.linkedin.com/feed/

## hellojanata.com ##

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।