উইন্টার ইজ কামিং# রাফিউল ইসলাম ।।

 উইন্টার ইজ কামিং#

রাফিউল ইসলাম ।।




শেষ রাতে ঘুম টা ভেংগে গেল। হঠাত মনে হলো ফ্যান টা যেন একটু বেশীই জোড়ে ঘুরছে। গায়ে কাঁথা নেই কেন তা ভেবে নিজেই অবাক হলাম। বাইরে ফজরের আযান শোনা যাচ্ছে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি দূরের জিনিস আবছা দেখা যায়। কুয়াশা? হুররে! শীত এসে গেছে!
শীতের আগমন বাংলাদেশের সব স্তরের মানুষের কাছ থেকে সমানভাবে স্বাগত হয় না। শীত যেমন কারো কারো জন্য বয়ে আনে আনন্দ, এক্সাইটমেন্ট, উত্তেজনার উৎস, অন্যদিকে কারো কারো জন্য নিয়ে আসে অনেক বিপত্তি, জটিলতা আর সমস্যার জোগান। তবু শীত আসে, শীত যায় আর রেখে যায় স্মৃতি।


ইংরেজি পঞ্জিকার এমন এক সময়ে শীত এর আগমন হয় যে শীত মানেই যেন পুরোনোর শেষ আর নতুন এর শুরু। ছোটবেলায় শীত এর স্মৃতির একটা বিশাল বড় অংশ জুড়ে থাকে ডিসেম্বর এর শেষে স্কুল এর নতুন ইউনিফর্ম আর সদ্য পাওয়া বই এর নতুন মলাট এর ঘ্রাণ। একটা স্কুল পড়ুয়া ছেলে/মেয়ের কাছে শীত মানেই সোয়েটার গায়ে চাপিয়ে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে যাওয়া। আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছে যে তার কাছে শীত মানেই নাকি ডিসেম্বর মাসে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল খারাপ করার কারণে বাবার কাছে মার খাওয়ার স্মৃতি। শীতের মাইর কত ভয়ংকর! যারা জানেনা তাদের কে জানাই সাধুবাদ।

আবার শীতকালে আমাদের দেশে বিয়ে করার হিড়িক পড়ে যায়। এই চার মাস বিয়ের মৌসুমে নানান বিয়ের দাওয়াত খেয়ে এবং সামাজিক মাধ্যমে সেগুলোর ছবি আপলোড দিয়ে দিয়ে খ্যাতি কুড়ায় অনেক তরুণ-তরুণী।
তবে শীতের সবথেকে বড় আকর্ষণ কি সেটা নিয়ে কিন্তু কোন বাঙালির মনেই দ্বিধা পাওয়া যাবে না। পাঠকরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কি বুঝাতে চাচ্ছি? শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে বা হঠাত নেমে আসা কনকনে সন্ধায় পিঠা খাওয়ার জন্যই হয়ত বিধাতা শীত এর সৃষ্টি করেছিলেন। বাঙালী হয়ে জন্মানোর সবচেয়ে বড় লাভগুলোর একটা হচ্ছে এই শীত এর পিঠা। শীত আসলেই যেন বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয়ে যায় পিঠা উৎসব। এইসব পিঠা বানাতে সবচেয়ে বড় ওস্তাদ হচ্ছেন আমাদের নানীমা আর দাদীমারা। শীতকালে তাই পিঠার আসল স্বাদ পেতে গ্রামে নিজ ভিটায় এ শহর ছেড়ে ছুটে যায় অনেক মানুষ। শেষ বিকেলে কিংবা সাত সকালে বাড়ির উঠোনে আগুন জ্বালিয়ে ওম নিতে নিতে নানুর হাতের বানানো মজার ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, খেজুরের রস বা গুড় দিয়া বানানো পিঠা কিংবা চিতই পিঠার জুড়ি নেই। শহরেও তখন শুরু হয়ে যায় পিঠা উৎসব আর পিঠার মেলা। এসব মেলায় যেন মানুষ এর চেয়ে পিঠার প্রকার ই বেশী। আবার গলির মোড়ে মোড়ে বসে বানাতে থাকা শীতকালের পিঠা খায়নি এমন ঢাকাবাসি হয়তো পাওয়া যাবে না।
যারা ঘোরাঘুরি করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য শীতকাল যেন “সেভেন্থ হেভেন”। দেশের সকল পাহাড়-পর্বত, হাওর, নদী-নালা সমুদ্র কিংবা বন যেন তখন শীত চাদরে মুড়ি দিয়ে ডাকতে থাকে পরযটোকদের এক অনন্য নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ এর জন্য যার আমেজ আর অন্য কোনো ঋতু তে পাওয়া যায় না।

কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না এই শীত ই যেন কাল হয়ে আসো এ দেশের লাখো মানুষ এর জন্য যারা দরিদ্রতার অভিশাপ গায়ে নিয়ে বেচে থাকে। স্বল্প আয়ের মানুষজন শীতের সময় কাপড়ের অভাবে অনেক কষ্ট করে। ঘরহীন মানুষ জন ঢাকার রাস্তায় থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে একে অন্যের গায়ে গা মুড়িয়ে ঘুমায়। তবু মারা যায় অনেকে। এদের মধ্যে বয়স্ক আর শিশুরা ঠান্ডায় অসুস্থ হয়। চিকিৎসার অভাবে জীবন নাশ হয় তাদের। পেটের দায়ে গ্রাম থেকে শহরে ছুটে আসা রিক্সাওয়ালা শীতের সকালে ঠিকই একটা শার্টের উপর পাতলা সোয়েটার চাপিয়ে বের হয়ে যায় রোজগারের উদ্দেশ্যে। আর সেই গরীব রিক্সাওয়ালার রিক্সায় উঠতে যেয়ে কোন এক বড়লোকের ছেলে মোটা এক জ্যাকেট গায়ে দিয়ে ঘুম থেকে উঠে ঢুলতে ঢুলতে ইউনিভার্সিটির ক্লাসে ঢোকার আগে ঝগড়া করে মাত্র পাচ টাকা দশ টাকা নিয়ে।
এভাবেই শীত আসে, শীত যায় আর রয়ে যায় শীত এর গল্প। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আসুন না এই শীতে আমরা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি অন্তত দুটো মানুষ কে সাহায্য করার যাতে আগামীর জন্য লেখা তাদের এবারের শীত এর গল্প টা আরেকটু সুন্দর হয়?

সবাই কে শীত এর অগ্রীম শুভেচ্ছা।

রাফিউল ইসলাম ।।
লেখক ।।
ঢাকা , বাংলাদেশ ।।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।