'সব পেয়েছির দেশে'- ৩৬- বাল্টিমোর থেকে আবদুল হাকিম।


 

'সব পেয়েছির দেশে'- ৩৬- 

 আবদুল হাকিম। 


গড়ানো বিকেল । বোটে উঠে পড়লাম আমরা ঝটপট । আমরা যাকে বলি স্পিড বোট । আটজনের বসার ব্যবস্থা । হাল ধরে সামনে দাড়ালেন সেজভাই ডাঃ হাফিজ । একটু এগিয়েই স্পিড বেড়ে গেল । সামনেটা হয়ে গেল একটু উচু । পিছনটা গেল দেবে । দু'পাশে জলের অদ্ভুত ফোয়ারা ছিটিয়ে এগিয়ে চললাম আমরা সামনে । এ এক দারুন অনুভুতি । এদিক ওদিক ছোট বড় আরো দু’একটা বোট ছুটে চলেছে । কেউ আবার মাঝখানে দাড়িয়ে মাছ ধরায় ব্যাস্ত । লোকালয় অনেক পিছনে ফেলে আমরা একেবারে সমুদ্রের কাছাকাছি চলে এলাম । কিন্তু না । আর না । আবার ঘুরে গেল আমাদের বোট । 

একটু ফিরে আসতেই আমরা ঢুকে গেলাম অন্য একটা দিকে । গা ছমছম করা নিথর নির্জন এলাকা । পাড় ঘেষা ঠাসবুননি সবুজ বনবনানি । কিচিরমিচির পাখির উড়ে বেড়ানো । হাসের পালের স্বাধিন বিচরন । ওদের জন্য দারুন এক অভয়ারন্য । সেজভাই আমাকে বললেন, ইচ্ছে করলে তুমিও কিছুক্ষন চালিয়ে দেখতে পারো । যার গাড়ির ড্রাইভার’স লাইসেন্স আছে সেই বোট চালানোর দাবিদার । আমি চান্সটা ছাড়লাম না । হাত বদল হল । ছোটখাটো একটা ট্রেনিঙও হল । তেমন একটা কঠিন মনে হল না । আশে পাশে তেমন কেউ নেই । সান্ত জলরাশিতে আমার হাতে আস্তে আস্তে এগিয়ে চললো বোট । দুর থেকে পাড়ঘেসা বাড়িগুলো দেখে মনে হয় শিল্পির তুলিতে আঁকা বড়সড় এক ক্যানভাস ।          

পরদিন সকাল সকাল বের হয়ে পড়লাম সমুদ্র দেখতে । সমুদ্রের এতো কাছে এসে সমুদ্র না দেখে ফেরা, তাই কি হয় । বেশ কিছু আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে, বড় একটা ব্রিজ পার হয়ে এলাম সমুদ্রের পাড়ে । গাড়ি পারকিঙে কয়েন সিস্টেম করা । সময় হিসেব করে বক্সে কোয়ার্টার ফেলতে হবে । ফেল কড়ি মাখো তেল । তা বেশ একটা বাজার বাজার ভাব । জমজমাট দোকানগুলোতে কেনাবেচার হিড়িক । কেউ কেউ আবার চড়কগাছে চড়ে মনের আনন্দে দোল খাচ্ছে । আমরা ওদিকে না গিয়ে সমুদ্রের পাড়ে চলে এলাম । কি দারুন । কি অদ্ভুত । প্রকান্ড এই জলরাশি । নিল জল আর নিলাকাশ মিলেমিশে একাকার । দুরে গভির সমুদ্রে দেখা যাচ্ছে ছোটবড় জাহাজ চলেছে ধির গতিতে । বিশাল বিশাল ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে পাড়ে । অনেকে আবার সেই ঢেউ’র উপর ভেসে ভেসে জল কেলিতে মত্ত । এখানে দাড়িয়ে নিজেকে সুধুই মনে হল, আমি সৃষ্টির এক ক্ষুদ্রতম অসহায় কিট ।  

যতদুর চোখ যায় সুধু নিল জল আর জল । আটলান্টিকের স্রোতধারা । কিন্তু ওপার’তো একটা আছে, যেখানে বিশাল ভুখন্ড আফ্রিকা । ওই ভুখন্ড থেকেই একদিন নিরস্ত্র সহজ সরল মানুষগুলোকে ধরে ধরে, পশুর মতো গলায় দড়ি বেধে, পায়ে শিকল দিয়ে, পিঠে চাবুক মেরে জাহাজে করে এপারে এনে ফেলা হয়েছিল । তারপর বানানো হয়েছিল দাস । সুত্রপাত হয়েছিল সেই ১৪৯২ সালে । স্পেনের রানি ইসাবেলার উৎসাহে নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস রওনা হলেন পাল তোলা জাহাজে চড়ে ভারতে পৌঁছানোর সহজ একটা পথ আবিস্কারে । তারপর এসে উঠলেন এই ভুখন্ডের একটি দ্বিপে । সেই যে শুরু হল । আর আজ সেই ভুখন্ডই বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । আহা, কত শিকড় ছেঁড়া অগনিত নিরিহ মানুষের মানবেতর জিবন, নৃশঙস হত্যাকান্ডের সাক্ষি হয়ে আছে ওই অতল নিল জলরাশি । কত মৃত, অর্ধমৃত নারনারির লাশ বিলিন হয়ে গেছে সমুদ্রের বিশাল মৎস্যকুলের গর্ভে, কেউ আর আজ তার খবর জানতেও চায় না । তাদেরই বঙশধররাই আজ এদেশে প্রতিষ্ঠিত । এরাও ভুলে গেছে তাদের পুর্বপুরুষদের সেই আত্মত্যাগের কথা । 

আমরা যেখানে দাড়িয়ে আছি, ঠিক তার ওপারেই দাড়িয়ে আছে মরোক্ক, মউরিতানিয়া, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া বা আলজেরিয়া । এদের একই বংশোদ্ভূত, একই জাতি, একই পরিবারের পরববর্তি প্রজন্ম ওপারে এখনো ঘুরে বেড়ায় । নৌকায় মাছ ধরে । তারা হয়তো ভুলেই গেছে তাদের আপনজন স্বপ্নরাজ্য আমেরিকার নাগরিক হয়ে আজ কত গর্বিত, যেখানে পৌঁছানো তাদের জন্য সুধুই আরেক স্বপ্ন । কিন্তু তারা হয়তো জানে না, এই আধুনিক যুগে এসেও, এই স্বপ্ন রাজ্যের নাগরিক হয়েও সুধু বর্নের কারনে প্রতিনিয়ত তারা হয়ে চলেছে অপমানিত । সহ্য করতে হচ্ছে বঞ্চনা । বর্নের কারনে অত্যাচারিত হয়ে জিবনও দিতে হচ্ছে । আবার এপারের এরা কেউ কেউ হয়তো আজও তাদের আপনজনদের কথা ভেবে ওপারের দিকে তাকিয়ে দির্ঘশ্বাস ফেলে । কিন্তু এই বিরাট জলরাশির ওপারে তাকিয়ে তারা কিছুই দেখতে পায় না । সুধু তাকিয়েই থাকে । মানুষের দৃষ্টির একটা সিমাবদ্ধতা আছে । তার বাইরের সবকিছু তার দৃষ্টির বাইরে । তেমনি ভাবে মানুষের ভাবনা, অনুভুতি, কল্পনারও একটা সিমাবদ্ধতা আছে । সেই সিমা অতিক্রম করার ক্ষমতা মানুষকে দেয়া হয় নি । - ( চলবে )         






আবদুল হাকিম ।।

প্রবাসী লেখক ।।
বাল্টিমোর, ইউ এস এ ।।
লেখক হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
হ্যালো জনতা ডট কম।।
hellojanata. com .

হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
https://hellojanata350.blogspot.com/
# Copy and paste to your browser .
আমাদের ব্লগ —-Subscribe our blog .
https://hellojanata350.blogspot.com/
Copy and paste to your browser .
Follow us on —-
# facebook –
@ https://www.facebook.com/hellojanata/
#Twitter–
@ @BinMostanjir
# inastagram —
@ 121kamalbd
# linkedin
@ https://www.linkedin.com/feed/

## hellojanata.com ##

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।