‘ জীবনের ফ্রীজশট ‘— মুসা কামাল।।

 



‘ জীবনের ফ্রীজ শট ‘— মুসা কামাল।।


” জীবনের ফ্রীজশট। “

মুসা কামাল।।
২৬ নভেম্বর ২০২১ ।।
আজ চলে গেল একটি দিন।২৬ নবেম্বর। দিন হিসাবে জাতক হয় ধনু রাশির জাতক। স্মৃতি রোমন্থন যার নেশা ! পেছনে ফিরে চাইতেই হয় — ছোট্ট বেলায় উত্তর বঙ্গের ছোট্ট মহকুমা শহর কুড়িগ্রামে ছিলাম। ছোট্ট বেলার কথা মনে হলে চোখের পাতায় ভেসে আসে বন্ধু বান্ধব আর সেই সমসাময়িকদের কথা। ছোট বেলার দুরন্তপনা আর সব মিলিয়ে স্মৃতিময় সেই অতীত। হারিয়ে যায় না কখনোই!ধরে রাখতেই হয় ।
ছোট বেলার সেই সময়ের মাঝে বেশি করেই মনে পড়ে একাত্তুরের কথা।
পাকিস্তান সেনারা আসছে রংপুর থেকে,আমরা আগেভাগেই পালাচ্ছি শহর ছেড়ে- মহকুমা( কুড়িগ্রাম) শহরের রাস্তার টিমটিমে বাতি গুলো সে সময় জীবন থেকে কোথায় হারালো কে জানে?পালিয়ে এসেছি অন্ধকার, আলোহীন এক জগতে-আশ্রয় নিয়েছি , যেখানে সন্ধ্যা নামতেই মনে হয় রাত গভীর — সেই ধরলা পাড়ের ছোট গ্রাম হলোখানায় ! প্রানভয়ে উর্ধশ্বাস সেই দৌড়! নয়ার হাট,কাঠালবাড়ী,রাজারহাট,দূর্গাপুর,উলিপুর-গাইবান্ধা,রংপুর —- পালাও, পালাও — ওই খানসেনা / রাজাকার আসলো ধেয়ে—— আজো মনে পড়ে সেই সমস্ত দিনের কথা!
একাত্তুরে আমি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারি নি।করি নি যুদ্ধ!দেশের জন্য। স্বাধীনতার জন্য!
আজো মনের ভেতর সেই দুঃখ বোধের প্রচন্ডতা রয়েছে।রয়ে গেছে সেই সময়ের প্রতিবাদি সাহস। এখনো সময় আর সুযোগ পেলেই হয়ে উঠি প্রতিবাদী। মতামতের তোয়াক্কা করি না। একান্ত লজিক না থাকলে মানি না কোন বাধাই!
বয়স তখন ১১ বৎসর সবে ! সে কারনেই সে সময় যুদ্ধে যাই নি বলে, সেই বুকের সৎ সাহস সারাটা হৃদয় জুড়েই আছ আজো। ব্যয় করতে পারি নি যে সেটি !
দেশ যখন স্বাধীন হয় ( ১৫/১৬ ডিসেম্বর-৭১) সে সময় রংপুর শহরে ছিলাম।দেখেছিলাম মুক্তিবাহিনী আর ভারতীয় সেনাদের সদম্ভ পদচারনা- নাম ছিল যৌথ বাহিনী।সারা রাত মুক্তি বাহিনির উল্লাস আর ফুটতে থাকা গুলির শব্দে শিহরিত।
কান পেতে রই। সকালের আলোর প্রত্যাশা- কখন সকাল হবে! শহরে আগুয়ান আমাদের বীর দের দেখতে হবে যে!
হা,ওরা আসছিল তো আসছিলই। দলে দলে , হাজারে হাজারে- আর তাঁদের পদভারে প্রকম্পিত শহর !
ফুলে ফুলে আর “জয় বাংলা ” শ্লোগানে মুখরিত বাংলাদেশ- রংপুর।
শীতের সেই সময়ে বাগানের ফুল গুলো হলো শেষ!
“এটি কিন্তু এই জীবনের ফ্রিজ শট” ।
চোখের পাতায় সেই শট ভাসে জীবনভর। তারপর? তারপর এগিয়ে চলে সময়!
যৌবনে প্রিয় হয়ে উঠলেন – সমরেশ মজুমদারের কালবেলার ” মাধবীলতা”!পরে অর্ক কে ভালো লেগেছিল বেশ ! তবুও মাধবীলতা যেন মাধবীলতা’ই !
আর সেই যৌবনের মাধবীলতারা কিন্তু রইলেন অন্তর জুড়েই ।
আজো আছে সারাটা অন্তর জুড়েই। ইউটিউব ‘কালবেলা’ ছবিটি আজও আমার অবসরের সঙ্গি !
সে সময়ের মাধবীলতাদের আজো হারাই নি আমি! ওরা রইলেন যে যার জীবনে । তবুও কালে ভদ্রে হাই হ্যালো হারালো না একটুকুও । মাঝে কর্ম ব্যস্ততার কারনে দুরে চলে গিয়েছিল যাঁরা তাদের ১৭ সালের দিকে আবারো কুড়িগ্রাম,উলিপুর, রাজশাহী গিয়ে, বলতে পারেন ফিরিয়ে এনেছি জীবনে প্রায় সব হারানো বিঙাপন।বিশ্ববিদ্যালয়ের( রাজশাহী)বন্ধু রাও পাশে।হা,পাশে নিয়ে চলছি তাদের।নিয়ে এসেছি পাশ্বে।
চলছি জীবন আগলে ধরেই।
জীবনের সেই পথেই দেখা ” গড ফাদার” এর। আমি প্রভাবিত হই।দেশ যখন স্বাধীন হয় তখন মুক্তি পেয়েছিল “গড ফাদার”। আমার হাতে এল ৮০ দশকে।
এখনো এই বিশএকুশে প্রিয় ডন কর্লিয়নি! সাথে মাইকেল কর্লিয়নি আর মিসেস কে !
আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেন গড ফাদার প্রিয় ডন কর্লিয়নি! মরতে মরতে যিনি বলেছিলেন – আহা পৃথিবীটা কত সুন্দর !
এখনো চোখে ভাসে
মাইকেলের পেছনে পেছনে হাটতে থাকা ইতালীয় লুপারা বন্দুক হাতে ফ্যাব্রিসিও আর সেই সাথে চলতে থাকা তার বেইমানী। পেয়েছিল সেই ফ্যাব্রিসিও তার বেইমানির উপহার! পেয়েছিল সে তাও ক’বৎসর পরে—–
নিউইর্য়কে —মাইকেল কর্লিয়নি শুভেচ্ছা মাখানো মৃত্যুদন্ড। নিউ ইর্য়কে ৯০/ ৯২ সালে হেটেছি আর ভেবেছি কোথায় সেই বেইমানদের মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন — আমার হিরো ডন মাইকেল কর্লিয়নি!
বেইমানের কখনো মাফ দেয় না সময়,ইতিহাস আর প্রকৃতি!
একাত্তুরে দেখা রাজাকারদের আর আশির দশকের ইতিহাস( গল্প/ সিনেমা)ফ্যাব্রিসিও দের শাস্তি যে আমার কাছে একই থেকে গেল!
তাই আজো মনে ভেসে চলে সেই কথা ‘বেইমানের কোন মাফ নেই। এই নাও মাইকেল কর্লিয়নির শুভেচ্ছা ।’
বিশ শতকের শুরুতেই আমি জড়িয়ে গেলাম এলাকার রাজনীতিতে । ঢাকার এক ডন এর সাথে পরিচিতির সুত্রেই ভাবনাটার জন্ম ।
এলাকায় আস্তে আস্তে ডন সেজে গেলাম । মাথায় কি তখন গড ফাদারের প্রভাব ? মনে হয় তাই ! অন্তত মাইকেল কর্লিয়নির মতোই চারিদিক গুছিয়ে নেবার ক্ষমতাটা রপ্ত করতে চাইলাম ।
জুটেও গেল সব । সবকিছুই আমার হাতের কাছেই । মাটির নিচের কালো প্রভাব ( আন্ডার গ্রাউন্ড) কে প্রভাবিত করেও ফেললাম । সমীহ,মাঠের সালাম সেতো আমার পায়ের কাছেই, হাতের মুঠোয় । এগিয়ে চললাম দ্রুত । দিল্লী দুরস্ত নয় !ক্ষমতার রাজনীতি চাই । ক্ষমতার মসনদে যাবার পথ সামনেই । এগুতে থাকলাম ।
কিন্তু হয় নি কিছুই । ঢাকার পরিচিত ডন সাহেবকে দেখতাম কাছাকাছি থেকেই ।
মানুষের বেশ কিছু গুনাবলির অভাব এখানে ! অসততা বেশুমার । শিক্ষার অভাব নিয়েও প্রশ্ন আমার মনে ! থমকে গেলাম ! হোঁচট খেলাম !
থামতে থামতে আমি এক সময় থেমেই গেলাম ।
এভাবে রাজনীতি ঠিক নয় । মানুষের কথা বলতে গেলে মানুষ কে মানুষ হিসাবেই ভালবাসতে হবে ।
যে রাজনীতির গুণগান গাইবো আমি,সেখানে যে গুনের কিছুই নাই । মানুষের আর জীবনের জয়গানের কোন সুত্রই পেলাম না ।
রাজনীতিটা হারিয়ে গেল । পেছনে পরে রইল আমারই সুচতুর হাতে গড়া বিশাল এক জনপদ ।
মানুষের বিশ্বাস অর্জন খুব এক কঠিন কাজ । অথচ অর্জন করতে পারলে সেটি টিকেই থাকে ।
এখনো রাত বিরাতে তাদের ফোন পাই । মাঠে আর ফিরে যাব না জানাই । কানে বাজে হতাশার সুর ।
আমি বুঝেছি যে রাজনীতি করে মানুষ কে কিছুই দিতে পারব না, সেটি টানবো না । সেই রাজনীতি আর টানবো কেন ?
অসততা ,মিথ্যার বেসাতি, হিপক্রেসি , ডূপ্লিমেসি — এগুলো শিখতে যে শিক্ষার প্রয়োজন , সেটি তো আমার শেখা হয় নাই !
কাজেই পারি নি । সরে এসেছি সেই পথ থেকে ।
এদিকে ক্রমাগত এগিয়ে আসছে করোনা কাল ।
আর তা এসেও গেল । প্রথম থেকেই রাত জেগে জেগে চীনের ইউহানের করোনা ব্রেক আউট ফলো করে সাবধান করতে শুরু করলাম ।
এখন ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ – বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে সাবধানতার কথা প্রচার করতে শুরু করেছি , সেই সাথে ক্রমাগতই ঘরের ভেতর ধুঁকছি ।
শুধু আমিই ঘরের ভেতর প্রবেশ করলাম না, ঢুকলেন সবাই,সারা জগত,সারা বিশ্ব ।
ঘরেই বসে থাকি । নেট ঘাটাঘাটি করি । মাথায় ছিল অন লাইন নিউজ পোর্টাল তৈরির ভাবনা ।
ভাবনার দিগন্ত প্রসারিত হল । বানিয়ে ফেললাম — হ্যালো জনতা ডট কম – বাঙলা অন লাইন নিউজ পোর্টাল ।
এবার কবি রবিউল হক রৌদ্র  আমার সাথে, আমার পাশে  ।
মোটামুটি নির্ধারিত – আমরা নেগেটিভ বিষয় গুলোকে এড়িয়ে যাব , প্রশ্রয় দেব না ।
যেই ভাবা সেই কাজ , আমরা খুন, জখম, ধর্ষণ , লুট তরাজ, রাজনীতির বিষাক্ত হাওয়া লিখবো না ।
আমরা শুদ্ধ আর অকৃত্রিম লেখাতেই ভরসা করতে চাইলাম ।কিন্তু শুধু চাইলেই তো হবে না ! লেখা কই ? কে লিখবে ?
লেখার শুরুর দিকে বলেছি বন্ধু বান্ধবদের হাতছাড়া করি নি । তাদের বেঁধে রেখেছিলাম আঁচলে ।
যোগাযোগ শুরু করলাম প্রবাসী বৈমানিক রেহমান রুদ্র( বৈমানিকের পাণ্ডুলিপি ),কানাডা প্রবাসী নন্দিনী সাবরিনা খান ( প্রবাস থেকে),কুষ্টিয়ার জাহিদ ইকবাল রবিন,  ক্যালিফোর্নিয়ার বনলতা বোস মোনা( জীবন থেকে নেয়া) , কুড়িগ্রামের আকরাম উদ্দিন আহমেদ( প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় ) ,কলকাতার রবি রায়(সংবাদ) , চট্টগ্রামের মনসুরুল আজম ( ব্যুরো চিফ-চট্টগ্রাম ) , বাগের হাটের রবি ডাকুয়া ( বিশেষত সুন্দরবনের সংবাদ), কুড়িগ্রামের সফিকুল ইসলাম রুকু, কুড়িগ্রামের বুলবুল ইসলাম আর প্রয়াত প্রিয় বন্ধু মঈন এগিয়ে দিল মেরিল্যান্ডের আব্দুল হাকিম কে ( বাঙলা বানানে ভাইরাস এবং সব পেয়েছির দেশে)। আমি কি অনেকের মনে লেখালেখি নেশা ধরিয়ে দিলাম?মনে হয় তাই ।
এগিয়ে এলেন অনেকেই । স্বল্প পরিসরে হয়তবা বাদ পরে গেলেন অনেকেই । ক্ষমা চেয়ে নিলাম । তবে অনেকেই নিয়মিত লেখক ছিলেন না , এবার এখানে তাঁরা নিয়মিত হয়েছেন । ভাবতে ভাল লাগে !
এগিয়ে চলছে ‘হ্যালো জনতা ডট কম ‘।
আজ সকালে উঠেই মেসেঞ্জারে মেসেজ – মেয়ে পৃথা লন্ডন থেকে ম্যাসেজ করেছে ।
আমেরিকা থেকে বন্ধু বাদল রেজা ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে ।
খুব ভাল লাগলো ।
জীবনের’ফ্রিজ সর্ট ‘ গুলো ভাবতে বসে গেলাম ।
আপনাদের জানালাম । অনেককেই মনে পরেছে আজ সারা দিন ।
নিজে নিজেই ভাবলাম আরে আমি তো ভুলেই বসেছিলাম ——-
পলাশির প্রান্তরে বাঙলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার ২০০ বৎসর পরে আজকের দিনে আমার জন্ম হয়েছিল ।
হা,আজ আমার জন্মদিন। ২৬ নভেম্বর, (২৬/১১/১৯৫৭) ।।
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা ।।


মুসা কামাল ।।

সম্পাদক ।।

হ্যালো জনতা ডট কম ।। 

——————
## ~~~~~~~ ভুলতে না পারার গল্প ~~~~~~~
## লক্ষ্য রাখুন – কেমন ছিল আজকের এই দিনটি ( ১৬ই ডিসেম্বর )আমাদের সেই মহান একাত্তুরে– প্রকাশিত হবে ১৬ই ডিসেম্বর সকালে।। ##



—————–

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।