বাঙলা বানানে ভাইরাস-১৩- আবদুল হাকিম ।।

 



বাঙলা বানানে ভাইরাস-১২- 

আবদুল হাকিম ।।

বাঙলা বানানে ভাইরাস।।

আবদুল হাকিম।।
১৩-
প্রথম লেখা – ২০০৩
সঙস্করন – ২০২১

আমার দৃষ্টি পড়লো মোট পাচটি অক্ষরের উপর । এগুলো হচ্ছে ঈ ঊ ণ ং শ । এই অক্ষরগুলো ব্যবহার করতে গিয়েই যত বিপত্তি । তা আমি এখন কি করব ? একবার মনে হলো অভিধান মানাইতো উচিত । কারন, অশুদ্ধ বানান কারো জন্যই কাম্য নয় । আবার অভিধান মানতে গিয়ে মনে হলো সময়ের স্রোতের কাছে পিছিয়ে পড়তে হবে । কারন, অভিধান তার নিজের সিদ্ধান্তে অটল । স্রোতের তোয়াক্কা সে করেনা । তার বড়সড় কলেবরটির বাইরে কি হচ্ছে, কি ঘটে চলেছে, তা সে দেখতে চায় না । সে অন্ধ । মনে হলো, বাঙলা ভাষা ধির গতিতে হলেও, নিরবে, অজান্তে আধুনিকায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে । যারা বিভিন্ন রকম বানান লিখছেন, তাদের ভিতর রয়েছেন গুনিজন । আবার রয়েছে দেশের নামকরা সব পত্র পত্রিকা । তবে অনেক খেত্রে অজ্ঞতাবসত বা ছাপার ভুলও হয়ে যায় । তবে যেভাবেই হোক, কাজ কিনতু থেমে নেই । চলছেই । কেউ বানান নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাচ্ছেন না । এমন একটা ভাব, বানানে কি এসে যায়, কাজ চললেই হলো ।

আমার কাছে মনে হলো, প্রতিটি বাঙালির ভাষাই বাঙলা । সবাই বাঙলায় কথা বলে । শোনে । লেখে । পড়ে । নিরক্ষর লোকের কথা না হয় বাদই দিলাম । শিক্ষিত সমাজের কথা ভেবেই কথা বলা যাক । বানান সমস্যা সুধু মাত্র লেখা বা পড়ার খেত্রেই ধরা পড়ছে । তাও আবার লিখতে গিয়ে যতটা, পড়তে গিয়ে ততটা না । এই ভুল ধরা পড়ছে কাদের কাছে ? যারা বানান সম্পর্কে সচেতন । গুনিজন । পন্ডিত । তারাই ভুলটা ধরতে পারছেন । আমাদের মতন সাধারন মানুষ বানান ভুল নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাচ্ছে না । কারন, কোন কোন খেত্রে বাঙলা বানান আমাদের জন্য এক মহা সঙ্কট বয়ে আনে । তাই বিষয়টাকে পাস কাটিয়ে চলতেই আমরা পছন্দ করি । তা হোকনা অজ্ঞতাবসত বা উদাসিনতা । দেশের প্রতিটি মানুষই সুশিক্ষিত হবে বা সবাইকে বানান সচেতন হতে হবে, তা কি আশা করা যায় ? তাই বলে তাদের কাজও কিনতু থেমে নেই । তাদেরও কিছু না কিছু লেখা পড়ার কাজ’তো করতে হয় । তাই ভাষা চলছে লাগামহিন ।

আগেই বলেছি নিরক্ষর লোকের কথা বাদ রাখছি । কারন, বানান সমস্যা সুধুমাত্র শিক্ষিতদের জন্যে । তা সঙখ্যায় কারা বেশি ? অর্থাৎ, বাঙলা ভাষা লেখা পড়ায় ব্যবহার করছি এমন মানুষদের মধ্যে কাদের সঙখ্যা কত ? আলোচনার সুবিধার জন্যে সাদামাটা ভাবে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি । ১) পন্ডিত বা গুনিজন ২) সাধারন সিক্ষিত ৩) অল্প সিক্ষিত । চুলচেরা পরিসঙখ্যানে না গিয়ে মোটামুটি ভাবে বলা যায়, পন্ডিত বা গুনিজন অত্যন্ত সচেতন ভাবে ভাষার চর্চা করে থাকেন । তারা চান সবাই বানানের প্রতি সচেতন থাকুন । তাদের এই চাওয়া অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত । কিনতু তাদের থেকে সঙখ্যায় বেসি সাধারন শিক্ষিত মানুষ, যারা অফিস-আদালত, ব্যবসা-বানিজ্যে বা অন্যান্য খেত্রে বাঙলা ভাষা লেখা পড়ায় ব্যবহার করে থাকেন । এখন প্রস্ন হলো, এই সাধারন শিক্ষিত সমাজ কি শুদ্ধভাবে বানান চর্চা করছেন ? করতে পারছেন ? যদি বলি, না । তাহলে কেন ? কেন পারছেন না ? সবাইকে উচ্চশিক্ষিত বা বাঙলা ভাষায় পন্ডিত হতে আসুবিধা কোথায় ? হলেই তো পারেন । সবাই ব্যাকরন বিশেষজ্ঞ হলেই’তো ল্যাঠা চুকে যায় ।



” —— অধীনের বিনীত নিবেদন এই যে, বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে ——— ” ছুটির আবেদনের এই ছক বাধা গদ আমাদের অনেকের কাছেই পরিচিত । এই গদ লিখতে গিয়ে ই-কার ঈ-কারে অনেকেই তালগোল পাকিয়ে ফেলেন । অফিসের বড়কর্তা অনেক সময় লাল কালি দিয়ে সঙসোধন করে দেন । আর উনি নিজেও যদি তালগোল পাকানোর দলে হয়ে থাকেন, তবে ওদিকে না তাকিয়ে ঝটপট লিখে দেবেন – মঞ্জুর করা হইল । স্বাক্ষর । এই বানান ভুলের কারনে ছুটি মঞ্জুর হয়নি, এমনটি বোধ হয় শোনা যায়নি । ই-কার আর ঈ-কার অথবা স আর শ সঠিক ভাবে প্রয়োগ না হবার কারনে যদি অর্থ পাল্টে যায়, অথবা মানে বোঝা না যায় তাহলে’তো ছুটি মঞ্জুর হবার কথা না । কারন বড় কর্তার’তো আবেদন পত্রের অর্থ বোঝার কথা না । তাহলে ? তাহলে কাজ কিনতু হয়েই গেল । যিনি শুদ্ধ লিখলেন তার ছুটি যেমন মঞ্জুর হল, যিনি অশুদ্ধ লিখলেন তারটাও । শুদ্ধ আর অশুদ্ধ কিনতু চলতে থাকলো সমান্তরাল । এবঙ চলতেও থাকবে । যা আমাদের মাতৃভাষার জন্য এক লজ্জাজনক অধ্যায় ।


সব শিক্ষকরা কি সব খেত্রে নির্ভুল বানান সব ছাত্রছাত্রিদের শেখাতে পেরেছেন ? তারা কি পরিক্ষার খাতায় নির্ভুল ভাবে বাঙলা লিখতে পেরেছে ? তবুও ওরা পাস করেছে । স্কুল কলেজের গন্ডি পেরিয়ে এলেও এই সমস্যা কিন্তু সাথে করে এনেই ওরা অফিস আদালতের বড়বড় চেয়ারগুলোতে বসেছে । কাজও ঠিকঠিক চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ।

সাধারন শিক্ষিত সমাজই যেখানে বাঙলা বানানে হিমসিম খাচ্ছেন প্রতিনিয়ত, সেখানে অল্প শিক্ষিতদের কথা আলোচনা করা সুধু সময়খেপন ছাড়া আর কিছুই না । তারা তাদের মতো করে ঠিকই ভাষা প্রয়োগ করে যাবে । নবদম্পতি তাদের রঙিন প্রেমপত্র ঠিকই বিনিময় করে যাবে । প্রেমিক তার প্রেমিকার কাছে লেখা চিঠিতে তার হৃদয় নিঙড়ানো ভালবাসার কথা উজাড় করে প্রকাস করে যাবে । তাদের বাঙলা বানান আমাদের অনেকের জন্য হাসির খোরাক হলেও, তাদের প্রেম ভালবাসা কিন্তু ওই অশুদ্ধ বানানের কারনে একটুও ব্যহত হবেনা । বানান তাদের প্রেমের পথে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবেনা । – ( চলবে )

strong>————————————————-
আমাদের লেখকদের লেখা সম্পর্কিত একটি দৃষ্টি আকর্ষণ —
আমাদের সকল লেখকের সকল লেখাই আমাদের ব্লগে স্থানান্তর করা হচ্ছে ।
কাজটি সময়সাপেক্ষ,এবং ধীর গতি সম্পন্ন ।তবুও হচ্ছে ।।
যদি কোন পাঠক আমাদের ওয়েব পেজে আমাদের লেখকদের অকৃত্রিম লেখা গুলো না পান তবে আমাদের ব্লগে দেখুন ।
ব্লগের লিঙ্ক — https://hellojanata350.blogspot.com/
(**) সাবস্ক্রিপ্সনের লিঙ্ক — https://hellojanata350.blogspot.com/?fbclid=IwAR32Rks0qx2jMX6Eg6en-p9FcDs2M4BHe06GU9D7I3Mf3RirE83Grgv-4WM
কপি এবং পেস্ট —
উপরের (**)সাবস্ক্রিপ্সন পেজে তিন টি ডটে ক্লিক দিয়ে আপনিও আমাদের ব্লগ অনুসরন করতে পারেন,দয়া করে আমাদের প্রচেষ্টায় ও প্রয়োজনে সহযোগিতা করুন । ।
হ্যালো জনতা ডট কম।।

———————————————————-

আবদুল হাকিম।।
# প্রবাসী লেখক।।
বাল্টিমোর, ইউ এস এ ।।
হ্যালো জনতা ডট কম।।
hellojanata. com . 

হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
https://hellojanata350.blogspot.com/
# Copy and paste to your browser .
আমাদের ব্লগ —-Subscribe our blog .
https://hellojanata350.blogspot.com/



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।