এক্সক্লুসিভ *বৈমানিকের পান্ডুলিপি * ৮ * কাযাকিস্তানের পথেঘাটে * রেহমান রুদ্র।।

 


এক্সক্লুসিভ *বৈমানিকের পান্ডুলিপি * ৮ * 

*কাযাকিস্তানের পথেঘাটে * 

* রেহমান রুদ্র।।

আকাশে উড়ে চলেছে যন্ত্রদানব। নানাধরনের বিমান আকাশ বিচরন করছে পাখির মত। মানুষের চিন্তা চেতনায় উড়বার স্বাধ ছিল দীর্ঘদিনের। শুধুমাত্র বোইং ২০২০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর কোম্পানির কোয়ার্টারলি এসেট বলেছে একশত বাআন্ন বিলিয়ন ডলারের অধিক। এভিয়েশনের সাথে আজ জড়িয়ে আছে হাজারো রকমের প্রডাক্ট ও পেশা। দিনদিন উন্নত হচ্ছে সহজ ভ্রমনের আনুসাঙ্গিক সব কর্মকাণ্ড।
আজকের যাত্রাপথের শেষ অধ্যায়ে। কিরগিস্তানের রাজধানী বিশকেক মাত্র পেরিয়ে এলাম। আলমাটি কন্ট্রোলকে যোগাযোগ করতেই নির্দেশ দিল বর্ডার লাইন ক্রস করে অবতরন শুরু করতে। সমুদ্রপৃষ্ট হতে ২২৩৮ ফুট উচ্চতায় আলমাটি এয়ারপোর্ট। আমাদের জানানো হোল আবহাওয়া কুয়াশাছন্ন। সরুপথে উঁচু পাহাড়ের চূড়াগুলো বিমানের ডানায় লেগে যাবার মত অবস্থা। বিমান ক্রমশ নিচের দিকে নামছে। গন্তব্য কাযাকিস্তানের শহর আলমাটি। রানওয়ে ঢেকে আছে মেঘের আবরনে। মেঘ থেকে বৃষ্টিরচ্ছটা উইন্ডশিল্ডে আছড়ে পড়ছে। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৯১ সালে এরা ইউএসএসআর থেকে স্বাধীনতা লাভের ঘোষণা দেয়। এদের জাতীয় এয়ারলাইন্স এয়ার আস্তানা। মেইন বেইয আলমাটিতে। ২০০২ সালে এয়ারলাইনটি যাত্রা শুরু করে।
এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোলারকে অন্যান্য এয়ারক্রাফটের পাইলটের সাথে অনর্গল রাশিয়ান ভাষায় কথা বলতে শুনতে পেলাম। ল্যান্ডিঙের পর আমদেরকে বলল সি১৩০ এয়ারক্রাফটের পাশের স্ট্যান্ডে পার্ক করতে। বিমানের দরোজা খুলতেই ঠাণ্ডা বাতাস সমস্ত শরীর মাখিয়ে দিল।
‘দব্র উত্র’ বলে ওখানকার মেকানিক সম্ভাষণ জানালো। অর্থাৎ শুভদিন বা শুভ সকাল। এরপর থেকেই শুরু আন্তরিক আতিথেয়তা। ভিয়াইপি লাউঞ্জ দিয়ে দশ মিনিটেই কাস্টম ইমিগ্রেশন ফরমালিটি শেষ হয়ে গেল। ইমিগ্রেশনের সাথেই ভিয়াইপি ক্যাফেটারিয়া। লম্বা ডিউটি শেষে ফ্রেশ না হওয়া পর্যন্ত কিছু খেতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। স্লাইডিঙ ডোর খুলে বের হতেই লিমুযিন অপেক্ষারত। আধ ঘণ্টায় হোটেলে নামিয়ে স্যালুট করে শোফার বিদায় নিল। ভালো সার্ভিস পেলে মন বেশ পুলকিত হয়।
হোটেল রুমে ঢুকে আইপ্যাডে ওয়াইফাই সিগন্যাল ধরতেই তরতাজা খবর এলো। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট এ্যাসোসিয়েশন অনুমোদিত কভিড-১৯ হেলথ স্ট্যাটাস চেক এর ডিজিটাল অ্যাপ প্রডাক্ট বেরিয়েছে। যে কোন যাত্রী এটা ডাউনলোড করে তাদের কভিডের টেস্ট রেজাল্ট এড করতে পারবে। এতে ভ্রমণ সহজ হবে। হেলথ সংক্রান্ত সকল তথ্য এয়ারলাইন সংরক্ষন করবে। অযাচিত কোন সংস্থা বা ব্যাক্তিকে এসব তথ্য কোন অবস্থাতেই দেয়া হবেনা। রিসেপশনে ফোন দিয়ে জানলাম লবি রেস্টুরেন্ট খোলা আছে। ওখানে বসে বুফে ব্রেকফাস্ট করা যাবে। ব্রেকফাস্ট কাম ব্রাঞ্চ। চটজলদি শাওয়ার নিয়ে লবিতে নেমে এলাম। রেস্টুরেন্টের ডেকোরেশন অনেকটা ইজিপশিয়ান ডিজাইন মনে হোল। খাবারে মসলা নেই বললেই চলে। প্রচুর সালাদের আইটেম। ব্রেড গুলো ফ্রেঞ্চব্রেডের মতো। উপরের দিকটা শক্ত কিন্তু ভেতরে বেশ নরম। এখানে ঘোড়ার মাংশের বারবিকিউ দেখলাম। এরা বলল এই আইটেম নাকি অনেক জনপ্রিয়। মাছ আমার প্রিয় তাই দুধরনের মাছের সাথে সালাদ আর কুস্কুস নিলাম। খাবার শেষে রুমে গিয়ে লম্বা একটা ঘুম। বিকেলটা ঠাণ্ডা আর বৃষ্টির কারনে বের হলাম না। লোকাল টিভি চ্যানেল দেখে সময় পার করলাম।
পরদিন সকালে চা বানানোর সময় ক্যাটেলে পানি দিয়েছি অনেক্ষন কিন্তু বয়েলিং পয়েন্টে যেতে বেশ সময় লাগছে মনে হল। একটু পরেই ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। সি লেভেল থেকে অনেক উচুতে আছি। এখানে অক্সিজেন আর এটমসফেরিক প্রেশার কম। পানি ফুটতে সময় বেশি লাগাটাই স্বাভাবিক। রাতে ঘুমটা ভাল হয়েছে। আটঘাট বেধে বাইরে যাবার প্ল্যান করছি। বৃষ্টি নেই কিন্তু কুয়াশাছন্ন। লবিতে নেমে ম্যাশিন থেকে কিছু টাকা তুলে নিলাম। কোথায় কখন কাজে লাগে কে জানে। এদের কারেন্সির নাম টেনয। এখানকার ভাষা আর কভিডের সময় কারেন্সি আদানপ্রদান দুটাই এখন আমার জন্য সমস্যা। কি আর করা অনেক কিছু মেনে নিতে হচ্ছে। এদের অফিসিয়াল ভাষা কাযাখ আর রাশিয়ান।

গুগুল করে বের করেছিলাম এ শহরের ব্যস্ততম ষ্ট্রীটের লোকেশন। এই হোটেল থেকে বের হলে চারিদিকেই রাস্তা। কোনদিকে যাবো তা নিশ্চিত হতে বেল বয়কে ফোনের লোকেশন দেখালাম। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজি আর লোকাল ভাষার সংমিশ্রণে বোঝাল এখান থেকে বের হয়ে ডানের রাস্তা ধরতে হবে। এরপর লম্বা হাটা। প্রথম সিগন্যাল থেকে বায়ে গিয়ে পরপর তিনটা সিগন্যাল পার হলে হাতের বায়েই গন্তব্য। মজার ব্যাপার হচ্ছে যেখানে যাচ্ছি তার আগের স্ট্রীটের নাম গুগল স্ট্রীট। একটা জিনিস পরিষ্কার বুঝলাম কাওকে সাহায্য করতে চাইলে ভাষার প্রতিবন্ধকতা খুব একটা সমস্যা নয়।
বেরিয়ে পরলাম। ঘন কুয়াশার আবরন ধিরে কেটে যাচ্ছে। নতুন দেশ দেখার আগ্রহ সবার থাকে। মনের মাঝে প্রশান্তি আনে। প্রথম সিগন্যাল পেরিয়ে আবিলাইখান রোডে পরলাম। রাস্তার মোড়ের ক্যাফেতে দেখি আনার আর অরেঞ্জের ফ্রেশ জুস বানাচ্ছে। শীতের কাপড়ে জুবুথুবু হওয়া মানুষগুলো জুস নিয়ে যাচ্ছে। ছোটছোট বোতলে কম্প্রেস করে জুসগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা। বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। আনারের একটা বোতল নিলাম। গতরাতে তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১৯ ডিগ্রী। এখন প্লাস দুই দেখাচ্ছে। ওদের বেকারি সেকশনে বেশ ভিড়। অবাক কাণ্ড ওখানে সবাই মহিলা ক্রেতা। নিশ্চয় বেকারি আইটেম ওদের বেশ পছন্দের। হাত ঠাণ্ডায় জমে যাবার আগেই জুস শেষ করে আবার হাটা দিলাম। মেইন রোডে একটু পরপর যিব্রা ক্রসিং। সিগন্যালে গাড়ী পার হতে কত সময় আবার মানুষ পার হতে কতক্ষন তাও দেখাচ্ছে।
গেল রাতে টিভিতে একটা ডকুমেন্টারি দেখছিলাম। কাযাখস্তানের দক্ষিনে রয়েছে স্পেইস পোর্ট। ওরা বলে বাইকনুর কসমোড্রাম। এটি পৃথিবীর প্রথম স্পেইসপোর্ট ও সর্ববৃহৎ অপারেশনাল স্পেইস ফ্যাসিলিটি। সময়ানুযায়ী মহাকাশে ক্রু ও অন্যান্য সাপ্লাই সামগ্রী পাঠাতে হয়। কক্ষপথে মানুষ স্পেইসক্র্যাফটে এখান থেকে যাত্রা শুরু করে। এই পোর্টটি ওরা রাশিয়াকে লীয দিয়েছে।
নারীপুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে বেশ স্বাস্থ্যবান মনে হল। চটপটে ও সুন্দর মুখশ্রী। হাঁটাচলায় কোন জড়তা নেই। পাহাড়ি এলাকার মানুষ বুঝি এমনই হয়। উজ্জ্বল গায়ের রঙ। মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হল চেহারাতে রাশিয়ান চাইনিজ আর বেলুচিদের সংমিশ্রণ। পোশাকে বেশ আধুনিকতার ছাপ। কাউকে উচ্চস্বরে কথা বলতে শুনলাম না। ছুটির দিন হওয়াতে অনেকেই বাচ্চাদের নিয়ে বেরিয়েছে। হাতেগোনা দুএকজনের মুখে মাস্ক দেখলাম। মনে হল কভিডের চিন্তা এখনো এদেরকে ভাবিয়ে তুলেনি। তবে রাস্তায় এখানকার ভাষায় কভিডের অনেক সাইনবোর্ড দেখলাম। সিগন্যাল ক্রস করে নির্ধারিত ষ্ট্রীটে উঠেই দেখি ওটা গুগুল ষ্ট্রীট। কেন জানি এই নামটিতে বেশ মজা পেলাম। রাস্তা বেশ উচুর দিকে। শরীরে ঠাণ্ডাভাব আর নেই। এই স্ট্রীটে লোকজন আসতে শুরু করেছে ।
ভাবছিলাম ত্রিশ বছরে এদের জাতীয় এয়ারলাইন্সের ৩৪টি বিমান আর ৬৪টি গন্তব্য। এমন দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অপারেসনের অনেক সিমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এভিএশনে বেশ এগিয়ে আছে। কাযাকিস্তানের মুলত রয়েছে তেল মিনারেলস ও মেটাল। এদেশে দক্ষিনের পাহাড়ে প্রচুর আখরোট আর আপেল হয়। এগুলো এমনিতেই হয় চাষাবাদের তেমন প্রয়োজন হয়না। অ্যাপেল গতরাতে খেয়ে দেখেছিলাম। কি সুন্দর একটা ফ্রেস গন্ধ। নব্বুইএর দশকে এরা কাস্পিয়ান পাইপলাইন কনসোর্টিয়ামে চুক্তি স্বাক্ষর করার ফলে বিপুল পরিমান তেল রপ্তানি সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায়। এসব খবর অনেকেরই জানা। এদেশের পশ্চিমের কিছু অংশ পরেছে উরাল নদীতে। এ নদী পূর্ব ইউরোপ আর এশিয়ার সীমান্তে রাশিয়া ও কাযাকস্তানের মাঝে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির উৎপত্তি উরাল পাহাড়ে আর প্রবাহধারা কাস্পিয়ান সাগরে গিয়ে মিশে যায়।


বছর দশেক আগে এয়ার আস্তানা বিভিন্ন দেশ হতে পাইলট রিক্রুট করছিল। বেশ ভাল ছিল ওদের সুযোগ সুবিধা। তখন ভেবেছিলাম এপ্লাই করি। পরে আমাদের অরগেনাইজেশনে অন্য একটি এয়ারক্রাফটে পাঠিয়ে দেয়াতে ব্যস্ত হয়ে পরেছিলাম। আর এপ্লাই করা হয়নি। দশ লক্ষ বায়ান্ন হাজার স্কয়ার মাইলের অধিক অঞ্চলের এই দেশে সত্তর শতাংশের কিছু অধিক মুসলমান। তার মধ্যে এক দশমিক পাচ শতাংশ উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়। ঐতিহাসিকরা বলেন উইঘুরদের ৬৪০০ বছরের ইতিহাস রয়েছে।
সরকারি অনেক দপ্তর চোখে পড়লো। রাস্তায় পাবলিক বাসগুলো ইলেকট্রিকের। শব্দহীন ভাবে চলছে ওগুলো। কাযাকিস্তানের রাজধানি নুরে সুলতানে এসব বাসগুলো সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। অত্যন্ত পরিবেশ বান্ধব। বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকারক কোন ধোয়া ছাড়ছেনা। জানলাম দশ বছর পর্যন্ত এর ব্যাটারি কর্মক্ষম। উঁচুনিচু পাহাড়ি রাস্তায় হাটতে গিয়ে খিদা লেগে গেল। সারিবদ্ধ রেস্টুরেন্টের মধ্যে একটিকে বেছে নিয়ে ঢুকে গেলাম। এরা কতধরনের ফুড পছন্দ করে তা জানার আগ্রহ ছিল। এখানে বসেই খাওয়া যাবে কভিডের জন্য কোন বাধা নেই। খাবারের বৈচিত্র্য চোখে পড়লো। এখানেও ঘোড়ার মাংশের বেশ কটা আইটেম দেখলাম। এদের ট্র্যাডিশনাল খাবারের ডিশ হচ্ছে বিশবারমাক। এটা মুলত ঘোড়ার মাংস দিয়ে বানায়। চাইলে গরু অথবা ল্যাম্ব এর মাংস দিয়েও বানাতে পারে । জানতে পেলাম ঘোড়ার মাংশই বেশি প্রিয়। মাঝে মধ্যে ভেবে অবাক হই এদের ভাষা না বুঝে কিভাবে সাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছি। বহুদেশ ভ্রমনের কারনে হয়ত এমন হতে পারে। কভিডের জন্য বেশিরভাগ দেশেই ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হয়ে পরেছে। এখানে এসে মানুষজন দেখে মনে হল আগের চেনা পৃথিবী ফিরে পেয়েছি। রেস্টুরেন্টে অসংখ্য মানুষ। কারো চেহারাতে দুশ্চিন্তার কোন ছাপ নেই। একেবারে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা।
কাযাকরা স্পুটনিক ভি ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম শুরু করেছে। এটা রাশিয়ার ফেইয থ্রি ভার্সন। ভেক্টর টেকনোলজি। দাবি করা হচ্ছে এই ভ্যাক্সিন ষাট বছরের বেশি বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে শতকরা বিরানব্বুই ভাগ কার্যকরী। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে এসব নিয়ে সত্যিই এদের কোন মাথা ব্যথা আছে। পাশের কোরিয়ান রেস্টুরেন্ট একেবারে জমজমাট। কোন সীট খালি নেই।

ফুড কাউনটারে তিনটি তরুণী খাবার সার্ভ করছে । চিকেন রাইস আর বীটের সালাদ নিলাম। সিমপ্লি ইয়েলো রাইসের সাথে চিকেন কিউব দিয়ে বানানো। ইংরেজিতে কত টাকা হয়েছে এটা জিজ্ঞেশ করাতে মেয়েগুলো হেসে কুটিকুটি। কেও কিছু বুঝেনি। সাহায্যের জন্য কিছুটা ইংরেজি জানা অন্য এক কাস্টমার এগিয়ে এলো। বিল পে করে কর্নারের টেবিলে গিয়ে বসলাম। এখান থেকে বাইরের পুরোটাই দেখা যায়। ব্রাঞ্ছ এর মত একিই অবস্থা। কোন ধরনের মশলা ব্যাবহার করেনি। চিকেন রাইস বলতে গেলে লবন ছাড়া। তাও খেতে খারাপ লাগছেনা।
কিছুক্ষন পরপর রাস্তায় সবুজ রঙের পাবলিক বাসের সাথে নীলরঙের ইলেকট্রিক বাসগুলো চলছে। পলিউশন ফ্রি সিটি। বিশুদ্ধ বাতাস। বিল্ডিঙগুলোর উপর দিকে তাকালে দূরে বরফ ঢাকা উঁচু পাহাড়ের চুড়া দেখা যায়। এদেশে ঘুরে বেড়ানোর বহু টুরিস্ট স্পট আছে। হাজার বছরের পুরানো আরকিওলজিক্যাল সাইট আর রহস্যময় সিল্করোডের দর্শনীয় স্থান দেখার জন্য বহু টুরিস্টের আগমন হয়। বরফ ঢাকা পাহাড় বা উষ্ণ মরুভূমি কিংবা শীতল নদীর অসম্ভব সুন্দর পরিবেশ মিলে নিসর্গ তার রুপ যেন ঢেলে দিয়েছে। মন বলছে প্রকৃতির এ সুন্দরকে দেখতে লম্বা ছুটি নিয়ে এখানে আসতে হবে।
লাঞ্ছ শেষ এবার ফিরে যাবার পালা। হোটেলে গিয়ে ঢাকায় কল দিতে হবে। সূর্যটা উঠতে না উঠতেই ঢলে পড়তে শুরু করেছে। এখানকার স্থানীয় সময় আর বাংলাদেশের সময় এক। এতে বেশ সুবিধা হয়েছে। দিনের সময়ানুযায়ী দেশে কথা বলা যাবে। পর্যটকের মত জীবন আমার। কখন কোথায় থাকি তার ঠিক নেই। সময়ের তারতম্যে কাউকে মাঝ রাতে জাগিয়ে কথা বলতে হবেনা।

এবার ভিন্ন পথে হোটেলের পথ ধরলাম। সিটিতে ছোট বড় বেশকিছু পার্কের অবস্থান। রাশিয়ান ভাষায় লেখা স্ট্রীটের নাম পড়ার চেষ্টা করলাম। অ্যালফাবেট আন্দাজ করে মনে হল এর নাম মানশুক মামেটেভো স্ট্রীট। জানিনা আসল উচ্চারন কি হবে। সূর্য হেলে পড়াতে ঠাণ্ডাটা বেড়েছে। রাস্তার ধারে বরফ গলে চারিদিকে পানিতে সয়লাব। পার্কের ভিতর দিয়ে হেটে অন্য রাস্তায় যাবার কথা ভাবলাম। এই সুযোগে নতুন কিছু হয়তো দেখতেও পারি। হাটার পথ ধরে কিছুদূর এগিয়ে যেতেই অস্বস্তিতে পরে গেলাম। অজানা অচেনা এলাকা। সাবধানের মার নেই। হাটার গতি বাড়িয়ে দিলাম। কাউকে চোখে পরলনা। গাছের সারীগুলোকে অতিক্রম না করা পর্যন্ত হাটার স্পীড কমালাম না। একসময় খোলামেলা জায়গায় বেরিয়ে এলাম। বেশ বড় এক ভাস্কর্য চোখে পড়লো। তেজস্বী ঘোড়ার উপরে বসা কোন এক বীরের প্রতিকৃতি। কাছে গিয়ে দেখি এটাও রাশিয়ান অ্যালফাবেটে লেখা। কাযাখিস্তান ইতিহাস সমৃদ্ধ দেশ। নিশ্চয় এটা ফেমাস কেও হবে। ছবি তুলে নিলাম। জানার আগ্রহ নিয়ে পার্ক ছেড়ে মেইন রোডে উঠে সরাসরি হোটেল অভিমুখি পথ ধরলাম। রাস্তায় এখন প্রচুর গাড়ী। হোটেল লবিতে এসে রিসেপসনিস্টকে ছবিটি দেখালাম। ঐ বীরের নাম আমানগেলডি ইমানোভ। এক সাহসী যোদ্ধা। ১৮৭৩ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত তাঁর জীবনকাল। বহু কবি সাহিত্যিক শিল্পী ছবি নির্মাতা এই বীরের জীবন কাহিনি নিয়ে কাজ করেছেন। গরীব ঘরে জন্ম নেয়া ইমানোভের সাহসিকতা ও বীরত্তের কাহিনি অবাক করার মত।
রুমে ঢুকে দেখি ইউনিফর্মের স্যুট লন্ড্রি থেকে দিয়ে গেছে। সবকিছু গোছগাছ প্রায় শেষ। সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট করেই রাওনা দিতে হবে হংকং এর পথে। কাজাকিস্তানকে বিদায় জানানোর সময় এসে গেছে। আলমাটিতে আমার পদচিহ্ন এঁকে দিয়ে গেলাম। হয়তোবা আবারো কখনো এসে ঘুরে বেড়াবো পাহাড় ঘেরা সুন্দর এই ঐতিহাসিক সিটিতে।

# সুপ্রিয় পাঠক, নিরাপত্তার কারনে আমার লেখায় অনেক কিছুই লিখতে পারবো না। বিধি নিষেধ! বিভ্রান্ত না হয়ে আর সেটুকু মেনে নিয়ে সাথে থাকবেন—এই আশা মনে রাখছি। সবাইকে ভাষার মাসের শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।

 ফেব্রুয়ারি ২০২১।

[ সুপ্রিয় পাঠক, নিরাপত্তার কারনে আমার লেখায় অনেক কিছুই লিখতে পারবো না। বিধি নিষেধ! বিভ্রান্ত না হয়ে আর সেটুকু মেনে নিয়ে সাথে থাকবেন—এই আশা মনে রাখছি।]
জানুয়ারি ২০২১।
রেহমান রুদ্র ।।
প্রবাসী বাঙালি বৈমানিক ।
হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।