এক্সক্লুসিভ *বৈমানিকের পান্ডুলিপি * ৯ * মেক্সিকোর সোনালি পরী * রেহমান রুদ্র।।

 


এক্সক্লুসিভ *বৈমানিকের পান্ডুলিপি * ৯ * 

*মেক্সিকোর সোনালি পরী * 

*রেহমান রুদ্র।।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সম্পদশালী দেশ লাক্সেমবর্গ থেকে মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটি যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। গন্তব্য বেনিটো হুয়ারেস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। সকাল থেকে বাসে করে সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়িয়েছি। আজ শনিবার। সরকারি ছুটির দিনে বাস ট্রেন যে কোন পাবলিক সিটি ট্রান্সপোর্ট সবার জন্য একেবারে ফ্রি। যাতায়তে টাকা পয়সা লাগবেনা। এই ব্যবস্থা ছুটির দিনে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ফ্যামিলিকে উৎসাহিত করে। দেখা যায় রেস্টুরেন্ট বিজনেস বেশ জমজমাট। বেশিরভাগ মানুষ ফ্যামিলি নিয়ে পার্কে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সুন্দর মনোরম পরিবেশ। অনেক্ষন ধরে হাঁটছি। এখানে যে কোন পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করলে টাকা লাগে। সিসি টিভি লাগানো দেখলাম। এক মহিলা ল্যাপটপ নিয়ে সিকিরিউটি ক্যামেরাগুলো মনিটর করছে। ইউরো নেওয়ার জন্য কয়েন বক্স রাখা। দুই ধরনের কয়েন আছে।দুটোর দুই প্রাইস। ছোট কাজের জন্য কয়েন দিয়ে বড় কাজের টয়লেট ডোর খোলা যাবেনা। সুন্দর ব্যবস্থা। টয়লেটে সিসিটিভির বিষয়টি পরে একজন খোলাসা করেছিল। অসামাজিক কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য নাকি এ ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সিটিতে প্যারিস নামের একটা এরিয়া দেখলাম। ফরাশি আদলে সবধরনের দোকান পাটের সমাহার। ওখানেই লাঞ্চ করে বাসে উঠে হোটেলের কাছাকাছি নেমে পড়লাম। মিনিট দশেক হাটতে হবে। মিউজিয়ামের সড়ক দিয়ে যাচ্ছি। আজ বন্ধ তাই লোকজন নেই। বিশাল টিভি স্ক্রিনে মিউজিয়ামের মধ্যে কি কি আছে তা দেখাচ্ছে। মানুষকে আগ্রহী করে তোলাই উদ্দেশ্য। ভালই মনে হল। ইতিহাস কৃষ্টি এসব জানার প্রয়োজন আছে।

রুমে এসে টানা চার ঘণ্টা ঘুম দিলাম। শাওয়ার শেষে শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছে। তৈরি হয়ে গেলাম মিশনের জন্য। লম্বা ডিউটি। এমন প্রফেশনে শারিরিক ও মানসিক প্রস্তুতি দুটোই জরুরী । লাক্সেমবর্গ থেকে টেকঅফ করে ফ্রেঞ্চ কন্ট্রোলের সাথে যোগাযোগ করলাম। এরাই আজ অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশের অনুমতি দেবে। অক্ষাংশ আর দ্রাঘিমাংশগুলো অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ফ্লাইট কম্পিউটারে ফিড করতে হবে। যেকোনো ধরনের অসতর্কতা পাইলটের ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকর। দশ মিনিটেই রুট ক্লিয়ারেন্স এসে গেল। পুঙ্খানুরুপে বিশ্লেষণ করে অ্যাটলান্টিকের রুট বানিয়ে ফেললাম। বিমান থেমে নেই। জেট স্পীডে ছুটে চলেছে গন্তব্যের দিকে। মহাসাগরে প্রবেশের আগে ননস্টপ বিভিন্ন এয়ার ট্রাফিক কনট্রোলের সাথে কথা হচ্ছিল। নির্ধারিত সময় অন্তর ইয়োরোপ থেকে বিদায় নিয়ে ক্যানেডিয়ান এয়ার ট্রাফিক কনট্রোলের সাথে যোগাযোগ স্থাপন হল। ওরা ওসানিক বিশেষ ফ্রিকুএঞ্চির মাধ্যমে নানাধরনের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিল। এরপর মন্ট্রিয়াল হয়ে টরোনটো কন্ট্রোলে হস্তান্তর করল। ক্যানেডিয়ান আকাশ সীমা ছাড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করলাম। পর্যায়ক্রমে শিকাগো ক্যানসাস সিটি হয়ে হিউসটনের আকাশপথ। এরাই বলল মেক্সিকোর সাথে যোগাযোগ করতে । মেক্সিকান কন্ট্রোলার বেশ ভারি গলায় সম্ভাষণ জানালো। উচ্চারনে পর্তুগীজ আর স্পেনিশ প্রভাব রয়েছে। মেক্সিকো এয়ারপোর্টটি পাহাড়ি এলাকায়। রানওয়ে সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ৭৩১৬ ফুট উপরে। ১৯৩১ সালে সরকারী ভাবে এটি উদ্বোধন করা হয়। ল্যাটিন আমেরিকার সবচেয়ে ব্যস্ত এয়ারপোর্ট। কভিডের আগে গড়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক যাত্রী যাতায়ত করতো। ল্যান্ডিঙের জন্য এটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ তাই বেশিরভাগ এয়ারলাইন শুধুমাত্র ক্যাপ্টেনকে ল্যান্ড করার পারমিসন দেয়। কো পাইলটের ল্যান্ড করার অনুমতি নেই। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শরীর আর মন দুটোই যখন ক্লান্ত ঠিক তখনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সুচনা। ল্যান্ডিঙের প্রস্তুতি নেয়া। মাউনটেন ওয়েভের কারনে মুহূর্তেই বাতাসের গতিবেগের পরিবর্তন হয়। বিমানকে রানওয়ে বরাবর সোজা রেখে খাড়া পাহাড়ের ভিতর দিয়ে নিচের দিকে নামতে হলে মনের মধ্যে সার্বক্ষণিক গাণিতিক হিসাবনিকাশের প্রয়োজন। একই সাথে কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়। প্রতিটি ধাপ তাদেরকে অবহিত করতে হয়। সামনে পেছনে উপরে নিচে অন্যান্য বিমানের অবস্থান নিয়ে পাইলটকে একটা কমপ্লেক্স ডাইম্যানশনের মধ্যে বিমান অবতরন করাতে হয়। এটা একজন বৈমানিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জন করে থাকে। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

স্থানীয় সময় রাত দশটায় ল্যান্ড করলাম। বাংলাদেশ হচ্ছে গ্রিনিচ সময়ের ছয় ঘণ্টা এগিয়ে। মেক্সিকো গ্রিনিচের ছয় ঘণ্টা পিছিয়ে অর্থাৎ বাংলাদেশের সাথে এদের স্থানীয় সময়ের পার্থক্য ঠিক বারো ঘণ্টা। রানওয়ে আর এয়ারপোর্টের লাইটিং অপর্যাপ্ত মনে হল। বহু এয়ারক্রাফট এদিক ওদিক পার্ক করে রাখা যেগুলো কভিডের কারনে ব্যবহার হচ্ছেনা।

সোনালি চুলের মেক্সিকান তরুনি হাতে কটা ফর্ম ধরিয়ে দিল। সে আমাদের কোম্পানির লোকাল এজেন্ট। কাগজগুলো ফিল আপ করতে হবে। একটানা সাড়ে দশ ঘণ্টা ফ্লাই করে এসে এতোগুলো কাগজপত্র লিখালিখিতে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়। ফর্মের অনেকগুলো ঘর আবার লোকাল ভাষায় লেখা। মেয়েটি সহযোগিতা করল। এজেন্ট বলল ইমিগ্রেসনের পরে এন্ট্রি ফর্ম যেন পাসপোর্টের সাথে রাখি। হারিয়ে ফেললে ফাইন দিতে হবে। কভিডের হেলথ ফর্মটা সবার আগে প্রয়োজন হবে। সব কাগজপত্র স্টাফ গুছিয়ে নিয়ে ওকে ফলো করতে বলল।কালো রঙের স্কিন টাইট প্যান্ট এর উপরে উজ্জ্বল হলুদ রঙের জ্যাকেট। এটাই ওদের ইউনিফর্ম। জ্যাকেটের পেছনে হারকিউলিস লিখা। বিশাল ফ্যালকনের উইং দৃষ্টি কাড়ে। ওদের কোম্পানির লোগো। বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছিল এই ভেবে রোমান ক্লাসিক্ মাইথলজি এখানে এলো কি করে।

এয়ারপোর্টের বাইরে কালো এসইউভি অপেক্ষায়। মেয়েটি বিদায় নেবার আগে বলল কাল পরবর্তী ডিউটি কনফার্ম করবে। হোটেল রিসেপশনে ম্যাসেজ দিয়ে রাখবে। এধরনের গাড়ি মেক্সিকান স্টোরির মুভিগুলোতে দেখেছি। সিটে বসে ভালো লাগলো। বেশ আরামদায়ক। বাইরের শব্দ নেই বললেই চলে। ড্রাইভার জানালো আনুমানিক চল্লিশ মিনিটের রাস্তা। ভালই হল রাতের মেক্সিকো সিটি দেখতে পারা যাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন সিটিতে যেখানে পর্তুগীজদের প্রভাব ছিল ঠিক তেমন ভাবেই গড়া শহর। মনে হচ্ছিল পনেরো শতকে পর্তুগিজ ন্যাভিগেটর ফারদিনান্দ মেগেলানের আবিষ্কৃত ফিলিপাইনের কোন রাস্তা দিয়ে চলছি। জানা যায় সর্বপ্রথম ইসলামিক কার্যক্রম শুরু হয় উনিশশ আশির দশকে। ইজিপ্সিয়ান ক্লাবে কিছু ডিপলোমেট এ কাজের সুচনা করে। ক্যাথলিযমের আধিপত্য প্রায় তিরাশি শতাংশ। ড্রাইভার মোবাইলে আমাদের অবস্থান জানিয়ে দিল বলে মনে হল। প্রতি দশমিনিট পরপর তাকে দেখলাম এটা করতে। সিকিউরিটি ইস্যু হতে পারে।


হোটেলটি বেশ সুন্দর। তারকা খচিত চেইন হোটেল। চেক ইন করে সরাসরি রুমে চলে এলাম। এ সিটি সম্পর্কে ধারনা এয়ারলাইন আগে থেকেই দিয়ে রেখেছিল। ভাষার বিষয় তো বলা বাহুল্য। ইংরেজি জানা মানুষের সংখ্যা খুবই কম। ইউরোপের সাথে স্থানীয় সময়ের অনেক তারতম্য থাকাতে ব্রেনের ভিতরের বডিক্লক এডজাস্ট হওয়ার চেষ্টা করছে। মাথাটা কেমন যেন হালকা মনে হচ্ছে। ফ্রিযার থেকে পানির বোতল এনে বেডের পাশে রাখলাম। লম্বা ফ্লাইটের পর গলা শুকিয়ে যায়। ডিহাইড্রেশন এড়াতে কিছুক্ষন পরপর পানি খেতে হয়। ডিনার শেষে লোকাল টিভি চ্যানেলগুলো সার্ফ করতে গিয়ে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম।

ভালই ঘুমিয়েছি। আকাশ পথের দীর্ঘ যাত্রায় শরীরটা সারেন্ডার করেছিল। বেড সাইড ফোনের ম্যাসেজ লাইট জ্বলে আছে। বাটনে চাপ দিয়ে ভয়েস কল শূনতে পেলাম। এজেন্ট বলল আগামি কাল রাতে এখান থেকে ইউ এস এর আটলান্টা ফ্লাইট। আজ সন্ধ্যায় এই হোটেলে ওদের মিটিং আছে। কোন অসুবিধা হলে জানাতে বলল। প্ল্যান করলাম যতদূর পারা যায় সিটিটা ঘুরে দেখবো। জায়গা চেনার জন্য সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে হেটে বেড়ানো। প্রতিটি জিনিষ খুঁটীয়ে দেখা যায়। সব রাস্তাঘাঁট মনে থাকে। তাছাড়া গাড়ীতে উঠে ভাষাগত সমস্যায় পড়তে চাইনা। এখানে যেকোনো কিছু ঘটে যাওয়া সম্ভব। সিকিউরিটি এডভাইয গুলো মাথায় সবসময় ঘুরপাক খায়। ভাড়া করা গাড়ীতে কোথায় নিয়ে যাবে কে জানে। কভিডের কারনে এমনিতেই গাড়ী এভয়েড করার চেষ্টা করি।

এরা অনেক ভাষাতেই কথা বলে। এর মধ্যে আছে নাওয়াটেল মায়া যাপোটেক মিক্সটেক সহ আরও অনেক। স্পেনিশ পর্তুগীজ ভাষার ব্যবহার যত্রতত্র। মায়া ভাষার ব্যবহার ও অনেক। খ্রিষ্টপূর্ব আঠারো শত বছর আগে থেকেই মায়া সিভিলাইযেশনের ছোঁয়া মেক্সিকোতে লেগেছিল। আধুনিক লেখনি আরকিটেকচার মেথেমেটিকস এস্ট্রোনমি সাল গননা এসব নিয়ে তখন ওরা এগিয়ে চলেছে।

মেক্সিকো সিটিতে ব্যস্ত একটি দিন। হোটেল থেকে বেরিয়েই রাস্তায় অনেক পুলিশ দেখতে পেলাম। এরিয়াটার গুরুত্ব উপলদ্ধি করে এই ব্যবস্থা। হোটেলের সাথেই ডিপ্লম্যাটিক মিশনের অফিস। আগেভাগেই ঠিক করে রেখেছিলাম পাসিও দ্য লা রিফরমার গোল্ডেন এঞ্জেল স্ট্যাচু দেখবো। এটাই সোনালি পরীর স্ট্যাচু।


জেমস বন্ডের এক ছবিতে এখানে একশন দৃশের শুটিং হয়েছিল। সোনালি পরীটি এঞ্জেল অফ ইনডিপেনড্যান্স এর প্রতিক। উনিশশ দশ সালের বানানো এই স্ট্যাচুকে সহজ করে এল এঞ্জেল বলে। মেক্সিকো সিটির এটি একটি প্রসিদ্ধ ল্যান্ডমার্ক।

সূর্যের আলোর ছটায় সোনালি পরীটি জ্বলজ্বল করছিল। এখানেও বহু আর্মড পুলিশ। ক্রাউড কন্ট্রোলের জন্য কটা আরমার্ড ভেহিকেল পার্ক করে রাখা। সৃতি ধরে রাখার জন্য ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। পাশেই পার্ক। অনেকেই বসে আছে লম্বা চেয়ার গুলোতে। পার্কের মধ্যে সাময়িক দোকান বানানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। দিনের বেলায় খোলামেলা এরিয়াতে খাবারের আয়োজন। এখানেই লাঞ্চ সেরে নিতে পারি। তার আগে আরও কিছু দেখা যেতে পারে। সাইড রোডে ঢুকে একটু এগোতেই দেখি পুলিশ ষ্টেশন। রাস্তার একাংশে দলবদ্ধ হয়ে ব্রিফিং চলছে। এরা বেশ ভারী অস্রশস্র ব্যবহার করে। প্রত্যেকের বুলেট প্রুফ ড্রেস ও হেলমেট। খুব সম্ভব এ সিটি সম্পর্কে ধারনা অনেকের আছে।

গতরাতে ছেলে মেয়ে দুজনই বলেছে এখানে কি খাবার বেশি জনপ্রিয়। হোয়াটসঅ্যাপে পিকচার পাঠিয়েছে। এদেশীয় খাবারের জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী। এরা জানে কিভাবে খাবারের স্বাদ লোভনীয় করে তুলতে হয়। প্রতিটি মেন্যু খিদা বাড়িয়ে দেয়। দিনের বেলাতে লাইট ঝলমলে এক রেস্টুরেন্ট থেকে মিউজিকের শব্দ ভেসে আসছে। কিউবান রেস্তোরা। ওরা কেমন খাবার খায় তা জানতে ভিতরে প্রবেশ করলাম। বুফে সাজিয়ে রেখেছে। খাবারগুলো দেখে ঠিক বুঝে উটতে পারলাম না। মনে হল সবকিছুতেই পর্ক দেয়া। দুটো আইটেম চেনা যাচ্ছে। মাশকলাই সিদ্ধ আর মোটা চালের ভাত। প্রতিটি টেবিলে কিউবান মিক্স ড্রিংক আর কফির জাগ রাখা। খাবারের সাথে এগুলো ফ্রি। যতদুর জানি কিউবা শতবছর ধরে রোবাস্তা আর এরাবিকা কফির চাষ করে। ঝলমলে পোশাকের কিউবান মহিলা এগিয়ে এলো। এটা তার রেস্তরাঁ। দেশ কোথায় জানতে চাইলে বললাম। তখন এক ঘটনা ঘটলো। মহিলা কিচেনের ভেতর থেকে যাকে নিয়ে এলো সে এক তরুন বাংলাদেশি। সত্যিই অবাক হলাম। এখানে দেশের মানুষকে দেখতে পাবো তা কল্পনা করা যায়না। অনেক কথাই হোল। এখানে কি করে এলো তা এক ইতিহাস যেন। অবাক করার মত সে কাহিনি।


এসব খাবার খাবনা সে জানে। তাছাড়া ওরা মেক্সিকান খাবার বানায় না তারপরেও পাশের রেস্টুরেন্ট থেকে আমার পছন্দমত টাকোস এনে দিল। সাথে লেবুর টুকরা আর হেলাপিনো পেস্ট। ওটার ঘ্রাণে জিভে পানি এসে গেল। একটা বিষয়ে শান্তি পেলাম কোনধরনের পোর্কের উপাদান নেই। হুড়মুড় করে প্লেইট খালি করে দিলাম। বাইরে পুলিশের গাড়ীর সাইরেনের শব্দে কান ঝালাপাল। টিভি স্ক্রিনে সেই চির পরিচিত কভিডের নিউজ। দেশী ভাইকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে এলাম। চোখ ছলছল করা ছেলেটি আজ নয় বছর দেশের বাইরে। কখন দেশে ফিরবে তাও জানেনা। বুঝতে পেরেছি মজবুত কোন কাগজপত্রের অভাব হতে পারে। এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন করিনি। কাউকে কষ্ট দিতে ইচ্ছে করেনা।

প্রতিটি রাস্তার মোড়ে রাজকীয় জুতা পালিশের ব্যবস্থা দেখলাম। ডিজাইন করা বেশ বড় চেয়ারে হেলান দিয়ে খবরের কাগজ পড়ার সাথে জুতা পালিশের আয়োজন। রিকশার মত চেয়ারের উপরে হুড লাগানো। ম্যাগাজিন আর পেপার ওখানেই দেয়া হয়। আইডিয়াটা ভাল লাগলো। আরেকটি ব্যাপার নজর কাড়ল। পার্কের মধ্যে মোবাইল রিচার্জের জন্য কিয়স্ক। কয়েন পুশ করে চারজার ক্যাবল বের করে আনা যায়। প্রিসেট টাইম অনুযায়ী কাজ সেরে নেয়া যাবে। পার্কে বসে খানিক বিশ্রাম আর সাথে মোবাইল চার্জ। ইমারজেন্সির জন্য বিষয়টা খারাপ না।

প্রচুর ফলের দোকান। নানারকম কাটা ফল কিনতে পারা যায়। একদম সস্তা। প্লাস্টিক বক্স ভরে কয়েক রকমের কিনলাম। সাথে ফ্রি লাল মরীচের গুড়া। মেক্সিকান মরিচের বেশ নামডাক। এরা ঝাল অনেক পছন্দ করে। এদের হেলাপিনোতে যেমন সুগন্ধ তেমন তীব্র ঝাল। যেকোনো খাবারের সাথে এসব মিশিয়ে দেয়। যাদের ঝালে সমস্যা তাদেরকে একটু সজাগ থাকতে হবে।


দ্যলা রছা এভিন্যু দিয়ে হাঁটছি। রাস্তার পাশে বেশ লম্বা মানুষজনের লাইন। চারিদিকেই পুলিশ। পার্শ্ববর্তী দেশের ভিসা সঙ্ক্রান্ত লাইন। বহু নারীপুরুষের মিলন মেলা। আবহাওয়াটা বেশ ড্রাই। ঠোঁট শুকিয়ে আছে। প্রচুর পানি খেতে হবে। ভাবছি কাজের খোঁজে ভাগ্য পরিবর্তনে অন্যদেশে যাবার স্পৃহা আজীবন মানুষের মধ্যে থেকে যাবে।

মহান শহীদ দিবসে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি রইল প্রানের শ্রদ্ধা আর মহান সেই স্মৃতি কাতরতা ।

# সুপ্রিয় পাঠক, নিরাপত্তার কারনে আমার লেখায় অনেক কিছুই লিখতে পারি না। বিধি নিষেধ! বিভ্রান্ত না হয়ে আর সেটুকু মেনে নিয়ে সাথে থাকবেন—এই আশা মনে রাখছি।

রেহমান রুদ্র ।।
প্রবাসী বাঙালি বৈমানিক ।
হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।। 




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।