'সব পেয়েছির দেশে’- ৩৯- বাল্টিমোর থেকে আবদুল হাকিম। ।

 ## A hellojanata. com Presentation . 


‘সব পেয়েছির দেশে’-

৩৯ -
আবদুল হাকিম।।

Hellojanata.com

লাইন পড়েছে । কিছুক্ষন বসে থাকার পর আমার ডাক পড়ল - হাকিম আবদুল । হ্যা । আমেরিকা 'য় লাস্ট নেইম আগে ব্যবহার করা হয় । ফার্স্ট নেইম থাকবে পরে । আরে বাবা, লাস্ট নেইম যদি আগে ব্যবহার করবি, তো ওই লাস্ট নেইমকেই ফার্স্ট নেইম বানিয়ে নিলেই হয় । ঝামেলা চুকে যায় । কোনটা লাস্ট নেইম আর কোনটা ফার্স্ট নেইম, এ নিয়ে এতো গোলমাল থাকেনা । আর ফার্স্ট নেইম আগে আর লাস্ট নেইম পরে থাকলে খতিই বা কি ? - না, চলছে’তো চলছেই । ওসব নিয়ে ভাবার সময় কারো নেই । 

Hellojanata.com

একটু টেনসন নিয়েই ঢুকলাম । বেশ সুন্দরি এক সাদা মহিলা আমাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে তার সামনের চেয়ারটায় বসতে বললেন । শুরু হল আমার ইন্টার্ভিউ । প্রথম পর্বে আমার নাম ধাম ঠিকানা জন্ম তারিখ কোন দেশ থেকে কবে এসেছি, কোথায় কি কাজ করি ইত্যাদি ইত্যাদি । বোঝা গেল, তার হাতের ভিতর আমার এপ্লিকেসনটা রয়েছে । আমার কথার সাথে উনি মিলিয়ে দেখছেন । দ্বিতিয় পর্বে উনি জিজ্ঞেস করলেন, আমেরিকার জাতিয় পতাকার অর্থ কি ? উত্তরটা আমার জানাই ছিল । ঝড়াঝড় বলে দিলাম, পঞ্চাশটা তাঁরা পঞ্চাশটি স্টেটের প্রতিক । আর লালসাদা তেরোটি লম্বা দাগ দেশের প্রথম তেরোটি স্টেটের প্রতিক । এরপর উনি জানতে চাইলেন, সরকার পরিচালনায় প্রধান কয়টি শাখা এবঙ তা কি কি ? আমি তাও জানতাম । বললাম, আইন প্রনয়ন বিভাগ, নির্বাহি বিভাগ ও বিচার বিভাগ । এবার ভদ্রমহিলা সুন্দর একগাল হেসে বললেন, বলতো মিঃ আবদুল, আমেরিকায় মোট কতজন সিনেটর ও কতজন হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভ ? আমি বললাম, একশো জন সিনেটর আর চারশো পয়ত্রিশ জন হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভ । আমি একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম, এরপর যদি আরও ভিতরের প্রস্ন ধরে বসে ? তাহলে তো - । না । এবার উনি জানতে চাইলেন, আমেরিকার স্বার্থে ও প্রয়োজনে আমি যুদ্ধ করতে পারব কি না ? আমি ঝটপট বলে দিলাম, ইয়েস । তারপর উনি একটা পেপার এগিয়ে দিয়ে আমাকে পড়তে বললেন । আমি দেড় লাইন মতো পড়লাম । - গুড । ভেরি গুড । - এবার তোমার রিটেন টেস্ট । লেখো - আই ড্রাইভ এ ব্‌লু কার । - আমি ফসাফস লিখে দিলাম । ব্যাস । - বেলা তিনটায় তোমার ওথ্‌ হবে । উইস ইয়োর গুড লাক আবদুল । থ্যাঙকস । - ইন্টার্ভিউতে ওদের ইঙলিস বোঝা নিয়ে আমার একটা সঙশয় ছিল । কিন্তু ভদ্র মহিলা বেশ ম্যানেজ করে নিলেন । ওরা জানে, যারা সিটিজেনসিপ ইন্টার্ভিউতে আসে তারা সবাই বিদেশি । তাদের ইঙলিশ বলা ও বোঝা আমেরিকানদের মতো হবে না ।    

ফিরে এসে দেখি ডলির চেয়ার খালি । পাসের এক আফ্রিকান মহিলা ইসারায় আমাকে জানালো, তাকে কল করেছে । সে এখন ভিতরে আছে । কিছুক্ষন পরে ও’ও বেরিয়ে এলো । মোটামুটি একই রকম কাহিনি । বেশ একটা প্রশান্তি অনুভব করলাম । ছেলেটার আসার ক্যাটাগরি এগিয়ে নিতে পারবো হয়তো । 

বেলা তিনটায় ওথে্‌র জন্য বিশাল একটা হলঘরে ঢুকলাম । বিভিন্ন দেশের প্রায় বিশ ত্রিশ জন হবে । সবাই বেশ উতফুল্ল । ইউ এস সিটিজেন বলে কথা । আমাদের গ্রিন কার্ড নিয়ে নেয়া হল । দেয়া হল সিটিজেনসিপ সার্টিফিকেট । সাথে প্রেসিডেন্ট বুশ স্বাক্ষরিত একটি অভিনন্দন পত্র । অনেককেই ফিসফাস করতে দেখলাম, আহা ! ক’দিন পরে হলে, এখানে নতুন প্রেসিডেন্ট ওবামার স্বাক্ষরই থাকতো । দেখলাম বেপারটি নিয়ে কর্তৃপক্ষের লোকদেরও টুকটাক একই মন্তব্য । সবাই প্রায় ধরেই নিয়েছে, ওবামাই পরবর্তি প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন । সবাই কি ডেমোকক্রেট নাকি ? এ ব্যাপারে আমার একটা অতিরিক্ত কৌতুহল আছে । নমিনেসন চুড়ান্ত হবার আগেই আমি আমার নিজ ও পরিচিত মহলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছিলাম, এই ওবামাই হতে চলেছে আমেরিকার পরবর্তি প্রেসিডেন্ট । অনেকেই আমার কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন ।  - সবাই ভুলে গেলেও, আমার অন্তরে আজও এ নিয়ে একটা আত্মতুষ্টি রয়ে গেছে । - যাকগে আমাদের বলা হল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইউ এস পাসপোর্ট করে নিতে । এখন আমারা ইউ এস সিটিজেন । কাগজে কলমে এটাই আমার দেশ । নিজ দেশের পাসপোর্ট ছাড়া বিদেশে যাওয়া যাবে না । এয়ারপোর্টে গ্রিন কার্ড আর দেখানো যাবে না । বাঙলাদেশের পাসপোর্ট বাতিল ।  

এরপর সবাইকে একটি করে ছোট্ট জাতিয় পতাকা দেয়া হল । এক হাতে পতাকা, আর একহাত বুকের উপর রেখে ইউ এস এ’র স্বার্থ রক্ষায় জিবন উৎসর্গ করব বলে শপথ নিলাম । পিছনে মিউজিকে বেজে উঠলো আমেরিকার জাতিয় সঙ্গিত । ছোট্ট একটা মঞ্চের মতো আছে । ওখানে বড় একটা পতাকার সামনে দাড়িয়ে ফটো তোলা যায় । আমরাও তুললাম । ঘরে ফেরার পথে অনুভব করলাম, বুকের ভিতর বেশ জোরেই বেজে চলেছে, - আমার সোনার বাঙলা, আমি আমি তোমায় ভালোবাসি ।





আবদুল হাকিম ।।
প্রবাসী লেখক ।।
বাল্টিমোর,ইউ এস এ ।।
# আবদুল হাকিম হ্যালো জনতা ডট কম’এর নিয়মিত লেখক ।
# লেখকের প্রতিটি লেখা আমাদের ব্লগে এবং সামাজিক মাধ্যম সমুহে প্রচারিত হয় ।

হ্যালো জনতা ডট কম ।।
hellojanata. com .

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।