বিলুপ্তির পথে বেত গাছ -মহসিন আলী মনজু।।

 ## A hellojanata. com Presentation. 




বিলুপ্তির পথে বেত গাছ -

মহসিন আলী মনজু ।।


বিলুপ্তির পথে বেত গাছ।।

মহসিন আলী মনজু। 

একসময় লতাপাতা আর সবুজ শ্যামলে ভরপুর ছিল গ্রামবাংলার  প্রকৃতি ও পথঘাট প্রান্তর আর লোকালয়। বিভিন্ন ঋূতুতে নানান রংঙে সাজতো গ্রামবাংলার প্রকৃতি।
আগে গ্রামবাংলায় অনেক দেশী গাছ গাছালী পাওয়া যেত । এখন অনেক গাছ গাছালী বিলুপ্তির পথে। এ রকম একটি বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতি হচ্ছে বেত গাছ।আগের মত গ্রাম-গঞ্জে বেত গাছ তেমনটা দেখা যায় না।

www. hellojanata.com 

বেত গাছ সাধারণত গ্রাম-গঞ্জে রাস্তার পাশে, বসতভিটার পিছনে , পতিত জমিতে ও বন-জঙ্গলে কিছুটা আর্দ্র জায়গায় জম্মে। খুব অল্পদিনের মধ্যেই বেত গাছ ঘন ঝাড়ে পরিণত হয়।
চির সবুজ এই উদ্ভিদটি পূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় ৪৫ থেকে ৫৫ ফুট এবং কখনো কখনো তার চেয়ে বেশী লম্বা হয়ে থাকে। বেত গাছে ফুল ধরার আগে গাছ থেকে এক ধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ আসে।
আর তাতেই পিঁপড়া, মৌমাছি, ভিমরুল এই রস খেতে বেত গাছে ভিড় জমায়।

বেত গাছের ফলকে অঞ্চলভেদে বেতফল, বেওুন, বেথুন, বেথুল, বেতগুটি, বেওুইন ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। ভেজা ও জংলা নিচু ভূমিতে ভাল জম্মে। গাছ চিকন ও লম্বাটে ও কাটাযুক্ত হয়ে থাকে।এটি ঝোঁপ ঝাড় আকারে বেড়ে উঠে ।
এক গাছের সাথে অন্য গাছ প্রায় সংযুক্ত অবস্থায় থাকে। একটি গাছ ধরে টান দিলে প্রায় সব গাছ নড়ে ওঠে। চৈত্র মাসে আঙ্গুরের মত থোকায় থোকায় ধরে।
বাংলাদেশের একটি বিলুপ্ত প্রায় গাছ আর ফল। ২-৩ দশক আগেও আমাদের দেশের গ্রাম-গঞ্জের বনজঙ্গলে ও নিচু ডোবার ধারে বেত গাছ দেখা যেত।

বেত ফল গোলাকার বা একটু লম্বাটে গোলাকার আঁশে ঢাকা ছোট ও কষযুক্ত টক – মিষ্টি ফল। বীজ অত্যন্ত শক্ত হয়ে থাকে। কাচা ফল সবুজ বর্ণের, পাকলে সবুজাভ ঘিয়ে অথবা সাদা রং এর হয়ে থাকে। এর প্রতিটি থোকায় ২০০টি পর্যন্ত ফল হয়। ফল পাকে মার্চ – এপ্রিল মাসে। ইহা অপ্রচলিত ফল হলেও অনেকের কাছে খুবই প্রিয়। বিশেষত শৈশবের দুরন্ত পনার এক অনুসর্গ এই বেত ফল ।

www. hellojanata.com 

আগের মত বেতুন বা বেত ফল আর চোখে পড়ে না। বাংলাদেশে প্রায় এক বিপন্ন উদ্ভিদ ও ফল। বেত গাছ এখন দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
শুকনো বেত দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প জাতীয় জিনিসপত্র তৈরি করা হয়।
বেত দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পগুলো হলো, চেয়ার টেবিল, মোড়া, ডালা, কুলা, চাঙ্গাড়ি, ঢুষি, হাতপাখা, চাইলোন, টোকা, গোলা, ডোলা, টোপা, চাঁচ, ধামা, বই রাখার তাক, সোফা, দোলনা ও ফুলদানিসহ নানা কাজে এর কদর রয়েছে।
বেত গাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। এগুলো দৃষ্টিনন্দন, টেকসই, মূল্যবান, নান্দনিক এবং প্রাকৃতিক। বেত একটি মূল্যবান টেকসই ও সকল শ্রেণীর দ্রব্য। জীব বৈচিত্র্য রক্ষাথে রক্ষার্থে এ দেশে অধিক পরিমানে রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণে যন্তবান হওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশে মাটির গুনে এখানে হাজারো তরুলতার সমাহার। নদীবাহিত পলি আর বৃষ্টিপাত আমাদের দেশকে দিয়েছে এক উর্বর ভূমি।

দেশে রয়েছে ৫হাজারের বেশী প্রজাতির বন্য গাছপালা।বাংলদেশের সিলেট অঞ্চলে প্রচুর বেত গাছ পাওয়া যায় । ঢাকার গ্রীন রোডে বেতের সামগ্রীর আলাদা নাম ডাক আর আকর্ষণ আছে । কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে অনেক বন্য গাছ গাছড়াই এখন বিলুপ্তির পথে আবার অনেক বিদেশি গাছের আগ্রাসনেও হারিয়ে যেতে বসেছে এই বুনো প্রজাতি।

আমাদের নিজস্ব গাছ পালা নিয়ে তেমন গবেষণা হচ্ছে না। আবার বিদেশী ফলের গাছ, কাঠের গাছ ও ফুলের গাছ রোপণ এবং চাষের জন্য গ্রামবাংলার মেঠোপথ ও প্রাকৃতিক বন ব্যবহার করা হচ্ছে।
অনেকে বিদেশি ফল চাষাবাদে মানুষকে অনুপ্রেরণা দেওয়া হচ্ছে । এতে করে দেশি গাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের কবিরাজ, আদিবাসীরা ও গ্রামবাংলার লোকজন এখনো নানা ঔষধ এবং ফলের জন্য দেশীয় গাছ পালার ওপরই নির্ভরশীল।

বেতফল ছোটবেলার এক অতি কাঙ্ক্ষিত ফল।বেত ফল পরিপক্ক হলেই বেত ঝাড়ে হানা দিত গ্রামের দুরন্ত ছেলে ও মেয়ের দল। কাটাঁর আঘাত সহ‍্য করে বেত ফল নিয়ে আসতো।
এ দেশের সকল কবিই দেশের প্রকৃতি ও গাছ পালার জয়গান করেছেন। মনে করেছেন বেত ফলকে !
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাস তাঁর’হায় চিল’ কবিতায় লিখেছেন –
হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদোনাকো উড়ে-উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে!
তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে;
পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চ’লে গেছে রূপ নিয়ে দূরে;
আবার তাহারে কেন ডেকে আনো?

ফলের বাইরের খোসা ফেলে যখন রসালো অংশটা হাতে আসতো। তখন কিশোর ও কিশোরীরা সবার সাথে মহা আনন্দে ভাগাভাগি করে খেত।
গ্রামবাংলায় বেতের কচি পাতা তরকারি হিসাবে খাওয়া হয়। বেত ফল লবন ও মরিচ দিয়ে ভর্তা করে খেতেও খুব মজার। বর্তমান প্রজম্মের ছেলে ও মেয়েদের অনেকেই জানে না বেত ফল কি?



মহসিন আলী মনজু।।
লেখক, সাংবাদিক ।।
ফুলবাড়ি প্রতিনিধি ।
ফুলবাড়ী,
কুড়িগ্রাম ব্যুরো ।।

হ্যালো জনতা ডট কম ।।
hellojanata,com
hellojanata350.blogspot.com



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।