বাঙলা বানানে ভাইরাস-- ১৮-- আবদুল হাকিম ।।

 ## A hellojanata.comPresentation. 





বাঙলা বানানে ভাইরাস।।

১৮
আবদুল হাকিম ।।

প্রথম লেখা – ২০০৩
সঙস্করন – ২০২১

সাহিত্য সঙস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক ” নতুন দিগন্ত ” পত্রিকার প্রথম বর্ষ দ্বিতিয় সঙখ্যায় (জানুয়ারি – মার্চ ২০০২) প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ” বাংলা বানানে অন্যায় হস্তক্ষেপ ” প্রবন্ধে আরও বলতে চেয়েছেন যে, ইঙরেজি ভাষায় কোন আধুনিকায়ন বা প্রমিতকরন কখনো হয়নি । তারা এটা পছন্দ করেনা । কিনতু বাঙলা ভাষা’তো অন্য কোন ভাষার পদাঙ্ক অনুসরন করেনা । 

www. hellojanata.com

অন্য কোন ভাষা যদি তার অজস্র অসঙ্গতি যুগ যুগ ধরে পুষে রাখে, তাই বলে কি বাঙলাকেও পুষে রাখতে হবে ? সে কি কখনো আধুনিক হবেনা ? বাঙলা ভাষার আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে সুধু দৃষ্টিভঙ্গি আর মানসিকতা পরিবর্তন করাই যথেষ্ট । ব্যাকরন আর ধ্বনিতত্বের কঠিন আবর্তে থেকে আধুনিকায়ন সম্ভব নয় । এজন্য চাই ইচ্ছেসক্তি বা বিপ্লব । এই বিপ্লব না ঘটালে বাঙলা ভাষায় শুদ্ধ আর অশুদ্ধ পাসাপাসি চলতেই থাকবে অনন্ত কাল । বানান নিয়ে বিভ্রান্তির শেষ হবে না কোনদিন । অথবা প্রতিটি বাঙলা ভাষাভাষিকে ভাষায় পন্ডিত হতে হবে । আর তাই কি কখনো সম্ভব ? প্রয়োজনে অভিধান বা ব্যাকরন পরিবর্তন বা সঙসোধন করা যায়, কিনতু সময়ের সাথে সাথে ভাষার আধুনিকায়ন ঠেকানো, বালির বাধ দিয়ে খরস্রোতা নদিকে ঠেকিয়ে রাখার মতই বৃথা পন্ডস্রম । এখানে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র একটি উদধৃতি উল্লেখ করা যায় । তিনি বলেছেন – ” নদীর গতিপথ যেমন নির্দেশ করে দেয়া যায় না, ভাষাও তেমনি । একমাত্র কালই ভাষার গতি নির্দেশ করে । ভাষার রীতি ( স্টাইল ) ও গতি কোন নির্দিষ্ট ধরা বাঁধা নিয়মের অধীন হতে পারেনা । ”

আবার সাহিত্যগুরু সৈয়দ শামসূল হক তাঁর ” মার্জিনে মন্তব্য ” বইটির ৩০৩ পৃষ্ঠায় বলেছেন, – ” যে – বাংলা ভাষা এখন আমরা ব্যবহার করছি তার চাল ও চলন ক্রমাগত পরিবর্তিত কাল ও অভিজ্ঞতার কারণেই বদলে যাচ্ছে, গেছে – রবীন্দ্রনাথ থেকে তো অনেক বদলে গেছে বলেই আমার স্থির বিশ্বাস । ” এখানে ” দৈনিক জনকণ্ঠ ” – এর একুশে ফেব্রুয়ারি সুবর্ন জয়ন্তি ২০০২ সঙখ্যা’র পৃষ্ঠা ১৪ তে মহবুবুল হক রচিত প্রবন্ধ – ” বাংলা বানান সংস্কার ও প্রমিতকরণের অর্ধশতক ” থেকে একটা উদাহরন দেয়া যেতে পারে । তিনি লিখেছেন, – ” ১৯৩০ – এর দশকে বাংলা বানানের নিয়ম প্রণয়নে উদ্যোগী ভূমিকা রাখেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । তাঁর অনুরোধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বানানবিধি প্রণয়নে এগিয়ে আসেন । বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োজিত বানান সমিতির সুপারিশ হিসেবে বাংলা বানানের নিয়ম প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ -৩৭ সালে । রক্ষণশীল কিছু পণ্ডিত এর বিরোধিতা করেছিলেন । তবে রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের মত জনপ্রিয় লেখক ঐ নিয়ম অনুসরন করে বানান লিখতে সম্মত হলে ঐ নিয়ম চালু করার অনুকুল পরিবেশ তৈরী হয় । ১৯৩৭ এর পরে প্রকাশিত সব অভিধানে ঐ বানান বিধি গৃহীত হওয়ায় বানানে মোটামুটি শৃঙ্খলা আসতে থাকে । ” তাহলে দেখা যাচ্ছে , প্রয়োজনে অভিধান সঙস্কার করা যেতে পারে । সেই মতে ব্যাকরনও সঙস্কারযোগ্য ।
রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্র উভয়ই ছিলেন মুলত সাহিত্যিক । ভাষাবিদ হিসেবে তাঁদের আমরা প্রথমেই চিহ্নিত করিনা । তখন কিনতু অনেক বড় বড় ভাষাবিদ বা পন্ডিত ছিলেন , যাদের নাম এবঙ অবদান আমরা বহুদিন স্রদ্ধার সাথে স্মরন করব । কাজটি কিনতু তাঁরাও করতে পারতেন । কিনতু পারেননি । পেরেছেন কবি সাহিত্যিকরাই । মনে হয় রবীন্দ্রনাথ আজ বেচে থাকলে বাঙলা ভাষা অনেক ধাপ এগিয়ে এক সহজ সরল ও ঝামেলামুক্ত আধুনিক ভাষায় পরিনত হত, কারন তাঁর কলমের উপর খোঁচা দেবার ধৃষ্টতা আজ পর্যন্ত কারো হয়নি । কবি সাহিত্যিকদের কোন সিমাবদ্ধতা নেই । তাদের কলম মুক্ত । তাদের ভাবনা অবারিত । মুক্তচিন্তা ছাড়া সুধু ভাষাই না, কোন কিছুরই প্রসার ঘটেনা । এগিয়ে যেতে হলে খাঁচা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতেই হবে । আর এজন্যে মস্তিষ্ক চর্চার পাসাপাসি একটু হৃদয়ের চর্চারও প্রয়োজন ।
আমরা যারা বিদ্যাসাগর মহাসয়ের “ আদর্শ লিপি “ দেখেছি বা পড়েছি, তাদের হয়তো স্মরন থাকতে পারে কয়েকটি অক্ষরের কথা, যা সময়ের প্রয়োজনে আজ বিলুপ্ত । সময় স্থির নয় । সময়ের প্রয়োজনে আরও কিছু অক্ষর যে ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হবে না, তা কে বলতে পারে ? তাই আজ সময় এসেছে বাঙলা ভাষায় ঈ ঊ ণ ং এই চারটি অক্ষরের আদৌ কোন প্রয়োজন আছে কি না, তা ভেবে দেখার । সাথে সাথে শ আর ক্ষ অক্ষর দুটির কথাও ভেবে দেখা দরকার । এই অক্ষরগুলো বাদ দিলে যদি বানান বিভ্রাট আর ভুল হওয়া থেকে বাচা যায় তবে বাদ দেয়াই’তো ভালো । আর অক্ষর বাদ দেবার কাজটি আপনার আমার কাউকেই করতে হবে না । সময়ই করে দেবে । আমি সেই সময় আসার একটু আগেই বলে ফেললাম, এই আর কি । সময়ের প্রয়োজনে ভাষা সকল বাঁধ ভেঙ্গে তার নিজস্ব গতি খুজে নেবেই । – ( চলবে )


আবদুল হাকিম ।।
লেখক ।।
বাল্টিমোর, ইউ এস এ ।।
# হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
## তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ।।

হ্যালো জনতা ডট কম ।।
hellojanata. com .

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।