‘বৈমানিকের পাণ্ডুলিপি-৩৫-উড়ন্ত বিমানে চিকিৎসা। বাঙালী বৈমানিক রেহমান রুদ্র।

 ## A hellojanata.com Presenttaion .






‘বৈমানিকের পাণ্ডুলিপি-৩৫-উড়ন্ত বিমানে চিকিৎসা। ।বাঙালী বৈমানিক রেহমান রুদ্র।

উড়ন্ত বিমানে চিকিৎসা।            রেহমান রুদ্র।   

 

অতীতের আকাশ ভ্রমনের সাথে বর্তমান ভ্রমনের রূপ বদলে গেছে। মাঝেমধ্যে এয়ারক্রাফটের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়া স্বাভাবিক বিষয়। উড্ডয়নে সক্ষম না হলে এভিএশনের ভাষায় এসব যান্ত্রিক সমস্যার টাইটেল দেয়া হয়। এটাকে বলে “নো-গো”। এ বিষয়টা তদারকি করার জন্য বেশ বড়সড় এক ম্যানুএল রয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে পার্ক করে রাখা বিমানের দরোজা খোলা অবস্থায় যাত্রীরা আসন গ্রহন করে দরজা বন্ধ হবার পরে উড্ডয়নের আগমুহুরত পর্যন্ত কোন যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে আবারো পারকিং স্থানে ফিরে আসতে হয় তাঁর চিকিৎসার জন্য। এটাও “নো- গো”। একবার আকাশে উঠে যাবার পরে যদি কেউ অসুস্থ হয়, সেটার জন্য রয়েছে অন্য নিয়ম। বিষয়টা শুনতে সিম্পল মনে হলেও এর রেজাল্ট এয়ারলাইনের জন্য অগুনিত সমস্যার সৃষ্টি করে। 



   www. hellojanata.com

এই যেমন, যাত্রীদের পরবর্তী ফ্লাইট কানেকশন যদি মিস হয় তবে এয়ারলাইনকে তার খেসারৎ দিতে হয়। যাত্রীর অসুস্থতার কারনে উড়ন্ত অবস্থায় যদি ডাইভারসন নিয়ে পথিমধ্যে অন্য এক এয়ারপোর্টে অবতরন করতে হয় তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সত্যিকারে এটাকে অপারেশনাল ডিযরাপশন বলা হয়ে থাকে। প্রতিটি মেডিক্যাল কেইস অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হয়। অসুস্থতার বিষয়টি আপেক্ষিক। মানুষের শরীর বলে কথা।    

মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে যাবার উদ্দেশ্যে একে একে যাত্রীগণ বিমানে পদার্পণ করছে। ভোর চারটা বাজে এলারম দিয়ে ঘুম থেকে উঠতে হয়েছিল। এই সাতসকালে ড্রাইভ করতে ইচ্ছা করছিলনা, তাই সময় বাঁচাতে উবার ডেকে একেবারে অপারেশন সেন্টারের সামনে চলে এলাম। ভোরবেলা অনেক এয়ারক্রাফটের ডিপারচার থাকে। কফিশপে লম্বা লাইন দেখে ব্রিফিং শেষে বিমানে চলে এলাম। বিমানের গ্যালিতে অনেক ব্যস্ততা। ক্যাবিন স্টাফ যাত্রীদের আগমনী ড্রিংকের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কাপ ভর্তি চা নিয়ে  ককপিটে কাজে লেগে গেলাম। ব্রিফিং, তার সাথে টেকনিক্যাল বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেষ করতে হল। সবকিছু নিয়মমাফিক চলছে।  

অনটাইম ডিপারচারের জন্য সকল এজেন্সির একনিষ্ঠ কর্মদক্ষতার সমন্বয় খুব জরুরী।  আজ যাত্রার নির্ধারিত সময়ের আগেই সবকিছু রেডি হয়ে গেল। এশিয়া ও তার পূর্বদিকের বহু দেশের যাত্রীরা এক হয়ে আজকের ভ্রমনে যাত্রা করছে। বিভিন্ন ফ্লাইটের কানেকশনে এরা এসেছে। এমনও দেখা যায়, অনেক যাত্রী ইতিমধ্যেই হয়ত ভ্রমনের চব্বিশ ঘণ্টা পার করে দিয়েছেন।    

সবকিছু ঠিকমত গুছিয়ে আকাশপাখি নিয়ে ভূমি ছেড়ে উড়ে চললাম। শীতের শুরুতে পাহাড়গুলোতে কুয়াশা লেপটে আছে। ইরাক সীমান্ত পেরিয়ে টার্কির আকাশে রয়েছি। ইস্তাম্বুলের সাথে তখন ভি এইছ এফ রেডিও কানেকশনে রয়েছি। ক্যাবিনে তখন ব্রেকফাস্ট সার্ভিস শেষের দিকে। চা কফি পর্ব চলছে। বেশ শক্তিশালী বাতাসের বিপরীতে চলছি। হেড উইন্ড একশ ছাড়িয়ে গেছে। মাউনটেন ওয়েভের সাথে হেডউইন্ড যুক্ত হওয়ায় বিমানের ঝাঁকুনি শুরু হয়ে গেছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সীট বেল্ট বাঁধার এনাউন্সমেন্ট করা হল। আপাতত চা কফি অথবা যে কোন হট বেভারেজ সারভ করা থেকে ক্যাবিন স্টাফ বিরত থাকবে। বহু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে যাত্রী নিজেই টার্বুলেন্সের কারনে গরম চা কফি ফেলে শরীরের স্কিন জ্বালিয়ে ফেলেছে।    

এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোলারকে টার্বুলেন্সের কথা জানিয়ে দিলাম। একটু পরেই ক্যাবিন থেকে ইন্টারকমে কল এলো। জানতে পেলাম একজন যাত্রী বলছে, তার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। পেটের উপরের দিকে অনেক ব্যাথা। ইতিমধ্যে একবার বমি করেছে। যাত্রি নাকি গত পনের ষোল ঘণ্টা কিছু খায়নি। তার মধ্যে বিমানে এসে খালি পেটে অরেঞ্জ জুস খেয়েছে। ক্যাবিন সুপারভাইজারকে যাত্রীর সমস্ত তথ্যাবলি নিয়ে ককপিটে আসতে বললাম।  

নিয়ম হচ্ছে, যে কোন যাত্রীর শারীরিক অসুস্থতার প্রাথমিক পরীক্ষা সংক্রান্ত খুঁটিনাটি খবর নিয়ে একটা প্রেস্ক্রাইবড ফরম ফিলাআপ করতে হয়। এখানে রুগীর মেডিক্যাল হিস্ট্রি, তাপমাত্রা, প্রেসার কিংবা কোনধরনের মেডিসিন সে খায় কিনা, ক্রনিক কোন রোগ আছে কিনা ইত্যাদি লিখতে হয়।   

এদিকে দশমিনিটের মত পেরিয়ে গেছে। বুঝতে পারছি অসুস্থ যাত্রী নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। তখনি ক্যামেরা ভিউ দিয়ে দেখতে পেলাম ক্যাবিন সুপারভাইজার ককপিটের দিকে আসছে। ডোর ওপেন বাটনে চাপ দিয়ে তাকে ঢুকতে দিলাম। সুপারভাইজার কিম, কোরিয়ান মেয়ে। চোখেমুখে উৎকণ্ঠা পরিস্কার ভাবে দেখা যাচ্ছে। জানতে পেলাম, অসুস্থ মহিলা যাত্রীটি অল্পক্ষনের জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। বিমানে আরোহীদের মধ্যে এনাউন্সমেন্ট করে একজন ডাক্তারের সন্ধান পাওয়া গেছে। উনি রুগীকে দেখছেন তার কি সমস্যা।   

বিমান থেমে নেই, সে তার জেট স্পীডে উড়ে চলেছে। পর্তুগীজ কো পাইলটকে আকাশ পথের নিকটবর্তী নিরাপদ সব এয়ারপোর্টের চার্টগুলো ইলেকট্রনিক ফ্লাইট ব্যাগে বের করে রাখতে বললাম। লম্বা যাত্রাপথের জন্য বিমানে একশত টনের উপরে জ্বালানি তেল নিয়ে রাওনা করেছিলাম। মেডিক্যাল ইমারজেন্সি নিয়ে এখন জরুরি অবতরণ করতে হলে অনেক তেল আকাশে ফেলে দিয়ে বিমান ল্যান্ডিং এর উপযোগী করে নামাতে হবে। অনির্ধারিত এয়ারপোর্টে নামতে হলে অনেক প্রটোকল রয়েছে। রুগীর  সমস্ত তথ্যাবলি স্যাটেলাইট ফোনে আয়ারল্যান্ডে অবস্থিত মেডিক্যাল সেন্টারের অভিজ্ঞ এভিএশন মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। ক্যাবিন স্টাফ সকলে ফার্স্ট এইডের ব্যাপারে ট্রেনিং প্রাপ্ত। আয়ারল্যান্ডে বসে থাকা নার্স ও ডাক্তার রোগীর চিকিৎসার ব্যাপারে ফাইনাল ডিসিশন দেবে। বিমান ডাইভারসন করতে হলে, তাও পাইলটকে জানাবে। ওরা এয়ারলাইনের অপারেশন কন্ট্রোলের সাথে সমন্নয় রেখে এ ধরনের সিন্ধান্ত দিয়ে থাকে। 

www. hellojanata.com

বিমানের ঝাঁকুনি কিছুটা কমে এসেছে। ইস্তাম্বুলের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার বা এটিসি কন্ট্রোলার তাদের এয়ারস্পেস থেকে রুমানিয়াতে হস্তান্তর করল। নিরাপত্তার কারনে ইউক্রেনের আকাশে প্রবেশ করা যাবেনা। রুগী ও নিরাপদ এয়ারপোর্ট সম্পর্কে পুরো তথ্য না জানা পর্যন্ত এটিসি কন্ট্রোলারকে বিমান ডাইভার্সন সম্পর্কে বা মেডিক্যাল ইমারজেন্সি নিয়ে কথা বলা যাবেনা।  

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় অসুস্থ যাত্রীর পাশের সীটে বসা কেউ ক্যাবিন স্টাফদের খবর দেয়। তখন সে স্টাফ অন্য স্টাফদের বিষয়টা অবহিত করে। তাদের মধ্যে একজন রুগীর প্রাথমিক অবস্থা সম্পর্কে ফ্লাইট ক্যাপ্টেনকে অবহিত করে। ক্যাপ্টেন ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতি মোতাবেক বিমানকে তার স্বাভাবিক যাত্রাপথে পরিচালনা করে অথবা ডাইভারসনের ব্যাপারে অগ্রসর হয়।  জানা গেল, অসুস্থ যাত্রী কথা বলতে পারছে। যাত্রি হিসাবে যে ডাক্তার দেখছিলেন তার মতে অসুস্থ যাত্রীর হাইপারটেনশন, ডাইবেটিক ও কলেসট্রল সমস্যা রয়েছে। পুরো বিষয়টি স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডের ডাক্তারকে জানানোর পরে কি কি ওষুধ খেতে হবে তা বলে দিল। বিমানের ভেতরে রাখা ইমারজেন্সি মেডিক্যাল বক্সে এসব ওষুধ পাওয়া যাবে। ক্যাপ্টেনের অনুমতি ছাড়া এই বক্স খোলা নিষেধ। তাছাড়া ওষুধ খাবার আধঘণ্টা পরে আবারো তাদের কল করে রুগির অবস্থা সম্পর্কে আপডেট জানানোর অনুরধ করল।   


 


সমস্ত বিষয় অপারেশন সেন্টারে জানিয়ে দিলাম। কম্পাসের কাটা পশ্চিমমুখী রয়েছে। নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছানোর আশা নিয়ে বিমান ছুটে চলেছে। ওষুধ সঠিকভাবে কাজ করছে যাত্রীর দেহে। আর কোন  কমপ্লিকেশন হয়নি। স্যাটেলাইট ফোনে আয়ারল্যান্ডের ডাক্তারকে বিষয়টা জানিয়ে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।                        

রেহমান রুদ্র ।।

# লেখক।।
#প্রবাসী বাঙালি বৈমানিক ।।
# ছবি লেখকের ক্যামেরায় তোলা   ।।
# বিধি নিষেধের কারনে অনেক কিছুই লিখতে পারেন না লেখক ।।
সে কারনে লেখক ও হ্যালো জনতা দুঃখ প্রকাশ করছে ।।
# লেখকের সব লেখা আমাদের ব্লগে প্রচারিত ।।
# হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
হ্যালো জনতা ডট কম ।।
ফাইল ফটো ।।
hellojanata. com Presents ।।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।