বলাকা মন। রেহমান রুদ্র।

 ## A hellojanata.com Presentation.


বলাকা মন।

রেহমান রুদ্র।

লম্বা ছুটির পর প্রথম ডিউটি পড়ল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট এর লস এঞ্জেলেস সিটিতে। কভিডের সময়কাল বুঝি দীর্ঘ হতে যাচ্ছে। নেতিবাচক অর্থনীতির সাথে এভিএশন সেক্টরকে ভাইরাসটি নাস্তানাবুদ করে ফেলেছে ঠিক তবে নানামুখী সাহসী উদ্যোগের মাঝে ধিরলয়ে সেক্টরটিকে তার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।। কয়মাস আগেও অ্যাটলান্টিক পাড়ি দেবার রুট নিয়ে সমস্যা ছিলনা। এখন লক্ষ্য করা যায় গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এই রুটে এয়ারক্রাফটের ব্যস্ততা বাড়ছে। অ্যামস্টারডাম থেকে টেকঅফ করেছি। সাথে দুজন সিনিয়ার কো পাইলট। এটা মাল্টি পাইলট অপারেটিং সেক্টর। ওখান থেকে একদিন পরে বেলজিয়ামে ফেরত আসতে হবে। সহকর্মী বৈমানিকদের একজন ডাচ আর অন্যজন ব্রাজিলিয়ান। দুজনেই বেশ প্রফেশনাল।

www. hellojanata.com

আলাপচারিতায় কথা প্রসঙ্গে জানতে চাইল জাতীয় বিমান সংস্থার খবরাখবর। বিমান এখন কোন অবস্থায় আছে। এয়ারক্রাফটের সংখ্যা কত। বিদেশী পাইলট হায়ার করছে কিনা। বইমানিকদের মাঝে এগুলো কমন প্রশ্ন ও কথোপকথন। একটা এয়ারলাইন সম্পর্কে জানতে হলে এসব বেসিক প্রশ্ন সবাই করে থাকে। যে এয়ারলাইনে কাজ করছি, এখানে পৃথিবীর প্রায় দেড়শ জাতীয়তার বৈমানিক একসাথে কাজ করছে। কর্পোরেট রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং এর মাধ্যমে একটা প্রফেশনাল হারমনি সৃষ্টি করা হয়েছে যেন পাবলিক ডিলিঙ্গ বা বিজনেসে কোনপ্রকার নেগেটিভ ইম্প্রেশন না পড়ে। প্যাসেঞ্জার ফ্লিটের সাথে সাথে এই সংস্থা বিজনেস এক্সিকিউটিভ আর কারগো অপারেশনে প্রচুর সাফল্য লাভ করেছে। এর মধ্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসাবে কার্গো বুকিং এর জন্য থার্ডপার্টি ইলেক্ট্রনিক বুকিং দ্বারা সারা বিশ্বকে কানেক্ট করতে যাচ্ছে।

www. hellojanata.com

সহকারী পাইলটদের বিমানের কথা বলতে গিয়ে অতীতে হারিয়ে গেলাম। বহুবছর আগের কথা। তখন কলেজে পড়ছি। মেজমামা ডাক্তার মানুষ। তিনি তখনও ব্যাচেলার। চট্টগ্রাম মেডিক্যালে কাজ করছিলেন। লিবিয়াতে চাকরির সুযোগ পেয়ে ওখানে চলে গেলেন। কবছর পরে দেশে ফিরছেন বিয়ে করার জন্য। বাংলাদেশ বিমানে ত্রিপলি দুবাই হয়ে ফিরে এলেন একমাসের ছুটিতে। সবার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে এসেছেন। ভাগ্যে জুটল একটা প্যান্ট পিস আর বিমানের ইন ফ্লাইট ম্যাগাজিন। কাপড়ের চাইতে বেশি খুশি ছিলাম ঐ ম্যাগাজিন পেয়ে। তখন ইন্টারনেট কি জিনিস কারো ধারণার মধ্যে ছিলনা। ম্যাগাজিনের প্রতিটি ছবি খুঁটিয়ে দেখেছি আর লিখাগুলো বারবার পড়েছি। একটা ছবিতে দেখলাম মতিঝিল বিমান অফিসের সামনে কি সুন্দর শুভ্র ধবল বলাকার মনুম্যানট। কেমন এক আগামির অনুভুতি। বোধকরি আকাশে ওড়ার সাধ ওখান থেকেই জন্ম নিয়েছিল।

ম্যাগাজিনে বিমানের নেট ওয়ার্কের মধ্যে ডটেড লাইনে দেখানো ছিল লস এঞ্জেলেস সিটির অবস্থান। তখন কল্পনা করতে পারিনি একদিন এই আকশের সাথে মিতালী করে হাজারো মাইল পাড়ি দিয়ে এখানে আসতে পারব। তখন ঢাকায় বেইলি রোডে বাসা ছিল। কয়েকজন বন্ধু নিয়ে মতিঝিল গিয়েছিলাম বলাকা দেখতে। সুনসান শহরে ব্যস্ততা বলে কিছুই ছিলনা। রিকশায় বেইলি রোড থেকে কাকরাইল হয়ে বিমান অফিস যেতে বড়জোর দশমিনিট লাগত। সিকিউরিটি গার্ডকে বলেকয়ে নিচতলায় ঢুকে অবাক হয়েছিলাম। কি সুন্দর সাজানো গোছানো অফিস। সবার স্মার্ট ইউনিফর্ম দেখে বিমানের প্রতি আগ্রহ আরও বেড়ে গেল।

মনে করতে পারি সেসময় ঢাকার রাস্তায় বিমানের গাড়ী বেশ গর্বের সাথেই চলত। কালের পরিক্রমায় কেমন করে যেন বিমানে জয়েন করে গেলাম। নানা ধরনের ট্রেনিং শেষে একদিন যাত্রীসহ বিমান নিয়ে আকাশে উড়ে গেলাম। সে আবেগের অনুভুতি আক্ষরিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা।

পূর্ব ইউরোপের মেয়ে ক্যাবিন সুপারভাইজার স্যানড্রা ইন্টার কমে ক্যাবিনের অবস্থা সম্পর্কে খবর আপডেট করল। বিজনেস ক্লাস যাত্রীদের ব্রেকফাস্ট সার্ভিস প্রায় শেষের পথে। জানিয়ে দিলাম আনুমানিক একঘণ্টার মধ্যে অবতরন শুরু করব। ক্যাবিন সিকিউর করার প্রস্তুতি হিসাবে ল্যান্ডিং টাইম আপডেট করে চিফ পাসার বা ক্যাবিন সুপারভাইজারের সাথে কোঅরডিনেট করতে হয়।

এমন এক সময় ছিল যখন বিমানে প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের ট্রলিতে করে কোর্স বাই কোর্স সার্ভিস দেয়া হত। বলতে গেলে ওটা ছিল পাঁচ তারকা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। লন্ডন হিথরো কিংবা ব্যাংকক সিঙ্গাপুর ফ্লাইটে প্রথম শ্রেণীতে সবসময় প্যাসেঞ্জার উপচে পড়ত। অপারেশন ,ক্যাবিন স্টাফ, বিমান ক্যাটারিং,অথবা ট্রাফিকসহ প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা আর কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রম প্রশংসনীয়। বলতে গেলে প্রত্যেকেই ছিল প্রফেশনাল। সে সময়টা সত্যিই গর্ব করার মত ছিল।


এরমধ্যে অ্যাটল্যান্টিক ছেড়ে এসে আইসল্যান্ড গ্রিনল্যান্ড পেরিয়ে নর্থ পোল ক্রস করে ক্যানাডার আকাশ সীমায়। তারপর যুক্তরাষ্ট্রের একেবারে পশ্চিমে ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলেস সিটিতে। বিশাল এ আকাশযান ল্যান্ডিং করতে এয়ারপোর্ট, আবহাওয়া ও অন্যান্য অপেরাশনাল বিষয়গুলো হিসাবনিকাশ করে ক্যাপ্টেন যদি মনে করে থাকে কো পাইলট ল্যান্ড করতে পারবে, তাহলেই সে এ দায়িত্ব কো পাইলটকে দিয়ে থাকে। আজকের ফ্লাইটের দুজন সহকারি পাইলট বেশ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তাই তাদের একজনকে দায়িত্ব দিলাম বিমান ল্যান্ড করাতে। সে ভীষণ খুশি হোল। বিশেষ করে উইন্টার সিজনে স্নো কিংবা কুয়াশাচ্ছন্ন এয়ারপোর্টে এদের এ দায়িত্ব দেয়া একেবারে নিষেধ। তখন দেখা যায় দু চার সপ্তাহ পেরিয়ে যাচ্ছে অথচ কো পাইলট বিমান ল্যান্ড করার সুযোগ পাচ্ছেনা।


এয়ারক্রাফটের টেকনিক্যাল বিষয় ছাড়াও আলাপচারিতায় সব বৈমানিকদের যে কোন এয়ারলাইন সম্পর্কে আগ্রহ থাকে। সেভাবে বাংলাদেশের বিমানসংস্থা নিয়ে সহকারি পাইলটদের মধ্যে বেশ আগ্রহ দেখলাম। প্রশ্নের উত্তরে তাদেরকে জানালাম আমাদের জাতীয় এয়ারলাইন আগে অনেক বিদেশী পাইলট নিয়োগ করত। তাদের কথার উত্তর দিতে গিয়ে বললাম, এটা ক্যারিয়ার প্ল্যানিং এর বিষয়। কমান্ড বোর্ড মিটিঙে এধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এক এয়ারক্রাফট থেকে অন্য এয়ারক্রাফটে রেটিং নেয়ার সময় সে স্থান পুরন করতে দেখা যায় বিদেশী পাইলটদের নিয়োগ দিতে হচ্ছে। বর্তমানে যে সংস্থায় কাজ করছি তা পৃথিবীর প্রথম সারীর এয়ারলাইন। ভাল লাগে এই ভেবে, আজ ক্যারিয়ারের এ স্থানে আসতে পারার পেছনে বিমানের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি দেশের পতাকাবাহী বিমান সংস্থার সকল স্তরের কর্মচারীদের। মনে এখনো স্বপ্নেরা হাতছানি দেয়। বলাকা শক্তিশালী ডানা নিয়ে আদিগন্ত উড়ে যাবে দেশ মহাদেশের প্রান্তরে।



বিশাল এ আকাশ পাখি নামতে শুরু করেছে। মাত্র সল্ট লেইক সিটি ছেড়ে এলাম। লস এঞ্জেলেসের স্কাইলাইন চোখে পড়ল। এটা বেশ হেপেনিং সিটি। বিখ্যাত হলিউড ফিল্ম স্টুডিও এখানে অবস্থিত। হাল্কা মেঘের চাদর সরে যেতেই পাহাড়ের উপরে লিখা “হলিউড” পরিস্কারভাবে দেখা গেল। তরুন বয়সে দেখা বিমানের ম্যাগাজিনে লস এঞ্জেলেস সিটির ডটেড লাইন একদিন সলিড লাইনে পূর্ণতা পাক, এটাই হৃদয়ে লালন করছি।

রেহমান রুদ্র।

ক্যাপ্টেন, বোয়িং-৭৭৭ ও বোয়িং ৭৮৭ ।

রেহমান রুদ্র ।।
# প্রবাসী বাঙালি বৈমানিক এবং লেখক ।।
# হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
## তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ।।
## চাকরি গত বিধিনিষেধের বেড়াজালে তিনি অনেক কিছুই লিখতে পারেন না।
সে কারনে লেখক এবং হ্যালো জনতা দুঃখিত ।।
হ্যালো জনতা ডট কম ।।
hellojanata. com .
——————
## ~~~~~~~ ভুলতে না পারার গল্প ~~~~~~~
## লক্ষ্য রাখুন –’ভুলতে না পারার গল্প’-কেমন ছিল আজকের এই দিনটি?১৬ই ডিসেম্বর-আমাদের সেই মহান একাত্তুরে-! – প্রকাশিত হবে ১৬ই ডিসেম্বর সকালে।। ##



—————

হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
https://hellojanata350.blogspot.com/
# Copy and paste to your browser .
আমাদের ব্লগ —-Subscribe our blog .
https://hellojanata350.blogspot.com/
Copy and paste to your browser .
Follow us on —-
# facebook –
@ https://www.facebook.com/hellojanata/
#Twitter–
@ @BinMostanjir
# inastagram —
@ 121kamalbd
# linkedin
@ https://www.linkedin.com/feed/

## hellojanata.com ##

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।