‘বৈমানিকের পাণ্ডুলিপি-৩৪-ভোলা ।বাঙালী বৈমানিক রেহমান রুদ্র।

 ## A hellojanata.com Presentation. 


‘বৈমানিকের পাণ্ডুলিপি-৩৪-ভোলা ।বাঙালী বৈমানিক রেহমান রুদ্র।

ভোলা ।

রেহমান রুদ্র।

শীতের শুরু। ইউরোপ এ এই সময়ে বৃষ্টি ধীরেধীরে তাপমাত্রাকে নিচের দিকে টেনে আনতে থাকে। ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন এসেছি। শহরটির আরবান প্ল্যানিং আর ডেনিশ আর্কিটেকচারের জন্য সুনাম রয়েছে। সাতসকালে ল্যান্ড করার পর থেকে বৃষ্টি পিছু ছাড়ছে না। তাপমাত্রা দুই ডিগ্রী থেকে শুন্যতে উঠানামা করছে। গত পাচদিন ধরে অনবরত ফ্লাই করছি। এমন হিমশীতল আবহাওয়ায় শরীরে ক্লান্তি জড়িয়ে যাচ্ছে। হোটেলে এসে গরম পানিতে গোসলের পর চোখ খোলা রাখা সম্ভব হচ্ছিলনা। ধবধবে সাদা বিছানায় কম্ফর্টারের ভেতরে ঢুকে গেলাম।

www. hellojanata.com
অনুভব করছি সেলফোন ভাইব্রেট করেই চলেছে। ক্লান্তি আর অবসাদ নিয়ে পাক্কা ছয় ঘণ্টা ঘুমালাম। খিদের টান চেগিয়ে উঠেছে। জিন্স আর জ্যাকেট চাপিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে এলাম। কভিডের যন্ত্রণায় রেস্টুরেন্ট তাদের সার্ভিসের সময় সংকুচিত করেছে। আজকাল আবার ওমিক্রন নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। আগেভাগে যাওয়া ভালো। রাস্তা ক্রস করে নদীর পাশ দিয়ে হেটে গেলে পনের মিনিটের মধ্যে মার্কেটের কেন্দ্রে পৌঁছে যাওয়া যায়। ডেনিশ ভাষায় এই ডাউন টাউন সিটি সেন্টারকে এরা অনেকটা এভাবে উচ্চারন করে, “ইন্দলা” । তখনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ে চলেছে। ব্রিজ ক্রস করলে আধুনিক বাড়িঘর ফেলে শপিং এরিনাতে যেতে হয়। একটা বাড়ির সামনে পুলিশের একটি গাড়ি সাথে একটি এ্যাম্বুলেন্স দেখে ধারনা করছিলাম হয়ত কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ শহরে এসেছি বহুবার কিন্তু খুব কম সময় এমন পুলিশের গাড়ি কিংবা এ্যাম্বুলেন্স চোখে পড়েছে। এমনও হতে পারে, হয়ত বাড়িতে কোন ক্রাইম ঘটেছে। যে কোন আধুনিক দেশে পুলিশের ইমারজেন্সি কল সেন্টার নাগরিকদের যে কোন আইনি সাহায্য দিতে প্রস্তুত।
পাশ দিয়ে যাবার সময় দেখলাম, এম্বুলেন্সে একজন অসুস্থ মানুষকে তোলা হচ্ছে। পোষা কুকুরটি পারলে লাফ দিয়ে এ্যাম্বুলেন্সে উঠে পড়বে, এমন অবস্থা। দেখলে বুঝা যায়, কি ভীষণ টান তার মনিবের জন্য। বলা বাহুল্য, এসব দেশে এনিম্যাল রাইট অনেক বেশি। গৃহপালিত পশুদের যত্নের কোন ত্রুটি নেই। পশ্চিমা দেশগুলোতে গেল কবছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে রাস্তাঘাটে থাকা মালিকবিহিন কুকুরদের উদ্ধার করে বিমানে নিয়ে আসছে তাদের দেশে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে অথবা কোন অরগেনাইজেসনের মাধ্যমে কুকুরগুলোকে নিয়ে আসা হয়। টেলিভিশন আর ইউটিউবে এদের নিয়ে অজস্র ভিডিও দেখা যায়। আগ্রহি মানুষ এসব কুকুরকে নিজেদের পারিবারিক মেম্বার হিসেবে আশ্রয় দেয়।
নেকড়ে প্রজাতির ডিএনএ কোডিং থেকে কুকুর বেরিয়ে এসেছে প্রায় পনের থেকে চল্লিশ হাজার বছর আগে। গবেষণাকারীদের ধারনা, কুকুরদের ইমশন মানুষের ইমশনের কাছাকাছি। মানুষ তার ব্রেনের দ্বারা যেভাবে আবেগি হয়ে উঠে ঠিক তেমনি একিই ভাবে কুকুরের মধ্যে ইমশন আর ভালবাসার ফিলিং তৈরি হয়। গবেষণায় প্রমান হয়েছে, একটি কুকুরের মধ্যে যে ইমশন তৈরি হয় তা দু থেকে আড়াই বছর বয়সের মানব শিশুর সাথে তুলনীয়।
সেন্টারে পৌঁছে পূর্ব পরিচিত রেস্টুরেন্টে বুফে ডিনারে শরিক হয়ে গেলাম। রেস্টুরেন্টের নাম, সুলতান। এটা টার্কিশ রেস্টুরেন্ট। বুফেতে খাবারের কমতি নেই। এখানে বিফ কোফতার সাথে একেবারে কচিকচি ঢেঁড়স দিয়ে কারী করা হয়েছে। চিকেনের অনেক আইটেম। সালাদ বার সাজানো হয়েছে অনেক কিছু দিয়ে। ছবি তোলার কথা মনের মাঝে আসতে খেয়াল করলাম সেলফোন হোটেলে রেখে এসেছি। কি আর করা। খাবারে মনযোগী হলাম।
তৃপ্তি নিয়ে খাবারদাবারের পাঠ শেষ করলাম। রেস্টুরেন্টে ঢোকার মুখে দেখেছি হাতের গ্লভস, মাফলার আর নানাধরনের উলেন টুপি বিক্রির জন্য সাজিয়ে রেখেছে। একটা কালো রঙের টুপি হলে ভাল হয়। দোকানে ঢুকে বেশিক্ষন বাছাবাছি করতে হলনা। পছন্দমত পেয়ে গেলাম। ব্যস্ত মার্কেট ছাড়িয়ে আবারো হাল্কা ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে পথচলা। এখানে বেশিরভাগ অফিস বিল্ডিং প্রাগৈতিহাসিক মডেলের। এরা এগুলো অক্ষত রেখেছে। বাহ্যিক রঙ দেখলে মনে হয় আঠারো শতকের শুরুতে রয়েছি। ব্রিজ ক্রস করতে গিয়ে হিমশীতল বাতাসের ঝাপটায় ফ্রজেন হয়ে যাবার অবস্থা। ব্রিজ শেষে আর দুটো ট্রাফিক সিগ্ন্যাল, তারপরেই হোটেল।
নিজ রুমে ফিরে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি ছোটভাইয়ের ম্যাসেজ। জরুরী বিষয়, কথা বলতে চায়। ফোন কানেক্ট করতেই ছোটভাই দিপুর গলা বেশ ভারী শুনাচ্ছিল। বুঝলাম কিছু একটা ঘটেছে। খারাপ খবরগুলো সবসময় তার একটা নিজস্ব ভঙ্গি নিয়ে আসে। আগেভাগে আঁচ করা যায়। দিপু শুধুমাত্র ভাইয়া বলে চুপ করে আছে, কিছু বলছেনা।
“ কি হয়েছে বলে ফেল।“
যা ঘটেছে তা যত তাড়াতাড়ি জানতে পারা যায়, তত দ্রুত কিছু একটা করার অবকাশ থাকে। তখনও ধারনা করতে পারছিলামনা কি ঘটেছে। কথা বলতে শুরু করেছে সে। যা শুনলাম তা ঘুণাক্ষরে ভাবতে পারিনি এমন ঘটনা ঘটবে।
কিছুদিন ধরে সে একটা কুকুর পালত। ওটা নিজেই কোত্থেকে এসে বাড়ি পাহারা দেবার কাজে লেগে গেছে। দিপুকে খুব পছন্দ করত। বাড়ি ফিরতে রাত যত গভীরই হোক, কুকুরটি ওর জন্য জেগে থাকত। ছোটভাই দিপু সবসময় হাতে করে কিছু খাবার কুকুরটির জন্য নিয়ে আসত। গতরাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
বাড়ির আঙ্গিনা পেরিয়ে আলাদা কিচেন। কুকুরটি ওদিকে অপরিচিত কাউকে যেতে দিতনা। বাড়ি পাহারা দেবার সাথে ওটা একটা বাড়তি কাজ। দিপু ওর নাম দিয়েছে-
“ভোলা”।
গতরাতে বাড়ি ফিরে এসে তাকে নাম ধরে ডেকে কোন উত্তর না পেয়ে এদিকওদিক খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিল। কিচেনের ওদিকে গিয়েও তার দেখা পেলনা। এমন কখনও হয়নি। দিপুর পায়ের শব্দ পেলেই আগেভাগে বাড়ির গেইটে দৌড়ে যেত। আজ তার কি হল। কোথায় গেল সে।
শেষমেশ পাওয়া গেল পুকুর পাড়ে।
মৃত।
ভোলার পা গুলো আঘাতের কারনে ফুলে আছে। গলাটা ধারালো কিছু দিয়ে কোপ মেরে অর্ধেক করে ফেলেছে কেও। কি ভীষণ নিষ্ঠুরতা। নির্জীব পড়ে আছে ভোলার মৃত শরীর।
দিপু কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বারবার একটি কথাই বলছিল,
“এ নিরীহ প্রাণীটি কি দোষ করেছে ভাইয়া”।

রেহমান রুদ্র ।।
# লেখক।।
#প্রবাসী বাঙালি বৈমানিক ।।
# ছবি লেখক সংগ্রহীত  ।।
# বিধি নিষেধের কারনে অনেক কিছুই লিখতে পারেন না লেখক ।।
সে কারনে লেখক ও হ্যালো জনতা দুঃখ প্রকাশ করছে ।।
# লেখকের সব লেখা আমাদের ব্লগে প্রচারিত ।।
# হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
হ্যালো জনতা ডট কম ।।
ফাইল ফটো ।।
hellojanata. com Presents ।।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।