প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ২৪ - প‍্যাডেল চালিত রিক্সার দূর্দিন!! # আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

## A hellojanata.com Presentation . 


 'প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ২৪ - 




প‍্যাডেল চালিত রিক্সার দূর্দিন!!
# আকরাম উদ্দিন আহমেদ।



প‍্যাডেল চালিত রিক্সার দূর্দিন!!
রিক্সা এ দেশের মানুষের খুব প্রিয় বাহন। খোলামেলা বলে চলতে আরাম, খুব দুরে না হলে যে কোন গন্তব্যস্থানে যাওয়া যায় ভাড়াও অধিকাংশ সময় নাগালে থাকে, পরিবেশ দূষণ হয়না বললেই চলে, ধীর গতিতে চলে বলে হাওয়া খেতে খেতে যাওয়া যায়। রিক্সা ভ্রমন কারো কারো কাছে রোমাঞ্চেরও বিষয়। সব মিলিয়ে রিক্সা চড়তে পছন্দ করেন না এমন লোক খুব একটা পাওয়া যাবে না।

ব্যস্ত নাগরিক জীবনের এক অপরিহার্য বাহন।  রিক্সা ছাড়া নাগরিক জীবনের কথা যেনো বাংলাদেশে কল্পনাও করা যায় না। নিম্নবিত্ত বহু মানুষের ঘামে ভেজা ভরসার স্থল এই প‍্যাডেল চালিত রিক্সা। হয়তো বা আয়ের একমাত্র উৎস। মধ্যবিত্তদের সাধ ও সাধ্যের এক অপূর্ব সমন্বয়।
www. hellojanata.com  
একমাত্র রাজধানী ঢাকা শহর ব‍্যতিত বিভাগিও জেলা ও উপজেলা শহর গুলোতে এখন আর মানুষে টানা প‍্যাডেল চালিত রিক্সা নজরে পরেনা। মোটর ইঞ্জিন চালিত রিক্সার দৌরাত্ম্যে যা এখন লোকচক্ষুর অন্তরালে এবং কালের প্রবাহে যা এখন বিলুপ্তির পথে।

রিক্সা বা সাইকেল রিকশা একপ্রকার মানবচালিত মনুষ্যবাহী ত্রিচক্রযান, যা এশিয়ার, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে প্রচলিত একটি ঐতিহ্যবাহী বাহন। জাপানী রিকশাগুলো অবশ্য তিনচাকার ছিল না, সেগুলো দুই চাকায় ভর করে চলতো, আর একজন মানুষ ঠেলাগাড়ির মতো করে টেনে নিয়ে যেতেন, এধরনের রিকশাকে 'হাতেটানা রিকশা'ও বলা হয়। যা এখনো কোলকাতা অলিগলিতে অল্পকিছু নজরে পরে।

রিক্সা বাংলাদেশের এক জনপ্রিয় বাহন। শহুরে জীবনের রাস্তা-ঘাটের অধিকাংশই এর দখলে থাকে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা কিন্তু “রিক্সার রাজধানী” হিসেবেও বেশ পরিচিত ছিল! ঢাকায় গিয়েছেন কিন্তু রিক্সায় উঠেননি এমন লোক বোধকরি পাওয়া যাবেনা। এক সময় ঢাকা শহরকে ঘুরে ফিরে দেখার জন্য এই বাহনই ছিল অনবদ্য। এখনো অনেক বন্ধু যুগলকে দেখা যায় মনের আনন্দে আলাপচারিতায় বিভোর ক্লান্ত দুপুর অথবা সন্ধ্যায় এই মন্থরগতির বাহনে করে সময় পার করে দিতে।

রিকশার ইতিহাস অনেক পুরোনো। বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর ক্লান্ত চলাচল চোখে পড়ে। চীন, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালোয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশেই এর মন্থর চাকা অবিরাম ঘুরতে দেখা যায়। দেশ ভেদে রিক্সার আকার, গঠন প্রকৃতি বিভিন্ন হয়। আবার বিভিন্ন দেশে একে বিভিন্ন নামেও ডাকা হয়ে থাকে।
www. hellojanata.com - 

রিক্সার উদ্ভব হয় ১৮৬৫ থেক ১৮৬৯ সালের মাঝে। পালকির বিকল্প হিসেবে এর উত্থান। প্রথম কে এই বাহনের প্রচলন করেছিলেন তা নিয়ে নানা মতভেত রয়েছে।

১৯০০ সাল থেকে কলকাতায়ও এর ব্যবহার শুরু হয়। প্রথমদিকে এতে শুধুমাত্র মালপত্রই আনা নেয়া করা হত। ১৯১৪ সাল থেকে কলকাতা পৌরসভা এতে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেয়। এরই মাঝে মিয়ানমারের রেঙ্গুনেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে রিক্সা। ধারণা করা হয় যে, বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ১৯১৯ বা, ১৯২০ সালের দিকে মায়ানমার হয়েই রিক্সার আগমন ঘটে। তবে ঢাকায় রিক্সা কিন্তু রেঙ্গুন থেকে আসেনি। এসেছিল কলকাতা থেকে,নারায়নগঞ্জ এবং ময়মনসিংহের পাট ব্যবসায়ীদের কল্যাণে। তারা তাদের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য কলকাতা থেকে ঢাকায় রিক্সা নিয়ে আসেন। কোন কোন সূত্রমতে ঢাকাতে প্রথম রিক্সার লাইসেন্স দেয়া হয় ১৯৪৪ সালের দিকে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জ্বালানি সংকটের কারণে জাপানে রিক্সার প্রচলন ব্যাপক বেড়ে যায়। যদিও এখন আর জাপানে রিক্সা দেখা যায় না, জাদুঘর ছাড়া।

আমাদের দেশের অনেক রিক্সার পেছনেই এক ধরণের পেইন্টিং বা, চিত্র আঁকানো থাকে। এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। এই রিক্সা চিত্রগুলো আমাদের গর্বের বিষয়। এটিকে আমাদের চিত্রকলার সম্পূর্ণ আলাদা একটি ধারাও বলা চলে।

নাগরিক জীবনের এই উপকারী বাহনটির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে যেমন, দ্রুতগতির যানবাহনের পাশাপাশি এটি চলতে অক্ষম, এটি যানজট সৃষ্টি করে, রিক্সাওয়ালারা আনাড়ি, অদক্ষ, অভদ্র, ইত্যাদি! তারপরেও রিক্সাই আমাদের বেশিরভাগ মানুষের প্রধান ভরসা । ঢাকায় একজন রিক্সাচালক দৈনিক আট-দশ ঘন্টা গাড়ির কাল ধোঁয়া সেবন করে তার পরিবেশবান্ধব নিরপরাধ রিক্সাটি চালিয়ে শহরের চাকা ঘোরায় । আর তার দেশের টাকায় বিদেশি গাড়ি আমদানি হয় ‘পরিবেশ দূষণমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে । এটাই আমাদের নগরায়ন ও শিল্পায়নের মূলনীতি, আমাদের নিয়তি!

অথচ ২০১১ সালে বাংলাদেশে ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনের সময়ও বাংলাদেশের রিক্সার ঐতিহ্য বেশ ভালভাবে পৃথিবীবাসীর সামনে তুলে ধরা হয়। সেখানে প্রতিটি দলের অধিনায়করা রিক্সায় করে মাঠে উপস্থিত হন এবং  বিষয়টি বেশ প্রশংসিত হয়।

রিক্সা একটি পরিবেশ বান্ধব বাহন। কোনরকম বায়ু দূষণ ঘটায় না। এ ছাড়াও বহু মানুষ রিক্সা চালিয়ে তাদের জীবন, জীবিকা চালিয়ে থাকেন। এ প্রাচীন বাহনটি বর্তমানে বাংলাদেশের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এর আবেদন কমার বদলে দিনকে দিন মানুষের মাঝে বেড়েই চলেছে। যানবাহনগুলোর মাঝে রিক্সাকে বেশ নিরাপদ হিসেবেই বিবেচনা করা যায়। সবাই সচেতন হলে এবং সরকার এদিকে সুনজর দিলে একদিন রিক্সার সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব।


১৮/১২/২০২১

আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

লেখক ।।
কুড়িগ্রাম ।।
# জনাব আকরাম উদ্দিন আহমেদ হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয়  ।।
হ্যালো জনতা ডট কম।।
hellojanata. com .

হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
https://hellojanata350.blogspot.com/
# Copy and paste to your browser .
আমাদের ব্লগ —-Subscribe our blog .
https://hellojanata350.blogspot.com/


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।