বাঙলা বানানে ভাইরাস- ১৬ – আবদুল হাকিম ।।

 


বাঙলা বানানে ভাইরাস-

১৬ –
আবদুল হাকিম ।।

প্রথম লেখা – ২০০৩

সঙস্করন – ২০২১।। 

ভাষা চিরদিন এক রকম থাকেনি । যুগে যুগে আধুনিকায়ন হয়েছে । ভবিষ্যতেও হবে । জিবনের সব ক্ষেত্রে যদি আধুনিকায়ন হতে পারে, তবে ভাষার খেত্রে কেন নয় ? কবি হোমার বা মিলটনের ভাষা অথবা উপস্থাপনার সাথে গুন্টার গ্রাসের উপস্থাপনার পার্থক্যতো কিছু থাকবেই । চলচ্চিত্রের কথাই ধরা যাক । বিশ্ববরেন্য চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ” পথের পাচালি ” , আইজেনস্টাইনের ” ব্যাটলসিপ পটেমকিন ” বা হিচককের ” দি বার্ড ” ছবিগুলোর সাথে ” নো ম্যান্স ল্যান্ড ” ছবিটির তুলনা করলে বোঝা যাবে সময়ের সাথে সাথে চলচ্চিত্রের ভাষাও পরিবর্তিত হয় । ক্যামেরা, এডিটিঙ, চিত্রনাট্য বা মন্তাজের ব্যবহার, সব খেত্রেই যুগের সাথে হয়েছে আধুনিকায়ন । আধুনিকায়নের জন্য বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গিত শিল্পি দেবব্রত বিশ্বাস শান্তিনিকেতন কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছিলেন । হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ও হয়েছিলেন গোঁড়াদের কাছে বিতর্কিত । কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা বেসিদিন টেকেনি । আজ তাঁদের থেকে জনপ্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গিত শিল্পি ক’জন আছে ? কা’দের গান মানুষ বেসি শোনে ? রবীন্দ্রসঙ্গিতগুরু পঙ্কজকুমার মল্লিক, যার সামনে গান গাইতে তৎকালিন অনেক শিল্পিরই হৃদকম্পন শুরু হয়ে যেত, তাঁর গান শোনার জন্য আজ খুব কম স্রোতাই পাওয়া যাবে । অথচ সময়ের দিক থেকে খুব একটা দুরের না হয়েও দেবব্রত বিশ্বাস বা হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আরও বহুযুগ ধরে সঙ্গিত পিপাসুদের হৃদয় জয় করে টিকে থাকবেন সুধুমাত্র আধুনিকতার কারনে । গোঁড়ামিকে আঁকড়ে থাকার কারনেই নজরুলগিতি আজ অনেকটাই পিছনে পড়ে আছে । – যাকগে কথায় কথায় অন্য প্রসঙ্গে ঢুকে পড়েছি –


এখানে সাহিত্যগুরু সৈয়দ শামসূল হকের ” মার্জিনে মন্তব্য ” বইটি থেকে একটি উদাহরন দেয়া যেতে পারে । বইটির ১১৪ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, ” মানুষ মরণশীলতো বটেই, ভাষাও মরণশীল ; এমনকি বাংলা ভাষা বেঁচে থাকলেও যে ভাষায় আমরা এখনই কথা বলছি, লিখছি, সেটাও মরণশীল – এক ভাষাতেই নতুন ভাষার জন্ম হয় প্রতি যুগে ; বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষা মৃত হয়ে যায়, রবীন্দ্রনাথের গদ্যও আমাদের ব্যবহারের বাইরে চলে যায় । শেক্সপিয়রের নাটক তখনকার রাস্তার লোক বুঝতে পারলেও এখন অভিধান আর টিকার সাহায্য ছাড়া দুর্বোধ্য ঠেকে । সরল কথায় প্রজন্মের পর প্রজন্মে লেখকদেরই হাতে জন্ম নেয় এক ভাষার ভেতরেই নতুন ভাষা । এ বিষয়ে গুরু একজনের বরাত দিই । টি এস এলিয়ট তাঁর কোয়ারটেটস কাব্যের লিটল গিডিং পর্বে বলেছেন !

গত মৌসুমের ফল খাওয়া শেষে

শূন্য ঝুড়ি লাথি মেরে ফেলে দেয় পরিতৃপ্ত প্রাণী ।

গত বছরেরও শব্দবাক্য বস্তুতই গত বছরেরেই,

পরবর্তী বছরের শব্দবাক্য অপেক্ষায় থাকে কোনো আলাদা স্বরের। “– ।

আধুনিকায়ন ঠেকিয়ে রাখা যায়না । মানুষের জন্যই ভাষা । ভাষার জন্য মানুষ নয় । ভাষার জন্যেই ব্যাকরন, ব্যাকরনের জন্য ভাষা নয় । ভাষার আধুনিকায়ন কিন্‌তু ব্যাকরন বা ধ্বনিতত্ব অনুসরন করে কখনো সম্ভব হয়নি বা হবেওনা । এই কাজটি প্রধানত কবি সাহিত্যিক বা লেখকরাই করে এসেছেন । কারন, তাঁরা মুক্ত চিন্তার মানুষ । তাদের কলম অবারিত । আর তাই সাহিত্যের উপর ভর করেই যুগে যুগে ভাষার উত্তরন ঘটেছে । পক্ষান্তরে ভাষাবিদ বা পন্ডিতজন কঠিন নিয়ম-কানুনের গন্ডিতে আবদ্ধ । নিয়মের গন্ডি পেরিয়ে নতুন কিছু ভাবতে গিয়ে তারা শুদ্ধ অশুদ্ধের ভাবনায় তাড়িত হন অহর্নিসি । পন্ডিতরা সুধু ভাষাকে সঠিক ভাবে ধরে রাখার জন্যই শক্ত হাতে সর্বদা নিয়োজিত থেকেছেন । এই জন্যই উদ্ভব হয়েছিল ব্যাকরনের । ব্যাকরন বা ধবনিতত্ব প্রচলিত ভাষাকে সঠিক ভাবে ব্যবহারের দিক নির্দেশনাই দিয়ে থাকে । সক্ত হাতে অনেকটা রেফারির ভুমিকা পালন করে থাকে । কিনতু খেলার নিয়ম পরিবর্তন বা আধুনিকায়ন হলে, রেফারিকেও নতুন নিয়ম মেনেই চলতে হয় । নতুবা সেই রেফারিকে বিদায় নিতে হয় । পুরনো নিয়ম আকড়ে ধরে আধুনিকায়ন হয়না । এই পরিবর্তন বা আধুনিকায়ন সময়ের প্রয়োজনেই হয়ে থাকে । – ( চলবে )


আবদুল হাকিম ।।
লেখক ।।
বাল্টিমোর, ইউ এস এ ।।
# হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
## তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ।।

হ্যালো জনতা ডট কম ।।
hellojanata. com .
——————
## ~~~~~~~ ভুলতে না পারার গল্প ~~~~~~~
## লক্ষ্য রাখুন –’ভুলতে না পারার গল্প’-কেমন ছিল আজকের এই দিনটি?১৬ই ডিসেম্বর-আমাদের সেই মহান একাত্তুরে-! – প্রকাশিত হবে ১৬ই ডিসেম্বর সকালে।। ##

—————–——-

হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
https://hellojanata350.blogspot.com/
# Copy and paste to your browser .
আমাদের ব্লগ —-Subscribe our blog .
https://hellojanata350.blogspot.com/
Copy and paste to your browser .
Follow us on —-
# facebook –
@ https://www.facebook.com/hellojanata/
#Twitter–
@ @BinMostanjir
# inastagram —
@ 121kamalbd
# linkedin
@ https://www.linkedin.com/feed/

## hellojanata.com ##




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।