প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ২৫ - পকেট ঘড়ি আর দেখা যায়না # আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
## A hellojanata.com Presentation .
প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ২৫ -
পকেট ঘড়ি আর দেখা যায়না!!
# আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
পকেট ঘড়ি আর দেখা যায়না!
সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তথাপি সৃষ্টির আদি থেকেই মানুষ যে সময়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেই এগিয়ে নিয়েছে তার সভ্যতা আর ইতিহাস এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আর সময়ের হাত ধরে মানুষের এই এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গী হতেই যুগে যুগে নানা বির্বতনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে সময় দেখার যন্ত্র ঘড়ি।
www. hellojanata.com
প্রাচীনকালে কটা বাজে তা বলার উপায় ছিল না। কারন সে সময় ঘড়ি আবিষ্কার হয়নি। সময় দেখার বিষয়টা নির্ভর করতো সূর্যের অবস্থানের ওপর। সূর্যের অবস্থান দেখেই মানুষ ধারণা লাভ করতো সময় সম্পর্কে। সূর্য মাথার ওপর থাকলে হতো দুপুর আর মাটির কাছাকাছি থাকলে হতো সকাল বা বিকেল। সময়ের এ হিসেব চলেছে বহুকাল ধরে।
ঘড়ির ব্যবহার সর্বপ্রথম শুরু হয় সূর্যঘড়ির মাধ্যমে। কবে সর্বপ্রথম এই সূর্যঘড়ি আবিষ্কার হয়েছিল তা জানা যায়নি। তবে সবচেয়ে প্রাচীন যে সূর্যঘড়ি পাওয়া যায় তা খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ অব্দে মিশরে নির্মিত। সূর্যঘড়ির সমস্যা ছিল, এটি দেখে কেবল দিনের সময় বলা যেতো। সূর্য না উঠলে তাও বলা যেতো না।
ঘড়ি, ঘোড়া আর ঘুড়ি এই তিনটি শব্দের মধ্যে কোথায় যেন একটা উচ্চারণ গত যোগ আছে। অবশ্য এমনটা মনে হয়েছে আমার কানে শুনতে শুনতে। কারণ আমি না ব্যাকরণবিদ, না ভাষাবিদ
কোনোটাই নই। তবে ষাটের দশকে একজন ফিটফাট সিনিয়র সিটিজেনকে দেখতাম টুক করে বুক পকেটের চোরা পকেটে থাকা একটা ঘড়ি বের করে সময় দেখে নিতেন। তখন অবশ্য হাত ঘড়ির যামানা শুরু হয়ে গেছে। পকেটে লুকিয়ে রাখা ঘড়িটির নাম হচ্ছে পকেট ঘড়ি। বাঙালি বাবুদের আদ্দির গিলে করা পাজ্ঞাবী আর মালকোচা মেরে ধুতি পরে বুক পকেটে সোনার চেন ওয়ালা পকেট ঘড়ি না থাকলে বাবুয়ানাটাই মনে হয় অসমাপ্ত থেকে যেত। সাহেবরাও কম যেতেন না, তাদের কোটের বুক পকেটে থাকত পকেট ঘড়ি। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের কয়েক বছর পূর্বে আমার নানা হজ্ব করতে গিয়েছিলেন। তিনি ওখান থেকে ফেরার সময় একটি পকেট ঘড়ি নিয়ে এসেছিলেন। নানাকে দেখেছি ওটাকে মাঝে মাঝে দম দিয়ে অনেক সযতনে রেখে দিতেন। কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে তিনি ওটি সঙ্গে নিয়ে যেতেন। আমরা তা কৌতূহলভরে দেখতাম। উনার এক বিহারী বন্ধু ছিলেন ঘড়িটি তার খুব পছন্দ হয়ে যায়। তিনি নানার ঘড়িটি ক্রয় করতে খুব ইচ্ছা পোষণ করেন। নানা বিনা পয়সায় তাকে ঘড়িটি দিয়ে দেন। ঘড়িটি যে নানার খুবই প্রিয় ছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। ১৯২০ সালের পূর্বে অধিকাংশই ছিল পকেট ঘড়ি।
পরে হাতঘড়ি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। বাজারে প্রচলিত ঘড়ি মানে হাতঘড়ি, দেওয়াল ঘড়ি, ওয়াল ক্লক। অ্যাংলো সুইস- ক্যাভালরি, ফেবার লুবা, টি শট, ওমেগা, ওয়েস্ট এন্ড ওয়াচ, হেনরি স্যান্ডোজ। তারপর আশির দশকে আমাদের সময় এল হাত ঘড়ি-রিকো, সিকো।
ঘড়ি তৈরিতে সুইস সাহেবরা মাস্টার। তারপর জার্মানরা। এরপর জাপান, ব্রিটিশ, ফরাসি, আমেরিকানরাও ঘড়ি বানায়। তবে দুনিয়া জুড়ে সুইৎজারল্যান্ডের হাতঘড়ি বিশ্বজোড়া নাম তার সুইস মেড।
পকেট ঘড়ি রাখার জন্য পাঞ্জাবির বুক পকেটের পাশে কেটে ঘড়ি-পকেট বাননো হতো। ঘড়ি-পকেট হত ফতুয়ারও। সেই ফতুয়ার পকেটে ঘড়ি না রেখে কেউ কেউ দুই পাঁচ দশ টাকার নোট, কখনো একশো টাকার কারেন্সি নোটও লুকিয়ে ছুপিয়ে রাখতেন। আমরা যখন ইসকুলে পড়তাম চাইনিজ কাট সার্টের বুক পকেটে ঘড়ি পকেট রাখতাম অর্থাৎ চোরা পকেট রাখতাম পকেট মারের হাত থেকে বড় নোট গুলো সাবধানে রাখতে।
www. hellojanata.com -
ঘড়ি রাখার পকেট হত কোট আর শেরওয়ানিতেও। সোনা নয়ত রুপোর চেন পকেট ঘড়িতে ফিট করা থাকতো। রুপোর চেন ঝোলে বাইরে। রুপোর চেনে অনেক সময় সোনালী রংও করানো হত - যাকে সহজ-সরল ভাষায় তখন বলা হতো গিলটি করা। ছেলেদের পাঞ্জাবিতে লাগানোর সোনার বোতাম এর চেন এসব তো ছিলই, তবে আশির দশক থেকে পকেট ঘড়ি আর নজরে পরেনা।
সম্ভবত ভারতীয়'দেবদাস' ছবিতে শেষ বারের মত জ্যাকি স্রফ কে কাহিনীর প্রয়োজনে এমন একটি পকেট ঘড়ি ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছিল ।
বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি তো আর বসে থাকবেনা, মানুষের প্রয়োজন এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য নিত্য নোতুন আবিস্কার মানুষের জীবনকে করেছে গতিময়। সবশেষে কমপিউটার আর মোবাইল ফোনের আবিস্কার দুনিয়াটাকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল। মোবাইল ফোনে ঘড়ি যুক্ত হল। হাত ঘড়ি এবং দেয়াল ঘড়িতে এখন আর দম দেয়া লাগেনা। ড্রাইসেল ও লিথিয়াম ব্যাটারীর মাধ্যমে ঘড়ি চলে। পরবর্তীতে হাত ঘড়িতে এল বাড়তি সুবিধা এন্ড্রয়েডের অপারেটিং সিস্টেম। আর উপমহাদেশের এক সময়ের বাবুয়ানার পকেট ঘড়ি দাড়ায় বিলুপ্তির কাতারে।২৫/১২/২০২১।
আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
লেখক ।।
কুড়িগ্রাম ।।
# জনাব আকরাম উদ্দিন আহমেদ হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয় ।।
হ্যালো জনতা ডট কম।।
www. hellojanata.com -
হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
https://hellojanata350.blogspot.com/
আমাদের ব্লগ —-Subscribe/ follow our blog .
কুড়িগ্রাম ।।
# জনাব আকরাম উদ্দিন আহমেদ হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয় ।।
হ্যালো জনতা ডট কম।।
www. hellojanata.com -
হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
https://hellojanata350.blogspot.com/
আমাদের ব্লগ —-Subscribe/ follow our blog .
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন