'প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ২৮ ' –ঘুড়ি ও নাটাই!! # আকরাম উদ্দিন আহমেদ।।

  ## A hellojanata.comPresentation. 









প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ২৭ -
!!ঘুড়ি ও নাটাই!!
# আকরাম উদ্দিন আহমেদ।



ঘুড়ি ও নাটাই!!
ঘুড়ি ওড়ানো খেলা কেউ খেলেননি একথা বলার লোক হয়তো পাওয়া যাবেনা। আমাদের দেশের সকল শিশু কিশোর, ছেলে মেয়ে আবাল বৃদ্ধ বনিতার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতি একটা দূর্বলতা রয়েই গেছে।

ঘুড়ি এক প্রকারের হাল্কা খেলনা, যা সুতা টেনে আকাশে ওড়ানো হয়। পাতলা কাগজের সাথে চিকন কঞ্চি লাগিয়ে সাধারণত ঘুড়ি তৈরি করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন উপাদান ও নকশার রংবেরঙের কাগজের ঘুড়ি রয়েছে। বিশ্বজুড়েই ঘুড়ি ওড়ানো একটি মজার খেলা। এছাড়াও বহু দেশে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশে ঘুড়ি ওড়ানো একটি বিনোদনমূলক খেলা। বাংলাদেশে, বিশেষ করে পুরনো ঢাকায় পৌষ মাসের শেষ দিন, অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তিতে সাকরাইন উৎসবে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব পালন করা হয়। ১৪ জানুয়ারি হল আন্তর্জাতিক ঘুড়ি দিবস। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিশ্বকর্মা পূজার দিন ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা রয়েছে।

ঘুড়ির কথা মনে হলে বিশেষ করে শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়। লম্বা সুতো বরাবর ওই দূর আকাশে লাল-নীল-বেগুনি রঙের ঘুড়িতে আনন্দে মনটা নেচে ওঠে। মূলত মাটি থেকে নিচের দিকে সুতোয় টান দিলে আর ঘুড়ির ওপর বাতাসের শক্তি ঊর্ধ্বমুখী কাজ করলেই ঘুড়ি আকাশে উড়তে সক্ষম হয়। এই দুটি টান যতক্ষণ সমান থাকে ততক্ষণ ঘুড়ি আকাশে ওড়ে।
ঘুড়ির আবিষ্কার হয়েছিল ৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিসের ট্যারাস্টাস শহরে। সম্ভবত এই শহরের আর্কিটাস নামে এক ভদ্রলোক প্রথম ঘুড়ি তৈরি করেছিলেন। অনেকে বলেন, ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হান সিন নামে চীন দেশের এক সেনাপতি প্রথম ঘুড়ি তৈরি করেন। প্রথমদিকে সিল্ক কাপড় দিয়ে ঘুড়ি বানানো হতো। কাগজ আবিষ্কারের পর কাগজের ঘুড়ির প্রচলন হয়।
www. hellojanata.com

ঘুড়ি ওড়ানোর মধ্য দিয়ে নীল আকাশে ভেসে বেড়ানোর আনন্দ উপভোগ করা যায় বলে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে ঘুড়ি ওড়ানো শিশু-কিশোরদের একটা অতি জনপ্রিয় খেলা। ইউরোপ বা আমেরিকায় ঘুড়ি ওড়ানোর চল থাকলেও চীন, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এ খেলার জনপ্রিয়তা বেশি। অবশ্য ঘুড়ি বড়রাও উড়িয়ে থাকেন। ঘূড়ি দিয়ে সুতো কাটাকাটি খেলা হয়। এই প্রতিযোগিতায় একজনের ঘুড়ির সুতো দিয়ে আরেকজনের ঘুড়ির সুতো কেটে দিলে তাকে বলা হয় ভোকাট্টা বা কাইট ফাইট।
আমাদের দেশে তো এ প্রতিযোগিতা হয়ই বিশেষ করে পুরোনো ঢাকায়। আর জাঁকজমকভাবে এ প্রতিযোগিতা দেখা যায় থাইল্যান্ডেও। যদিও আকাশ পরিষ্কার থাকলে ও অনুকূল বাতাস পেলেই ঘুড়ি ওড়ানো যায়; তবুও পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই একটি বিশেষ দিনকেই ঘুড়ি দিবসরূপে পালন করা হয়ে থাকে। এ দিন সবচেয়ে বেশি ঘুড়ি আকাশে উড়তে দেখা যায়। চীন দেশে সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ ঘুড়ি দেখা যায়। এ দিন সব বয়সের নারী-পুরুষ ঘুড়ি উড়িয়ে থাকে। তারা মাছ, প্রজাপতি, ড্রাগন, পাখি, মানুষ, পরী, জাহাজসহ তিন শতাধিক রকমের ঘুড়ি বানাতে পারে তারা। খেলা ও উৎসবের পাশাপাশি ঘুড়ি ওড়ানোটা গবেষণায়ও কাজে লেগেছে বহুবার। উদাহরণস্বরূপ, ১৭৪৯ সালে আলেকজান্ডার উইলসন ঘুড়িতে থার্মোমিটার লাগিয়ে ঊর্ধ্বাকাশের তাপমাত্রা মাপার চেষ্টা করেছিলেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো, ১৭৫২ সালে বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন আকাশে একটি সিল্কের ঘুড়ি উড়িয়ে তার সাহায্যে প্রস্তুত বিদ্যুৎ ও আকাশের বিদ্যুৎ যে একই তা প্রমাণ করেছিলেন।
www. hellojanata.com
সাধারণত ঘুড়ি উৎসব কিংবা সাধারণ ঘুড়ি ওড়ানোর বিনোদনের স্বার্থে ঘুড়ি কাটাকাটি খেলায় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান সহ ভারতবর্ষের আশেপাশের দেশে মাঞ্জা দেওয়া সুতা ব্যবহৃত হয়। একেক জায়গায় মাঞ্জা দেওয়ার পদ্ধতি আবার একেক রকম। সুতায় মাঞ্জা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত প্রণালি হিসেবে সাধারণত লাগেঃ ভাতের মার, সাগুর গোলা, কাঁচের গুড়ার মিশ্রণ, রং, শিরিষের আঠা। এছাড়া জবা ফুলের পাতাও কোনো কোনো জায়গায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ঘুড়ির সুতায় মাঞ্জা দেয়ার ব্যাপারটা অন্য জেলায় কি নামে আছে জানি না? তবে আমাদের কুড়িগ্রামে এটাকে মাঞ্জা দেয়াই বলে। একটা পাত্রে সাগু,ভাতের মাড়ের সাথে সিদ্ধ করে তাতে কাঁচের গুড়ো, যা আগেই বালির মতো মিহি করে চূর্ন করা হয়েছে তা দিয়ে মিক্স করে সেই গলিত মিশ্রনের ভেতর দিয়ে সুতাকে এনামেল করা হয়।যা শুকোলে সত্যিই বেশ ধারালো হয়। নাটাই থেকে এটা যখন বাতাসের টানে সরসর করে যেতে থাকে তখন অসাবধানে কেউ হাত দিলে তার হাত কেটে যেতে পারে। আবার কারো ঘুড়ি ভো-কাট্টা হয়ে গেলে যখন এটি নেবার জন্য ছেলেপিলেদের মধ্যে টানাটানি হয় তখনও হাত কেটে যায়। মাঞ্জা সুতায় হাত কেটে গেলে হাত বেশ জ্বালা করে বা ব্যথা করে।

ঘুড়ির সুতো জ়ড়াবার জন্য ব্যবহৃত চরকা বিশেষ কে নাটাই অথবা লাটাই বলে। নাটাইয়ের দুই প্রান্তের দন্ড হাতে নিয়ে দ্রুত অথবা ধীর গতিতে সুতা পেচিয়ে ঘুড়ি ওড়ানো বা ঘুড়ি কাটাকাটি খেলা হয়।

অন্য দেশে খালি হাতেই ঘুড়ি ওড়ানো হলেও ঢাকাসহ সারা দেশে নাটাই দিয়েই ওড়ানো হয় ঘুড়ি। এখনকার নাটাইগুলো অনেকটা আগের মতোই। বাঁশের তৈরি নাটাইগুলো বেশ হালকা এবং মজবুত। নাটাইয়ের আকার ও আকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বানানো হয় ঘুড়ি।

শৈশবের স্মৃতিতে এই ঘুড়ির কাটাকাটি খেলা নিয়ে একটি মজার ঘটনা যা এখনো আমার মনকে নাড়া দিয়ে যায়।

আমাদের বাড়ির উত্তর পাশেই আমজাদ ভাইয়ের বাড়িতে ডাবলু নামে তার এক ভাগ্নে থাকতো। সে ছোটবেলা থেকেই নানা বাড়িতে নানীর আদরে প্রতিপালিত হচ্ছিল। ওর বাবা মা থাকত উলিপুরে। বয়স প্রায় চার পাঁচ বছর হবে। বেশ নাদুস নুদুস, চঞ্চল এবং মিশুক হওয়াতে ওকে সবাই বেশ পছন্দ করতো। সারাদিন সে দুষ্টুমি করে বেড়াতো। সবসময়েই মুখে সিনেমার গান লেগেই থাকতো। রাতে নানীর কাছে সারাদিনের দুষ্টুমির জবাবদিহিতা করতে হত এবং এজন্য তার কপালে শাস্তি জুটত। আমাদের কাছে তার শিশুসুলভ দুষ্টুমি বেশ ভালো লাগতো। আমাদের এবং ওদের নানা বাড়ির ঠিক পেছনেই ছিল বিস্তির্ণ ধানের মাঠ। মাঘ ফাল্গুন মাসের দিকে কৃষকেরা ধান কেটে নেওয়ার পর তা অনাবাদি পরে থাকতো। আমরা সে সময়টায় সারাদিনমান সেখানেই ঘুড়ি ওড়াতাম। সেদিনও যথারীতি আমাদের এক পরশী খেলার সাথী নাম তার পিশু ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। প্রায় এগারোটা বাজে। এদিকে পাশের বাড়ি থেকে ডাবলুর খোলা গলায় গানের কন্ঠ ভেসে আসছে। সে তাদের ছাদ বিহীন মুখ প্রসস্ত কুয়া টয়লেটে বসে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে গান জুড়ে দিয়েছে। "চুমকি চলেছে একা পথে"। আর খোলা আকাশে মনোযোগ দিয়ে দুই ঘুড়ির কাটাকাটি খেলা দেখছে। উত্তেজনার চরম মুহুর্ত, হঠাৎ সে চিৎকার করে বলছে, "পিশু ভাই গোত দে, গোত দে"। তারপরই ধুম করে একটি বড়সড় আওয়াজ আমাদের কানে এলো। আর কোন সারাসব্দ নেই। কিছুক্ষণ পরেই আবার স্থানীয় ভাষায় ডাবলুর মিনমিনে গলার আওয়াজ পাওয়া গেল, "নানা মুই পোচ্চোং" (নানা আমি পড়ে গেছি)। ওর নানা তো চিৎকার দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। কে আছেন বাঁচান আমার ছেলেটাকে। আমরা দৌড় দিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে ডাবলুদের বাড়িতে গেলাম। দেখি ওর নানা একটা পানি তোলা বালতির রশি নিয়ে বাড়ির পেছনে ওদের কুয়া টয়লেটের ভেতরে এক প্রান্ত ছুড়ে দিয়ে বলছে "ডাবলু তুই রশিটাকে শক্ত করে ধর"। ডাবলু ওর নানার কথা মতো শক্ত করে রশিটাকে আকড়ে ধরলে আমরা দুই তিনজন মিলে রশি টেনে কুয়া টয়লেট থেকে সারা শরীরে মল মাখানো ডাবলুকে তুলে আনলাম। তারপর প্রচুর পানি ঢেলে ওকে গোসলের ব‍্যবস্থা করালাম। সে যাত্রায় ডাবলু বেঁচে গেল। তবে ও যে ঢেঁকুর তুললে ওর মুখ দিয়ে দূর্গন্ধ পাওয়া যেত, এটা অনেকদিন ছিল।

ঘুড়ি ওড়ানোয় নির্মল আনন্দ পাওয়া যায় বটে,  তবে ঘুড়ি ওড়ানোর মজা নিতে গিয়ে এরকম হরিষে বিষাদ ঘটনার সংবাদ আমাদের দেশে হর হামেশাই শুনতে পাওয়া যায়। সুতরাং রেললাইনের পাশে কিংবা বাড়ির ছাদে ঘুড়ি ওড়ানোর ব‍্যাপারে আমাদের খুবই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।

আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
লেখক।
কুড়িগ্রাম।
১৫/০১/২০২২


আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
লেখক।
কুড়িগ্রাম।


লেখক ।।
কুড়িগ্রাম ।।
# জনাব আকরাম উদ্দিন আহমেদ হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয় ।।
হ্যালো জনতা ডট কম।।
www. hellojanata.com –

হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
hellojanata.com ..

https://hellojanata.com/
https://hellojanata350.blogspot.com/

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।