'প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ২৯ ' – পুতুল নাচ আমাদের ঐতিহ্য !! !! # আকরাম উদ্দিন আহমেদ।।

  ## A hellojanata.comPresentation. 





প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ২৯ -
পুতুল নাচ আমাদের ঐতিহ্য !!
# আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

পুতুল নাচ আমাদের ঐতিহ্য !!


শিশুরা খেলনা পুতুল নিয়ে খেলতে খেলতেই শুরু হয় তাদের শেখার সময়। শিশু মনে পুতুল বেশ প্রভাব বিস্তার করে। শিশুরা পুতুল খেলতে গিয়ে পুতুলের বিয়ে পযর্ন্ত দিয়ে থাকে। এই শিশুরাই এক সময় মেলায় এই পুতুলের নাচ দেখে বেশ পুলকিত হয়। ছোটবেলায় আমরা মেলায় অনেক পুতুল নাচ দেখেছি। একটা ছোট রঙ্গিন মঞ্চে যেখানে পুতুলনাচের কারিগর মঞ্চের পেছন থেকে সুতা কিংবা হাতে পুতুলগুলোর নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে কণ্ঠে হারমনিয়াম তবলায় গানের সুরে সুরে গল্প কাহিনী বলে যেতো এবং আমাদের নিয়ে যেত পৌরাণিক কোন কল্প কাহিনীর রাজ‍্যে। তখন আমরা সেই রাজ‍্যে কখনো নিজেকে রাজপুত্র অথবা রাজা ভাবতে শুরু করতাম। এভাবেই আমাদের শিশু মনে পুতুলের একটা প্রভাব পরতো। এই পুতুল নাচ দেখে আমরা বিমোহিত হয়ে যেতাম।

www. hellojanata.com

গ্রাম বাংলায় বছরের বিশেষ সময়ে উৎসব আয়োজনে দেখা মিলত পুতুল নাচের। পৌরাণিক কাহিনী, সামাজিক সচেতনতার মতো বিষয়গুলোতে বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা দিত পুতুল নাচ। ঐতিহ্যবাহী এ ধারাটি এখন বিলুপ্ত প্রায়। তবে তরুণদের অনেকেই আদি মাধ্যম হিসেবে এখনো ধরে রেখেছে লোকসংস্কৃতির এ উপাদানটি।

সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনই ছিল পুতুল নাচের আদি ধারা।
পুতুল নাচের উৎপত্তি কবে , কোথায় ও কিভাবে হয়েছে তার কোন সঠিক ইতিহাস এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি ৷ যদিও আবহমান কাল ধরে পুতুল নাচ বিনোদনের একটি অংশ ৷

ইউরোপে পুতুল নাচে সর্বপ্রচীন দেশ হল জার্মান ৷ এদের হাত ধরে একে একে রাশিয়া , জাপান , ব্রাজিল, ইটালি ,ফ্রান্স , মিশর , চীন , মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে পুতুল নাচ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ৷

প্রাচীন গ্রিসে খৃস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে পাপেট শো বা পুতুল নাচের প্রচলন হয়। দার্শনিক এরিস্টটলের লেখায়ও পুতুলনাচের উল্লেখ পাওয়া যায়। ভারতীয় উপমহাদেশে পুতুল নাচের প্রচলন ছিল প্রাচীনকাল থেকেই। ধারণা করা হয় আনুমানিক ষোলশ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে ভারতবর্ষে পুতুল নাচ শুরু হয়। এখন তার অনেকটাই বিলুপ্ত। তবে সংস্কৃতির আদি এই ধারা টিকিয়ে রাখতে বিছিন্নভাবে কাজ করছেন অনেক তরুণ।

আমাদের দেশে যখন টিভি চ‍্যানেল বলতে একমাত্র বিটিভি ছিল তখন বিটিভিতে শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান থাকত। একসময় শিল্পী মোস্তফা মনোয়ারের শিশুদের জন্য টেলিভিশনে 'আজব দেশে' অনুষ্ঠানে নিয়মিতভাবে তিনি 'বাঘা' ও 'মেনি' চরিত্র রচনা করে পাপেট প্রদর্শনী করেন। এছাড়াও USAID এর অর্থায়নে পাপেট সো 'সিসিমপুর' শিশুদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় ছিল।

পুতুল নাচকে একটি টোটাল আর্ট ফর্ম বলা যেতে পারে। যেখানে থাকে গল্প , কবিতা , অভিনয়, নাচ, গান , নাটক ,ভাষ্কর্য। তাছাড়াও থাকে দৃশ্যমান আর্টের সার্থক রূপ। পুতুল নাচের মাধ্যমে পৌরাণিক কাহিনী , পালাগান , নীতিকথা ,ধর্মকথা বা বাস্তব ঘটনাবলী তুলে ধরা হয় যা সমসাময়িক সমাজ ও মানুষকে সজাগ করে তোলে ৷

বাংলাদেশে এটি প্রচলিত একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। গ্রামীণ জনপদে আবালবৃদ্ধ বনিতার বিনোদনে বিশেষ করে শিশুদের বিনোদনে পুতুল নাচের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
www. hellojanata.com
ভারতীয় উপ-মহাদেশে বিপিন পাল প্রথম পুতুল নাচের প্রচলন করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার তিতাস নদীর কূল ঘেঁষে গড়ে ওঠা জনপদে কৃষ্ণ নগর নামে পল্লীতে বিপিন পালের জন্ম। বিপিন পাল তৎসময়ে সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পৌরানিক কাহিনী অবলম্বন করে পুতুল নাচ করতেন বলে জানা যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জনপদে আরো কয়েকজনের নাম জানা যায়, তারা হলেন জেলার কৃষ্ণ নগর গ্রামের গিরীশ আচার্য্য, মো. তারু মিয়া, ব্রাহ্মণ বাড়িয়া শহরের মেন্ডা বা মেরুড়া এলাকার ধন মিয়া, কালু মিয়া, মো. রাজ হোসেন ও পৌর শহরের কাজীপাড়া এলাকার শরীফ মালদার। ধন মিয়ার পুতুল নাচ দলের নাম ছিলো 'রয়েল বীনা অপেরা'। ধন মিয়ার পুতুল নাচ দেশে বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছিল। শিল্পী মােস্তফা মনােয়ারের সহায়তায় ধন মিয়া বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে পুতুলনাচ পরিবেশন করে ব্যাপক খ্যাতি লাভ করেন। পরবর্তীতে পুতুল নাচের মাধ্যমে কিভাবে আমাদের দেশের অসচেতন মানুষকে পরিবার পরিকল্পনায় উদ্বুদ্ধ করা যায় তা নিয়ে আমাদের জাতীয় পর্য‍্যায়ের এনজিও এফপিএবি ধন মিয়ার  সঙ্গে বিভিন্ন জনসচেতনমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে। ফলশ্রুতিতে জাতীয় পর্য‍্যায়ে এর প্রভাব পরে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার পুতুল নাচ সমাদৃত হয়। পরবর্তীকালে তিনি ভারত , রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পুতুলনাচ প্রদর্শনের সুযােগ লাভ করেন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুতুল নাচকে এনে দেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি। এ ছাড়াও সুমী বীনা পুতুল নাচ, ঝুমুর পুতুল নাচ দল পুতুল নাচ প্রদর্শন করে চলেছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। যতোদূর জানা যায়, পৌরানিক কাহিনী অবলম্বনে পরিচালিত পুতুল নাচ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনপদের এক ঐতিহ্য। বছরের বিশেষ সময়ে মেলা পল্লীতে পুতুল নাচ প্রদর্শন হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় পুতুল নাচ হয়ে থাকে।

বর্তমানে শিশুরা মোবাইল, কম্পিউটার, ফেসবুক, ইন্টারনেট এর ব্যবহারে হাতের মুঠোয় দিন অতিবাহিত করে। ফলে তাদের সৃজনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। তাদেরকে সৃষ্টিশীল হিসাবে গড়ে তুলতে চাইলে তাদেরকে আমাদের ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করাতে হবে। এতে তারা বিনোদনের সাথে শিক্ষণীয় তথ্যও জানবে। আর এক্ষেত্রে আমাদের দেশজ ঐতিহ্য পুতুল নাচ বিনোদন এবং শিক্ষা দুইদিকেই সমান প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে বলেই মনে হয়।

আকরাম উদ্দিন আহমেদ । 

লেখক ।

কুড়িগ্রাম ।

২২/১/২০২২। 




লেখক  ।
কুড়িগ্রাম  ।

# জনাব আকরাম উদ্দিন আহমেদ হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক । 

# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধমে প্রচারিত । www. hellojanata.com –

হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
hellojanata.com ..

https://hellojanata.com/
https://hellojanata350.blogspot.com/

মন্তব্যসমূহ

  1. খুব দারুন এক লেখা। লেখককে ধন্যবাদ দেই তাঁর এই গবেষণা ধর্মী লেখার কারনে। কামাল ।।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।