'প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৩০ ' – আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম !! # আকরাম উদ্দিন আহমেদ।।

 ## A hellojanata.comPresentation. 

প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৩০ -
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম!!
# আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম!!

কেউ বৃদ্ধাশ্রম পরিদর্শন করলে বুঝতে পারবেন যে, নিঃসঙ্গতাও মানুষের ঠিকানা হতে পারে। মানুষ কি আদতে এমন নির্জনতা চায় মনে মনে? আসলে মানুষ নিঃসঙ্গতা ছাড়া আর কীই–বা পায় জীবনে?
প্রত্যেকটি মানুষ সে তার নিজের মধ্যে ভীষণ একলা। আর এসব একলা মানুষেরও কোনো ঠিকানা আছে পৃথিবীতে, ভাবতেই অবাক লাগে।
www. hellojanata.com
প্রকৃতির আজব খেয়ালে মানুষ জন্মানোর পর থেকে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। পড়ালেখা শেষ করে সে স্বাবলম্বী হয়। তারপর বিয়ে করে সংসার। এর মাঝে বাবা-মায়েরও বয়স কিন্তু বাড়তে থাকে, কমতে থাকে শরীরের শক্তি, অবলম্বন হয়ে পড়ে সন্তানেরা। সংসারের হাল ধরে সকলের দায়িত্ব নেয় বাড়ির ছেলে। কিন্তু কীসের খেয়ালে অতীতের সব স্মৃতি বিলুপ্ত হতে থাকে ছেলের মাথা থেকে! চিন্তায় তখন নতুন আত্মীয় স্বজন, নিজের কেরিয়ার, নিজের ভবিষ্যত। ঘরের মাঝে জায়গা পায় অবলা পশুপাখিও। কিন্তু মস্ত ফ্ল্যাটে জায়গার কমতি পড়ে মা বাবার জন্য। এক সময়ের অবলম্বন মা-বাবা, সময়ের খেয়ালে বোঝা হয়ে পড়ে সন্তানের কাছে। অবশেষে মা-বাবার ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রমে। এই ধরণের অভিজ্ঞতা হয়তো এখনো আমাদের সমাজে সচরাচর দেখা যায় না, কিন্তু বৃদ্ধাশ্রমে না পাঠিয়ে কোনো সেবা-যত্ন ছাড়া ঘরের এক কোণে অবহেলায় পরম পুজোনীয়দের ফেলে রাখার মধ্যেও তো নেই কোনো প্রকার বাহাদুরি।

পৃথিবীতে প্রথম বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রাচীন চীনে। গৃহছাড়া অবহেলিত ও অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের এ উদ্যোগ ছিল শান রাজবংশের। খ্রিস্টপূর্ব ২২০০ শতকে পরিবার থেকে বিতাড়িত বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য আলাদা এই আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছিল এই শান রাজবংশ। প্রাচীন চীনে শান রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত বৃদ্ধাশ্রমের ধারণা বর্তমান সমগ্র বিশ্বে প্রসার লাভ করে।
www. hellojanata.com


পৃথিবীর প্রথম প্রতিষ্ঠিত বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আরাম আয়েশ ও বিনোদনব্যবস্থা নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের শুরু হলেও, আজো বৃদ্ধাশ্রম নামটি শুনলেই চোখের সামনে ধরা দেয় ক্রন্দনরত মায়ের মুখ, ম্রীয়মান বাবার দুর্বল চাহনি। নির্বাক হয়ে যায় রক্তের সম্পর্ক। মনে পড়ে যায় নচিকেতার বিখ্যাত গানের কলি-

"স্বামী স্ত্রী আর Alsatian, জায়গা বড়ই কম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম!"

বাংলাদেশে বৃদ্ধাশ্রমের ধারণা প্রবর্তন হয় ডা. এ. কে. এম আবদুল ওয়াহেদের হাত ধরে। বার্ধক্যে সবার জন্য শারীরিক-মানসিক সুস্থতা ও স্বস্তিময় জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ডা. ওয়াহেদের উদ্যোগে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান। সরকারি উদ্যোগে ১৯৮৫ সালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবন এবং পরে ১৯৯৩-৯৪ সালে সরকারি অনুদানে হাসপাতাল ও হোম ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠানটির ৫০টিরও বেশি শাখা রয়েছে। এ ছাড়া কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন- অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, ব্র্যাক, ইআইডি, প্রবীণ অধিকার ফোরাম প্রভৃতি প্রবীণদের কল্যাণে কাজ করে। এই সকল সংস্থা মূলত বৃদ্ধ বয়সে যাদের সহায় সম্বল নেই, তাদেরকে মাথায় রেখেই কাজ পরিচালনা করে।

বৃদ্ধাশ্রম আমাদের দেশে সংস্কৃতির অংশ না হলেও ইদানীং কিছুটা প্রয়োজন এবং অনেকটাই মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ। অনেক মা-বাবা তার সন্তান বা সন্তানের স্ত্রীর কাছ থেকে অবহেলা, অযত্ন, অবজ্ঞা, উপেক্ষা, মানসিক নির্যাতন, এমনকি কখনও কখনও দুর্ব্যবহারের শিকার হয়ে বাধ্য হয়েই আশ্রয় নেন বৃদ্ধনিবাসে অন্তত একটু সম্মান ও শেষ বয়সে শান্তিময় জীবনের জন্য। অনেক নামিদামি বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, চাকুরিজীবীও বৃদ্ধাশ্রমের স্থায়ী বাসিন্দা হতে বাধ্য হচ্ছেন।

তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অনেকের জন্য বৃদ্ধনিবাস বিকল্প হতে পারে। অনেক বয়োবৃদ্ধ আছেন যার সন্তান নেই, অথবা জীবনে বিয়েই করেননি, এমনকি নেই কোনো নিকটাত্মীয়, যাদের কাছে তিনি শেষ দিনগুলো কাটাতে পারেন। কারও কারও সন্তান চাকরির কারণে অবস্থান করে দেশের বাইরে স্থায়ীভাবে এবং পিতা-মাতাকে তাদের কাছে নেওয়াও সম্ভব হয় না আবার তারাও বিদেশে যেতে চান না। সন্তানরা টাকা-পয়সা পাঠাতে পারলেও পিতা-মাতাকে সময় দেওয়া তাদের পক্ষে আসলেই সম্ভব হয় না। তাদের জন্য বৃদ্ধনিবাস একটি ভালো ব্যবস্থা। থাকা-খাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে, শেষ জীবনের অবসর সময়টা কাটানোর সুযোগ করে দেয় এসব বৃদ্ধাশ্রম। এখানে যারা থাকেন, তারা সবাই মিলে একটা নতুন পরিবার গড়ে তোলেন। জুটে যায় অবসর সময়ে কথা বলার সাথী। দেখভালের দায়িত্ব নেন বৃদ্ধাশ্রমের সেবক সেবিকা। হয়ে যায় বৃদ্ধদের নোতুন ঠিকানা।

আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
লেখক।
কুড়িগ্রাম।
২৯/০১/২০২২।

 


লেখক  ।
কুড়িগ্রাম  ।

# জনাব আকরাম উদ্দিন আহমেদ হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক । 

# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধমে প্রচারিত । www. hellojanata.com –

হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
hellojanata.com ..

https://hellojanata.com/
https://hellojanata350.blogspot.com/

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।