প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৩২ – হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য নৌকা বাইচ!! # আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
## A hellojanata.com Presentation
প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৩২ –
হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য নৌকা বাইচ!!
# আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৩২ –
হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য নৌকা বাইচ!!
# আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য নৌকা বাইচ!!
একসময় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল নদী কেন্দ্রিক আর বাহন ছিল নৌকা। গ্রাম বাংলায় নৌ-শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্র। নৌকা বাইচ সমন্ধে গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের মাঝে জনশ্রুতি আছে। ইট-পাথরে গড়া আধুনিক সভ্যতার ভিড়ে গ্রাম-বাংলা থেকে ‘নৌকা বাইচের’ মতো ঐতিহ্যকে মানুষ ভুলতে বসেছে।
আবহমান গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি ও নিজস্বতা ধরে রাখতে প্রায় প্রতি বছরই আয়োজন করা হতো নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার। ছোটবেলায় আমদের রিভার ভিউ হাইস্কুলের পাশেই ধরলা নদীতে আমরা দেখেছি নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। শহর জীবনের কোলাহল ছেড়ে কিছুটা সময়ের জন্য দর্শনার্থীরা নৌকা বাইচ উপভোগ করেন এবং গ্রামীণ এই সংস্কৃতিকে বুকে লালন করে থাকেন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের সুষ্ঠভাবে বেড়ে উঠার জন্যই এই ঐতিহ্য আমাদের ধরে রাখা দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
বাইচের নৌকাগুলোর বিভিন্ন নামের ছিল। যেমন, অগ্রদূত, ঝড়ের পাখি, পঙ্খিরাজ, মযূরপঙ্খী, সাইমুন, তুফান মেল, সোনার তরী, দ্বীপরাজ ইত্যাদি। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের নৌকা দেখা যায়। তবে বাইচের নৌকার গঠন কিছুটা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। নৌকা গুলো হয় ছিপছিপে গড়নের এবং লম্বাটে।নৌকার সামনের গলুইটাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়। তাতে কখনো করা হয় ময়ূরের মুখ, কখনো রাজহাঁস বা অন্য কোনো পাখীর মুখাবয়ব। নৌকাটিতে উজ্জ্বল রঙের কারুকাজ করে বিভিন্ন নকশা তৈরি করা হয়। সর্বোপরি নৌকাটিকে দর্শকের সামনে যথাসম্ভব আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা থাকে।
নৌকায় ওঠার আবার অনেক আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। সকলে পাক-পবিত্র হয়ে গেঞ্জি গায়ে মাথায় একই রঙের রুমাল বেঁধে নেয়। সবার মধ্যখানে থাকেন নৌকার নির্দেশক। দাঁড়িয়ে থেকে নৌকা চালান পেছনের মাঝিরা। প্রতিটি নৌকায় ৭, ২৫, ৫০ বা ১০০ জন মাঝি থাকতে পারেন।
উপযুক্ত নৌকায় দু’পাঁশে মাঝিরা সারি বেঁধে বসে পড়বে বৈঠা হাতে। মাঝিদের বৈঠা টানাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য একজন পরিচালক থাকে যাকে বলা হয় ‘গায়েন’। সে বসবে নৌকার গলুই-এ। মাঝিরা একত্রে জয়ধ্বনি সহকারে নৌকা ছেড়ে দিয়েই এক সাথে কোনো একটি গান গাইতে আরম্ভ করে এবং সেই গানের তালের ঝোঁকে ঝোঁকে বৈঠা টানে; যার ফলে কারো বৈঠা ঠোকাঠুকি না লেগে এক সাথে পানিতে অভিঘাত সৃষ্টি করতে থাকে। কাসা, ঢোল ও বৈঠার সলাৎ সলাৎ শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে নদীর দু’কূল।
গ্রামের লোকজন উৎসাহ দিতে নানা ধরণের নৌকা সাজিয়ে মাইক বেঁধে অবস্থান নেন নদীর কোলের দু’পাড়ে। দর্শনার্থীদের অংশগ্রহণে চরম উপভোগ্য হয়ে ওঠে নৌকা বাইচ। এ নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে নদীর দু’পাড়ে বসে মেলা। কসমেটিক্স, মিষ্টি, খেলনাসহ বিভিন্ন দোকান বসে মেলায়। নৌকা বাইচ দেখতে আসা দর্শনার্থীরা নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নেন মেলা থেকে।
নদী গুলো শুকিয়ে যাওয়া ও খাল না থাকার কারণে এখন আর আগের মত নৌকা বাইচ হয় না। অন্যদিকে ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন নদী ও খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে স্থানীয়দের উদাসীনতা, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, দেশীয় সংস্কৃতির লালনের অভাবে গ্রাম বাংলা থেকে ঐতিহ্যবাহী খেলা নৌকা বাইচ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
নৌকা বাইচকে ধরে রাখতে ও সাধারণ মানুষকে আনন্দ দিতে ঐতিহ্যবাহী এ বাইচের আয়োজন করা দরকার। তারপরেও লোকজন কোথাও অনুষ্ঠিত হবে এমন খবর পেলে সেখানে ছুটে যায়। নদী ও খাল খনন করে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ নৌকা বাইচ আগামীতেও অনুষ্ঠিত হবে এমটাই আশা করছে সাধারণ মানুষ।
আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
লেখক।
কুড়িগ্রাম।
১৯/০২/২০২২
আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
লেখক ।
কুড়িগ্রাম ।
# হ্যালো জনতা ডট কম এর নিয়মিত লেখক ।
# আমাদের ওয়েব পেজ এবং ব্লগ ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ।
হ্যালো জনতা ডট কম।
hellojanata.com ।
হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।
hellojanata.com
https://hellojanata350.blogspot.com/
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন