‘প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৩৩ – বিলুপ্ত প্রায় লাঠি খেলা # আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

   ## A hellojanata.com Presentation

বিলুপ্ত প্রায় লাঠি খেলা!!
# আকরাম উদ্দিন আহমেদ।





বিলুপ্ত প্রায় লাঠি খেলা!!

লাঠি খেলা একটি ঐতিহ্যবাহী বাঙালি মার্শাল আর্ট–লাঠি খেলা মূলত এক ধরনের আত্মরক্ষামূলক লড়াই–যা ভারত ও বাংলাদেশে অনুশীলন করা হয়। ‘লাঠি খেলা’ অনুশীলনকারীকে ‘লাঠিয়াল’ বলা হয়। এছাড়াও, লাঠি চালনায় দক্ষ কিংবা লাঠি দ্বারা মারামারি করতে পটু কিংবা লাঠি চালনা দ্বারা যারা জীবিকা অর্জন করে, তারা লেঠেল বা লাঠিয়াল নামে পরিচিতি পান।

লাঠি খেলার লাঠি দিয়ে আত্মরক্ষা শিক্ষা দেয়া হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার জমিদাররা নিরাপত্তার জন্য লাঠিয়ালদের নিযুক্ত করত। চরাঞ্চলে জমি দখলের জন্য মানুষ এখনও লাঠি দিয়ে তার ক্ষমতা প্রদর্শন করে থাকে। মহররম ও পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানে এই খেলাটি তাদের পরাক্রম ও সাহস প্রদর্শনের জন্য খেলা হয়ে থাকে। এই খেলার জন্য ব্যবহৃত লাঠি সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা এবং প্রায়ই তৈলাক্ত হয়। অত্যাশ্চর্য কৌশলের সঙ্গে প্রত্যেক খেলোয়াড় তাদের নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শন করে। শুধুমাত্র বলিষ্ঠ যুবকেরাই এই খেলায় অংশ নিতে পারে। কিন্তু বর্তমানে শিশু থেকে শুরু করে যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সের পুরুষেরাই লাঠিখেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। উত্তরবঙ্গে, ঈদের সময়ে চাদি নামক একটি অনুরূপ খেলা খেলা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশে পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানের সময় “লাঠি খেলা” এর প্রদর্শনীর এখনও প্রচলন রয়েছে।

লাঠি খেলার অসাধারণ ইতিহাস আছে কিন্তু এর জনপ্রিয়তা এখন পড়তির দিকে। ঈদ উপলক্ষে লাঠিখেলার আয়োজন সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, জয়পুরহাট, পঞ্চগড়, নড়াইল প্রভৃতি জেলায় ভিন্ন নামে দেখা যায়। তবে লাঠি খেলা নিয়ে বর্তমানে নতুন কোন দল তৈরি হচ্ছে না। এছাড়া পৃষ্ঠপোষকতার অভাবেও লাঠি খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে।

এমন একটা সময় ছিল যখন বাংলার প্রতিটা গ্রামেই বসতো লাঠিখেলার উৎসব। ঢোল ডগর আর কাশির বাজনার সাথে চলতো লাঠির কসরত। কে কত ভাল লাঠি চালাতে পারে তার প্রতিযোগিতা হতো। একজনের লাঠির আঘাত রুখতে আরেকজনের লাঠিতে ঠকঠক আওয়াজের সাথে জোরালো হাততালিতে জমজমাট হয়ে উঠতো উৎসব। গ্রাম-বাংলার সেই চিরচেনা ও ঐতিয্যবাহী লাঠিখেলা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে এখনো কোথাও কোথাও এ ঐতিয্যবাহী লাঠিখেলা টিকিয়ে রাখতে নেয়া হয় উদ্যোগ।

কবে কখন শুরু হয়েছিল এই মজাদার লাঠিখেলা তা জানা না গেলেও বাঙালী ঐতিয্যের অতি প্রাচীন অঙ্গ এ লাঠি খেলা। আগে রাজা বাদশাহ ও জমিদারদের লাঠিয়াল বাহিনীর গল্প আমরা শুনেছি। সেসময় লাঠিয়ালদের প্রতিপক্ষের মোকাবেলায় ব্যবহার করা হতো। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের যুগে এসে লাঠিয়াল বাহিনী বিলুপ্ত হলেও চলতে থাকে লাঠিখেলা প্রতিযোগিতা। এক সময় গ্রামে গ্রামে লাঠিখেলার দল গঠন হতো। মাঠের ফসল ঘরে উঠে আসলে অবসর সময়ে চলতো এই উৎসব। এক গ্রামের দল খেলতে যেতো অন্য গ্রামে। হ্যাচাক জ্বালিয়ে বাড়িতে বাড়িতে গভীর রাত পর্যন্ত চলতো খেলা। গৃহস্থরা বস্তা বস্তা ধান দিতো খেলার খরচ চালাবার জন্য। আনন্দে ভরপুর থাকতো গ্রামের মানুষ। এসব এখন গল্পের মতো।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামে গ্রামে সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে মানুষে মানুষে দুরুত্ব সৃষ্টি হয়। এভাবেই লাঠিখেলার দল ভেঙে যেতে থাকে। তবে হারিয়ে যাওয়া এই কৃষ্টি ধরে রাখতে এখনো কোন কোন গ্রামে আয়োজন করা হয় লাঠিখেলার।
লাঠিয়ালদের ভাষ‍্য মতে, দল গঠন ও খেলা পরিচালনা করা এখন অনেক ব্যয়সাধ্য ব্যাপার। গ্রামের মানুষের এখন আর সেই মন মানুষিকতা নেই। সরকারি সহযোগিতা না থাকলে এ ঐতিহ্যবাহী খেলা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। তারা জাতীয়ভাবে লাঠি খেলা আয়োজনের দাবিও জানান।

গ্রামের মানুষেরা মনে করেন লাঠিখেলা টিকে থাকলে মানুষের মন প্রফুল্ল থাকবে, থাকবে মানুষে মানুষে ঐক্য। আর এই ঐক্যের শক্তি দিয়েই আমাদের সভ্যতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।




আকরাম উদ্দিন আহমেদ ।
লেখক ।।
কুড়িগ্রাম ।। ২৬/০২/২০২২।
# জনাব আকরাম উদ্দিন আহমেদ হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয় ।।
হ্যালো জনতা ডট কম।।
www. hellojanata.com –

হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
hellojanata.com —
https://hellojanata350.blogspot.com–

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।