যুদ্ধের মাঠে প্রোপাগান্ডা- পাঠক সংবাদ মাধ্যমের উপরে ক্রমশই বিশ্বাস হারাচ্ছে! হ্যালো জনতা ডট কম ।

  ## A hellojanata.com Presentation


যুদ্ধের মাঠে প্রোপাগান্ডা- পাঠক সংবাদ মাধ্যমের উপরে ক্রমশই বিশ্বাস হারাচ্ছে!



এখন যেমন হচ্ছে ! ধারনা করা যাচ্ছে যে যুদ্ধের মাঠে প্রোপাগান্ডা সেই সাথে সাথেই পক্ষ অবলম্বনের সন্দেহে সংবাদ মাধ্যমের উপরে পাঠক ক্রমশই বিশ্বাস হারাচ্ছেন । পাঠক কুল ধারনা করছেন যে যুদ্ধে কোন এক পক্ষকে নির্লজ্জ ভাবেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে কিছু সংবাদ মাধ্যম ! যেমনটি হয়েছিল ২য় মহাযুদ্ধের সময় এবং পরাজয়ের পরে জার্মানি বাসী জেনেছিল হিটলারের অনেক কিছুই ছিল ভ্রান্ত প্রচারনা ।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় রুডলফ হিটলারের থার্ড রাইখের যুদ্ধ ,ব্লিতসক্রিগ বা হিটলারের মতাদর্শ এবং এ সম্পর্কিত সকল কিছু জানাতে জন্ম নিয়েছিল হিটলারের প্রচার মন্ত্রনালয় । এই মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে ছিলেন জোসেফ গোয়েবলস । বলা যেতে পারে জোসেফ গোয়েবলস ১৯৩৩-৪৫ সাল পর্যন্ত নাৎসি জার্মানির প্রচার মন্ত্রণালয়ের সর্বেসর্বা ছিলেন। বিদ্বেষপূর্ণ বক্তৃতা এবং ইহুদি বিরোধী তৎপরতার জন্য তিনি কুখ্যাত হয়ে আছেন । জার্মানিতে ইহুদিদের বিরুদ্ধে যে ধারাবাহিক আক্রমণ সূচিত হয়েছিল তাতে তার হাত ছিল এবং এর ফলেই সেখানে ব্যাপক ইহুদি হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। জার্মানির পরাজয় সময়ে হিটলারের প্রচার মন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলস পরিবারের সকলকে ( ছয় সন্তান ও স্ত্রী মাগদা গোয়েবলস) সাথে নিয়ে আত্মহত্যা করেন ।


# হিটলারের প্রচার মন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলস ।

তিনি হিটলারের গুজব মন্ত্রী ছিলেন বলেও বলেন অনেকেই । তিনি ইতিহাস জুড়েই একজন নিন্দিত ব্যক্তি ।
জোসেফ গোয়েবলস হিটলারের সপক্ষে প্রচারে এতোই দক্ষ ছিলেন যে,অধুনা বিশ্বে পর্যন্ত এ ধরনের ভিন্ন মত প্রচার কিংবা সমাজে বা দেশে ভুল অথবা ত্রুটিপূর্ণ মতামত প্রচারের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে’গোয়েবলসসিও কায়দা ‘। গোয়েবলসের মতই সকলেই অবশেষে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিজের স্থান করে নেয় বলাই বাহুল্য সেই আস্তাকুড় তাদের নিজেদেরই সৃষ্টি ।

যুদ্ধে প্রোপাগান্ডা একটি বড় সমর অস্ত্র হিসাবেই ধরে নেওয়া হয় । এখনো হচ্ছে । আর এর ফলে জনগন যখন সত্যি বিষয়টি জানতে পারছে তখন ধিরে ধিরে সংবাদ মাধ্যমের উপর অথবা সংবাদ প্রনেতার উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে । ফলে সংবাদ মাধ্যম ক্রমশই তাদের বিশ্বস্ততা হারাচ্ছে – এতে করে এক সুদুর প্রসারী প্রভাবের কথা ভাবা একেবারেই অমূলক নয় ।

দেখা যাচ্ছে বর্তমানের রাশিয়া বনাম ইউক্রেনের যুদ্ধের মাঝে এ ধরনের বিষয় পরিস্কার । মনে রাখা যেতে পারে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম গুলো একচেটিয়া ভাবেই রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষ অবলম্বন করছে । নানান ধরনের নিষেধাজ্ঞার ফলে এবং রুশ প্রচার মাধ্যমের প্রতি অবজ্ঞা বা নিষেধাজ্ঞার কারনে রুশ সরকার কি বলছে বা রুশ বাহিনী কি করছে তা বিশ্ববাসীর চোখে পরছে না । বিশ্ববাসী সে সকল খবর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ।

পক্ষান্তরে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম ক্রমাগতই এক ধরনের খবর পরিবেশন করে বিশ্ব জনমত এক পক্ষের দিকে নেওয়ার চেষ্টায় রত । উদাহরন হিসাবে দেখানো যেতে পারে – আমরা প্রায়ই সকল সংবাদে দেখে থাকি , ইউক্রেনের কোন একটি শহরে ( কিয়েভ) একটি ভাঙ্গা ব্রিজের পাশ দিয়ে খরস্রোতা বহমান পানির উপর দিয়ে অতি কষ্টে বিছানো তক্তার উপর দিয়ে বৃদ্ধ,বৃদ্ধা,শিশু এবং নারীরা একদিক থেকে অন্যদিকে যাচ্ছেন ।খুবই দুঃখ জনক এক দৃশ্য । মানুষের কি দুর্গতি ! আহা পৃথিবীতে মানবতা আজ কোথায় ? বলা হয়ে থাকে বর্তমান পৃথিবীতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হলেন ‘ The king of the king ” । আর সেই রাজার রাজার ( কিং অফ দা কিং ) হাতেই কিনা মানুষের এমন দুর্গতি !




# ছবিটি গ্যাটি ইমেজ থেকে সংগ্রহ করা ।
অথচ এই সংবাদটি প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যম গুলো যেমন সিএন এন ,বিবিসি ,ইউরো নিউজ এমন সংবাদ মাধ্যম গুলোর কেউই কিন্তু একটি বারের জন্য বলছে না যে , কিয়েভের এই ব্রিজটি রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা ঠেকাতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বোমা মেরে বা এক্সপ্লসিভের দ্বারা উড়িয়ে দিয়েছিল , আর তার ফলেই এমন মানুষের বিপত্তি !( উপরে ছবি )।
মানুষ সে কারনেই এমন দুর্গতির শিকার হচ্ছেন । যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রথম দুই তিন দিনে,ব্রিজ টি যে ইউক্রেনের সেনাদল ভেঙ্গেছে সেটি সি এন এন , ইউরো নিউজ , বিবিসি বললেও এখন সেই বাক্য সমুহ বেমালুম ভুলে ‘ মানবতার খাতিরে ‘এটি ব্যবহার (ব্রিজ টির ছবি বা ভিডিও ) করা হচ্ছে ।প্রতিদিনই সংবাদে এই দৃশটি দেখা যায় ।
দেখা যায় সামাজিক মাধ্যম জুড়েও ফেক ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে । গুগলে ইউক্রেন যুদ্ধের অনেক ছবিতেই’ ফেক’ তকমা এঁটে দিয়েছে গুগল । ফেসবুক , টুইটার সহ প্রায় সব সামাজিক মাধ্যম নিয়েও বিশ্বাস হারাচ্ছে মানুষ ।


স্মরণ করা যেতেই পারে সিরিয়া, লেবানন বা গত বৎসর গাঁজা তে ইজরাইলই আক্রমনে পশ্চিমা মিডিয়া বা সংবাদ সংস্থা গুলো এতোটা সরব ছিল না । আর সেখানেই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে এখন অমন আহাজারি দেখে অনেকেই বিশ্বাস হারাচ্ছেন পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমের উপর । কেননা জনগন বুঝতেই পারছেন যে আসলে মানবতা আজ পক্ষপাত্তিতের এক সুতোয় বাঁধা পড়েছে ।

বাংলাদেশের প্রায় সকল সংবাদ পত্র বা অন লাইন নিউজ পোর্টাল গুলো লক্ষ্য করলে যা দেখতে পাবেন তা হল , সকলেই কোন দায়িত্ব না নিয়েই সংবাদ করছেন বা সংবাদের ধরনে প্রশ্ন বোধক কথা থাকছেই । বাংলাদেশ থেকে সরাসরি মাঠে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করা বা সংবাদ দাতা প্রেরন সম্ভব নয় । ফলে অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যমকে বিদেশী সংবাদের উপর আস্থা রাখতেই হয় । ফলে মানুষ অনেকটাই বিভ্রান্ত হতে পারে ।
নিচে একটি সংবাদ দেওয়া হল —
# রুশ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ নিয়ে সর্বশেষ যা জানাল ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়–
এখানে ইউক্রেনীয় দের ব্যাপক বিজয় এবং রুশদের বোমা বর্ষণ ও পরাজয় সংক্রান্ত খবর রয়েছে ।
পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম সেনাবাহিনী সম্পর্কে এহেন সংবাদ পাঠক কুলকে সন্দেহের দোলাচালে ফেলতেই পারে ।
এটি ঢাকার একটি বহুল প্রচারিত সংবাদ পত্রের / নিউজ পোর্টালের একটি খবরের হেডলাইন । এখানে খবরের উৎস হিসাবে দেখানো হয়েছে বিবিসি কে ? বিবিসি খবরটি পেয়েছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের বরাতে । কিন্তু এমন খবরের সত্যতা কোথায় ? বিবিসির সংবাদ দাতা সারা বিশ্বে থাকলেও ইউক্রেনে নেই এমন ভাবার কোনই কারন নেই । প্রতিদিন বিবিসির সংবাদে ইউক্রেন থেকে অমুক তমুক আমরা দেখতেই পাই । সে ক্ষেত্রে এমন একটি খবরের সত্যতা জানাতে যদি বিবিসি না পারে তবে আগামী দিন গুলোতে মানুষ কি আর এই সংবাদ মাধ্যমটির দেওয়া খবর পড়বে নাকি বিশ্বাস করবে ?
এখন অনেকেই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমকে আর গোনায় রাখছেন না ফলে বিবিসি একটি বিপদের সম্মুখিন বলেই মনে করা যেতেই পারে ।
প্রশ্ন আসতেই পারে এ ধরনের সত্যতা বিহীন খবরের প্রকাশ কি বিবিসির মত সর্বজন প্রশংসিত সংবাদ মাধ্যমকে সামনের দিনে পাঠকের গ্রহন যোগ্যতা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে না ?
হা যাবে ! আর এভাবেই মানুষ অনেক সংবাদ মাধ্যমের উপর আর বিশ্বাস রাখতে পারবে না , পারছে না ।
এর ফলে বৃহৎ পৃথিবীর এক বৃহৎ অংশের মানুষ ক্রমশই সংবাদ মাধ্যম থেকে দূরে চলে যাচ্ছে , যা কোনক্রমেই গ্রহন যোগ্য হতে পারে না ।
পক্ষপাতিত্ব নয়,একপেশে নয় বরঞ্চ একটি সুন্দর আর শান্তিময় পৃথিবীর জন্য নিরপেক্ষ,সঠিক আর বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে সংবাদ মাধ্যম সমুহের গুরুত্বের কথা আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই । আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই যে , একটি সুন্দর , শান্তিময় পৃথিবীর জন্য সকলেরই অংশ গ্রহন প্রয়োজন ।



হ্যালো জনতা ডট কম ।। 

ডেস্ক থেকে —
তথ্য উপাত্ত – পোল্যান্ড থেকে সাইফুল ইসলাম ।
হ্যালো জনতা ডট কম ।
hellojanata.com ।
হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।
hellojanata.com
https://hellojanata350.blogspot.com

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।