‘প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৩৫’ – সড়ক বাতি !! # আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

  ## A hellojanata.com Presentation



‘প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৩৫’ – সড়ক বাতি !! # আকরাম উদ্দিন আহমেদ।


প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৩৫ –
সড়ক বাতি !!
# আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

সড়ক বাতি !!
কে বাবা ল্যাম্পপোস্ট?
পথ আগলিয়ে দাঁড়িয়ে আছো!

আজ আর কোন মাতাল এভাবে বলবে না।
ঊনিশ শতকের শেষের কথা। ঢাকা পূর্ববঙ্গের প্রধান শহর হলেও কলকাতার সাথে দৃশ্যমান ফারাক অনেক। সেই ১৮৫৭ সাল থেকেই কলকাতার রাস্তায় দেখা যায় গ্যাস বাতির ব্যবহার। আর এদিকে রাত নামলে পূর্ববঙ্গের বিস্তৃত জনপদে নেমে আসে অন্ধকার। ঢাকা আর পাঁড়া গা’গুলোকে তখন আলাদা করে আর চেনার উপায় থাকে না। শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় কেরোসিন বাতির ব্যবস্থা থাকলেও সামান্য জোর হাওয়া কিংবা বৃষ্টিতে সে বাতির আয়ু ফুরিয়ে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। বিত্তবানদের ঘরে তবু ঝাড়বাতির চল আছে। বাদবাকি সবই চলে হারিকেন, কুপি বাতি আর মোমের আলোয়।

টমাস আলভা এডিসনের বিজলি বাতি আবিস্কারের দশ বছর পূর্বে ঢাকা শহরের নাগরিক সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে রাস্তায় সড়ক বাতি ব্যবহারের কার্যক্রম শুরু হয় ১৮৬৯ সালে। মিউনিসিপ্যালিটির সভাপতি ও ম্যাজিস্ট্রেট জর্জ গ্রাহামের নির্দেশ অনুযায়ী, সিভিল সার্জন ড. হেনরি কাটক্লিফ ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ও উন্নয়ন বিষয়ক একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করেন। রিপোর্টে তিনি ঢাকার রাস্তায় সড়ক বাতি স্থাপনের কথা তুলে ধরেন। তবে গ্যাস বাতির বদলে তিনি কেরোসিন বাতি জ্বালানোর প্রস্তাব রাখেন। রিপোর্ট দেখে নবাব খাজা আবদুল গণি বলছিলেন, এ রিপোর্ট বাস্তবায়িত হলে ঢাকা স্বর্গে পরিণত হবে। কিন্তু ঢাকার মানুষের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল নয়। আর তাই নগর উন্নয়নে আর্থিক অনুদান দেওয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

১৮৭০ সালে নবাব আব্দুল গণি নিজেই ঢাকায় একটি গ্যাস লাইট ফ্যাক্টরি স্থাপন করেন। এদিকে ১৮৭৭ সালে রানী ভিক্টোরিয়া ভারতসম্রাজ্ঞী ঘোষিত হলে ব্রিটিশ সরকার ঘটনাটি উদযাপনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেন। ঢাকায় এর আয়োজন উপলক্ষে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয় নাগরিক কমিটি। কমিটির উদ্যোগে সদস্যদের চাঁদায় ৬,৫০০ টাকার ফান্ড গঠন করা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, তৎকালীন মিউনিসিপালিটি অফিস ওয়াইজঘাট থেকে শুরু করে চকবাজার পর্যন্ত কেরোসিনের ১০০টি সড়কবাতি স্থাপন করা হবে। পরে এ প্রকল্পের আওতায় ৬০টি কেরোসিন ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন জেলা সদর এবং মহকুমা সদরে কেরোসিন ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ হাতে নেওয়া হয়।

১৯৬২-৬৩ সালের দিকে আমাদের কুড়িগ্রামের সবুজ পাড়া থেকে হরিকেশ যাওয়ার রাস্তার শুরুতে ঝড়ু ব‍্যাপারীর ভাড়া বাড়ির সামনের কোনায় একটি কেরোসিনের ল্যাম্পপোস্ট বসানো ছিল। আমরা লক্ষ করতাম প্রতিদিনই সন্ধ্যার পূর্বে এক বাতিওয়ালা এসে ঐ ল্যাম্পপোস্টে মই লাগিয়ে কেরোসিনের সড়ক বাতিটি পরিস্কার করে তেল ঢেলে জ্বালিয়ে দিয়ে যেতো। ঐ সড়ক বাতির টিমটিমে আলোয় পথচারীদের নাহলেও কিছু আলোর ব‍্যবস্থা হতো। সেই সময়ে তাই কি কম!

বৈদ‍্যৎতিক বাতি ব‍্যবহারের পূর্বে সড়কে কেরোসিনের বাতিই ছিল মূল ভরসা। কিন্তু, সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতেই বাতি নিভে গিয়ে নেমে আসত অন্ধকার। মজার ব্যাপার হলো, রোজ এই কেরোসিন বাতি জ্বালানো-নেভানোর জন্য ঊনিশ শতকে বাতিওয়ালা নামে এক নতুন পেশাজীবী সম্প্রদায়ের বিকাশ ঘটে। সন্ধ্যা নামলেই বড় বড় মই হাতে এই বাতিওয়ালাদের দেখা মিলত। বিদ্যুৎ আসলেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত কেরোসিন বাতির প্রচলন ছিল।

বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং কালের পরিক্রমায় এখন সড়ক বাতিতে অনেক বিবর্তন এসেছে। এক সময় ফ্লুরোসেন্ট কিংবা বিজ্ঞাপনের জন্য নিয়ন সাইন পরবর্তীকালে হ‍্যালোজেন ল‍্যাম্প, বতর্মানে গ্রামেগঞ্জে স্বতন্ত্র সোলার প‍্যানেলে এলইডি বাতিতে সড়ক গুলো আলোকে উদ্ভাসিত হচ্ছে। আমরা কেউ আর এখন বিস্ফোরীত নয়নে সড়ক বাতির দিকে তাকিয়ে থাকিনা।

আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
লেখক।
কুড়িগ্রাম।
০৫/০৩/২০২২

  

আকরাম উদ্দিন আহমেদ ।
লেখক ।
কুড়িগ্রাম ।
# জনাব আকরাম উদ্দিন আহমেদ হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয় ।।
হ্যালো জনতা ডট কম।।
www. hellojanata.com –

হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
hellojanata.com —
https://hellojanata350.blogspot.com–

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।