‘প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৪০ – কদর নেই শিল-পাটার # আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

  ## A hellojanata.com Presentation  


‘প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৪০ – কদর নেই শিল-পাটার # আকরাম উদ্দিন আহমেদ।




প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৪০ –
কদর নেই শিল-পাটার !!
# আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

কদর নেই শিল-পাটার !!
আকরাম উদ্দিন আহমেদ ।

হলুদ বাটো মেন্দি বাটো
বাটো ফুলের মউ,
বিয়ের সাঁজন সাঁজবে কন্যা
গড়ন গাড়ন গোল…।

এখন আর সকল বিয়ে বাড়িতে দু‘তিন দিন আগে থেকে হলুদ-মেন্দি বাটা হয়না। কারণ আধুনিকতার যুগে বর্তমানে বাজারে সুদৃশ্য প্যাকেটে গুড়ো হলুদ কিংবা টিউবে মেহেদী বাটার পেস্ট পাওয়া যাচ্ছে। হয়তো আর কিছুদিন পর হলুদের স্প্রে পাওয়া যাবে। কেবল শহরে নয় গ্রাম-গঞ্জেও পৌঁছে গেছে সব ধরণের গুড়ো মসলার প্যাকেট তাই সময় ও কালের প্রবাহে আটোপৌরে বাঙালীর সমাজ ব্যবস্থার পারিবারিক অঙ্গন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় শিল-পাটার ব্যবহার।

কালের আর্বতে প্রায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে শহর-বন্দর ও গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিল-পাটা। অথচ একটা সময় ছিলো যখন রন্ধন কাজে শিল-পাটা ছাড়া চুলায় হাঁড়ি ওঠতো না। ভোজনরশিক বাঙালীর খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির প্রয়োজনে মসল্লা অপরিহার্য উপকরণ। আর সেই মসল্লা তৈরি করার সহজ ও সুবিধাজনক প্রক্রিয়াটি ছিলো শিল-পাটা। শিল-পাটায় বাটা মসল্লায় রান্না করা মাছ-মাংশ ও তরকারী আজও রসনা বিলাস। প্রতিটি ঘরের গৃহিনীদের শিল-পাটায় মসল্লা বাটা ছিলো নিত্যদিনের কাজ। রান্নার আগেই গৃহিণীরা শিল-পাটা নিয়ে মসল্লা বাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েতেন। কিন্তু হালে চোখে পড়েনা।

তবে গ্রাম-বাংলায় এখনও অনেক ভোজনবিলাসী পরিবার আছে যারা শিল-পাটায় বাটা মসল্লা ছাড়া রান্না খেতে পছন্দ করেন না। চিরায়ত গ্রাম বাংলায় শিল-পাটা নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানা কল্পকাহিনী। গ্রামীণ সংস্কৃতির গীত-গানেও রয়েছে শিল-পাটায় মসল্লা বাটার অনেক গীত-সংগীত।

তৈরি মসল্লা বাজারে সহজলভ্যতা ও বাণিজ্যিকভাবে প্রচলন হওয়ায় পাথরের শিল-পাটায় মসল্লা পিষার গুরুত্ব একেবারেই হ্রাস পেয়েছে। গৃহিণীরাও পরিশ্রম থেকে রেহাই পেতে প্যাকেটজাত মসল্লার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

তবে যুগ যুগ ধরে গ্রামাঞ্চলের মানুষ শিল-পাটায় বিভিন্ন ধরণের খাদ্য তৈরির কাজেও ব্যবহার করে আসছেন। শিল-পাটায় পিষা কাঁচামরিচ ও শুটকি মাছ ও কালজিরার ভর্তার স্বাদ আজও অতুলনীয়। সময়ের প্রবাহে পাড়া-মহল্লার প্রতিটি দোকানে মরিচ, হলুদ ও ধনিয়াসহ নানা মসল্লায় প্যাকেটজাত মসল্লায় বাজার সয়লাব হয়ে আছে। হাত বাড়ালেই মসল্লা পাওয়া যাচ্ছে।

তাছাড়া রয়েছে প্রতিটি এলাকায় হলুদ,মরিচ ও ধনিয়া পিষার হলার মেশিন। তৈরি মসল্লা বাজারে সহজলভ্যতা ও বাণিজ্যিকভাবে মসল্লা ভাঙ্গার হলার মেশিন চালু হওয়ায় পাথরে শিল-পাটায় মসল্লা বাটার গুরুত্ব একেবারেই কমে গেছে।

একসময় দেশের জেলা শহরগুলি ও আশপাশের এলাকায় প্রতিনিয়ত দেখা মিলতো শিল-পাটা খোদাইকারীর। কাঁধে শিল-পাটা বয়ে নিয়ে খোদাইকারিরা বাড়ির সামনে গিয়ে হেঁকে ওঠতো-“পাটা খোদাইবেন, শিল-পাটা ধার” এখন আর সেই হাকডাকের দৃশ্য চোখে পড়েনা। শোনা যায় না বাড়ির আঙ্গিনায় শিল-পাটা খোদাই করার টুকটাক শব্দ।

শিল-পাটার ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায় বাধ্য হয়ে অনেক কারিগর পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু অনেক কারিগর উপার্জন কমে যাওয়ার পরেও অনেক বাধা-কষ্ট পেরিয়ে বাপ-দাদার ঐতিহ্য ওই পেশাকে আকঁড়ে ধরে রয়েছেন। কাদাচিৎ গ্রামাঞ্চলে তাদের নজরে পড়ে।

দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই শিল-পাটা কিনতে পাওয়া গেলেও বিশেষ করে হার্ডওয়ার সামগ্রী বিক্রির দোকানগুলিতেই শিল-পাটা বেশি বিক্রি হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে অনেক জেলায় শিল-পাটা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য জেলাগুলি হচ্ছে, সিলেট, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, পঞ্চগড়, কক্সবাজার, নেত্রকোনা। তবে সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় জয়পুরহাটে।

তবে দিনে দিনে শিল-পাটার ব‍্যবহার কমে যাচ্ছে বিধায় অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় যোগ দিচ্ছে। তাছাড়া শিল-পাটা তৈরিতে যে পরিমান পরিশ্রম হয় সেরকম পারিশ্রমিকও পাওয়া যায়না।

এদিকে, প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায় শিল-পাটার ব্যবহার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। একদিন হয়তো ঐতিহ্যের এই উপকরণটি হারিয়ে যাবে চিরচেনা বাংলার বলয় থেকে।


১৬/০৪/২০২২



আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
লেখক
কুড়িগ্রাম।



# জনাব আকরাম উদ্দিন আহমেদ হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয় ।।
হ্যালো জনতা ডট কম।।
www. hellojanata.com –

লেখাটি আমাদের ব্লগেও পাবেন । 

হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
hellojanata.com —
https://hellojanata350.blogspot.com–

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।