প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৪১ – কালের সাক্ষী পাত কুয়া!! # আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

    ## A hellojanata.com Presentation 

প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৪১ – কালের সাক্ষী পাত কুয়া!! # আকরাম উদ্দিন আহমেদ। 




কালের সাক্ষী পাত কুয়া!!

কুয়া থেকে বালতিতে পানি তোলা’র প্রসঙ্গ এলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে হাজার বছরের আবহমান বাঙালির পানীয় জলের উৎস পাতকুয়ার ছবি। বাঁশের কোঠায় ঝুলানো লম্বা রশির মাথায় বাঁধা বালতিতে রশি টেনে পানি তোলা কারো কারো মূর্ত রূপ।

মাটির উপরি স্তর থেকে স্বচ্ছ পানির স্তর পর্যন্ত গভীরে খোঁড়া গোলাকার কুপ,-এই কুপ থেকেই কুয়া নামটি এসেছে। ‘পাতকুয়া’র সমার্থক শব্দ ইদারা।

সাধারণত পানীয় জলের অগভীর কূপ-ই পাতকুয়া। এই অগভীরে খোড়া গোলাকার গর্তের ভেতরে বালি-পাথর ও সিমেন্টের তৈরি কিংবা পোড়া মাটির তৈরি গোলাকার পাট, কখনো বাঁশের তৈরি খাঁচা বেষ্টনি হিসেবে ব্যবহার হত। তাই পাতকুয়া কোথাও কোথাও পাটকুয়া। মজার ব্যাপার হলো খুব কম সংখ্যক মানুষের মুখে কুয়া শব্দটি শোনা যেত। এই কুয়া, কুয়া নয়, উত্তর বঙ্গে ‘চুয়া’ হয়েই উচ্চারিত হত সর্ব সাধারণের মুখে মুখে।

প্রজা হিতৈষী সম্র্রাট অশোকের সময়ে প্রজাদের পানীয় জলের সুবিধার্থে পাতকুয়া খননের ইতিহাস জানা যায়। এই পাতকুয়ার ভিতরে পোড়ামাটি কিংবা পাথর বালুর তৈরি পাটের বেষ্টনি দিয়ে তৈরি কুয়া ছিল দুর্লভ। এটা কেবল রাজা-বাদশা কিংবা ধনীক শ্রেণির মানুষের বাড়িতে দেখা যেত।

মোঘল আমলে মোঘল বাদশাহ্দের পৃষ্টপোষকতায় এবং বাংলার নবাব শেরশাহের আমলে মুসাফির ও পথিকদের জন্য মহাসড়কের পাশে এবং বসতি এলাকার পাড়ায় পাড়ায় অধিক সংখ্যক মানুষের জন্য একটি করে পোড়া মাটির বেষ্টনিসমৃদ্ধ কুয়া নির্মিত হওয়ার ইতিহাস পাওয়া যায়। এর পর প্রাচীন কাল থেকে নিয়ে বিংশ শতকের আশির দশক পর্যন্ত ব্যবহারের দিক থেকে পাতকুয়ার ইতিহাস, সমৃদ্ধ ইতিহাস।

পাটের বেষ্টনিসমৃদ্ধ এ সময়ের পাতকুয়া আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহার হত। নিম্নশ্রেণির মানুষ সুপেয় পানির জন্য ধনীক শ্রেণির মানুষের পাতকুয়ার ধারে ভীড় জমাতো।

গত শতকের আশির দশকে ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের অধীনে জেলার জনবহুল অঞ্চলে এবং জেলা সদরে পাতকুয়া বসানো হয়। তৎকালীন আমাদের কুড়িগ্রাম মহকুমা শহরের বাজারে একটি, জেলখানায় একটি, পুরাতন রেলষ্টেশনে একটি এবং ইওর প্রেসের সামনে একটি পাতকুয়ার কথা আমার মনে পরে। এছাড়াও এখানের প্রতিটি বিত্তবান পরিবারে এবং আমাদের বাড়িতেও একটি পাতকুয়া ছিল।

নব্বই দশকের প্রথম থেকেই নলকুপের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারে পাতকুয়ার ব্যবহার কমে আসে, চাপা পড়ে পাতকুয়ার কৌলিন্য।

আজকের তৃতীয় প্রজন্মের কাছে বালতি দিয়ে জলতোলার দৃশ্য কল্পনা মাত্র। বাংলায় পাতকুয়ার ব্যবহার এখন নেই। তবে দুএকটি পাওয়া গেলেও এগুলোর পানি অনেকেই গরুকে দেয়া খাবারের পানি হিসেবে ব্যবহার এবং সখের বশে বছরে এক-আধদিন গোসলের কাজে ব্যবহার করলেও নিজেদের খাবারের পানি হিসেবে ব্যবহার করেন না। তবে কুয়ার পানিতে আর্সেনিক নামক বিষ সহনীয় মাত্রায় থাকায় পাতকূপের পানিকে নিরাপদ বলছেন পানি বিশেষজ্ঞরা। তথাপি এর সংরক্ষণে কারো কোন উদ্দোগ নেই বল্লেই চলে।

দেশব্যাপী অপরিকল্পিতভাবে ডীপ টিউবওয়েলে পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি নিচে নেমে যাচ্ছে। অপর দিকে দেশে আর্সেনিক মুক্ত পানিও জলের সরবরাহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। সরকারকে এ ব‍্যাপারে অতিসত্তর নজর দেয়া প্রয়োজন নতুবা এটি জনজীবনে প্রকট আকার ধারণ করবে। আর একসময়ের কালের বিবর্তে হারিয়ে যাওয়া পাতকুয়া হয়ে থাকবে কালের সাক্ষী।

আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
লেখক
কুড়িগ্রাম।

# জনাব আকরাম উদ্দিন আহমেদ হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয় ।।


হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
hellojanata.com —
https://hellojanata350.blogspot.com–

হ্যালো জনতা ডট কম ।
hellojanata.com .

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।