প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৪২ – স্মৃতির পাতায় ধানের গোলা!! # আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

     ## A hellojanata.com Presentation 

প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৪২ – স্মৃতির পাতায় ধানের গোলা!! # আকরাম উদ্দিন আহমেদ।




প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৪২ –
স্মৃতির পাতায় ধানের গোলা!!
# আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

স্মৃতির পাতায় ধানের গোলা!!
গ্রামবাংলার সমৃদ্ধি আর আভিজাত্যের প্রতীক ধানের গোলা এখন বিলুপ্ত প্রায়। কৃষকের গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু এবং পুকুর ভরা মাছ এখন প্রবাদ বাক্যে পরিণত হতে চলেছে।

হারিয়ে যাচ্ছে কৃষকের ঐতিহ্যবাহী গোলা শিল্প। মাঠের পর মাঠ ধান ক্ষেত থাকলেও অধিকাংশ কৃষকের বাড়িতে নেই ধান মজুদ করে রাখার মত বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি গোলাঘর। তবুও পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বাড়ির উঠানে এখনো কেউ কেউ এই ধানের গোলা রেখে দিয়েছেন।

অথচ এক সময় সমাজের নেতৃত্ব নির্ভর করত কার ক’টি ধানের গোলা আছে এই হিসেব কষে। কন্যা পাত্রস্থ করতেও বর পক্ষের বাড়ী ধানের গোলার খবর নিতো কনে পক্ষের লোকজন। যা এখন শুধু কল্পকাহিনী।

গ্রাম অঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ দিয়ে গোল আকৃতির তৈরী করা ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুতে। গোলার মাথায় থাকত টিনের তৈরী মিশরের পিরামিড আকৃতির টাওয়ার। যা দেখা যেত অনেক দুর থেকে।

বর্ষার পানি আর ইঁদুর তা স্পর্শ করতে পারত না। মই বেয়ে গেলায় উঠে তাতে ফসল রাখতে হতো। এই সুদৃশ্য গোলা ছিল সম্ভ্রান্ত কৃষক পরিবারের ঐতিহ্য। ধানের মৌসুমে ধান কেটে শুকিয়ে গোলায় রাখা হয়। প্রয়োজনের সময় গোলা থেকে ধান বের করে পুনরায় রোদে শুকিয়ে ধান ভাঙানো হয়। সে সময় ভাদ্র মাসে কাদা পানিতে ধান শুকাতে না পেরে কৃষকরা ভেজা আউশ ধান রেখে দিতো গোলা ভর্তি করে। গোলায় শুকানো ধানের চাল হত শক্ত। কিন্তু সম্প্রতি রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও আধুনিক কলের লাঙ্গল যেন উল্টে পাল্টে দিয়েছে গ্রাম বাংলার চালচিত্র।

কালের প্রবাহে গোলায় তোলার মত ধান আর তাদের হাতে থাকে না। গোলার পরিবর্তে কৃষকরা ধান রাখা শুরু করে বাঁশের তৈরী ক্ষুদ্রাকৃতি ডোলায়। ধান আবাদের উপকরন কিনতেই কৃষকের বিস্তর টাকা ফুরায়। কৃষকের ধানের গোলা ও ডোলা এখন শহরের বিত্তশালীদের রাইস মিলের গুদাম ঘরে পরিণত হয়েছে। কৃষকের ধান চলে যাচ্ছে একশ্রেণীর অসাধু মুনাফালোভী ফড়িয়া ও আড়ত ব্যবসায়ির দখলে। ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে পাকা গুদাম ঘরে মজুদ করে রাখা হচ্ছে শহশ্রাধিক টন ধান চাল। এখন আর দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে আসা গোলা নির্মাণ শ্রমিকদের দেখা মেলে না। গোলা নির্মাণ শিল্পের শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তথাপি গ্রামবাংলায় বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী গোলা রক্ষায় ধনীক শ্রেণীর কৃষকেরা এখনো বাঁশের তৈরি কিছু গোলা ঘর ধরে রেখেছেন। রঙ-বে রঙের কারুকার্য খচিত গোল গোলা, চারকোণা গোলা ও ঝুপি গোলা ছিল প্রত্যেক কৃষকের ধান-চাল রাখার এক নিরাপদ মূল্যবান স্থান। ছেলে-মেয়ের বিয়ে দেওয়া হতো কৃষি পরিবারে গোলাঘর দেখে। মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত ও ধনাঢ্য চাষিদের বাসাবাড়ির সামনে থাকতো একাধিক গোলাঘর। গোলাভরা ধান ও পুকুর ভরা মাছই ছিল জমিদারি প্রথা ও উচ্চ চাষি পরিবারের ঐতিহ্য।

বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। আধুনিক গুদাম ঘর এখন গোলা ঘরের জাগা দখল করছে। ফলে গোলা ঘর তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। আগামী প্রজন্মের কাছে গোলা ঘর কেবল স্মৃতিতে পরিণত হবে।

আকরাম উদ্দিন আহমেদ 
লেখক
কুড়িগ্রাম।
৩০/০৪/২০২২।

# জনাব আকরাম উদ্দিন আহমেদ হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয় ।।
# লেখাটি আমাদের ব্লগেও পাবেন ।
হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
hellojanata.com —
https://hellojanata350.blogspot.com–

হ্যালো জনতা ডট কম ।
hellojanata.com .

হ্যালো জনতা ডট কম ।
hellojanata.com .
হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
hellojanata.com —
https://hellojanata350.blogspot.com–





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।