প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৪৫ – লন্ঠনের আলোয় লেখাপড়া!! # আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

  ## A hellojanata.com Presentation  -- 


প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৪৫ – লন্ঠনের আলোয় লেখাপড়া!! # আকরাম উদ্দিন আহমেদ। 




লন্ঠনের আলোয় লেখাপড়া!!

বতর্মান প্রজন্মের কাছে লন্ঠনের বা হারিকেনের আলোয় লেখাপড়া করা কল্পনাতীত। তবে আমরা পড়েছি, সেই শৈশব থেকে কৈশোর পযর্ন্ত। লন্ঠনে নামকরা হরদো গ্লাস ফ‍্যাক্টরীর চিমনি ব‍্যবহার করতাম। সময়টা ১৯৬৮ সাল, তৎকালীন আমাদের মহকুমা শহরে প্রথম বিজলী বাতির আগমন ঘটে। তবে তার আগ পযর্ন্ত আমাদের লন্ঠনের আলোয় পড়াশোনা করতে হয়েছে।

লন্ঠনের পরিস্কার আলো পেতে সন্ধ্যার আগেই সেটির চিমনি কাপড় দিয়ে ভালো করে পরিস্কার করে কেরোসিন তেল ভরে নিতে হতো। এখনো মনে পরে কাটা ঘুরিয়ে বাতির আলো কমাতে গিয়ে কতবারই না বাতির ফিতা নীচে ফেলে দিয়েছি। তারপর কেরোসিন তেলে আঙ্গুল চুবিয়ে সেই ফিতা আন্দাজ করে কতই না খোঁজাখুঁজি। আর বিছানার কাছাকাছি পড়ার টেবিল থাকায় মাঝ রাতের বেলায় পড়াশোনা করতে গিয়ে ঘরের ভেতরে বিছানায় কেউ শুয়ে থাকলে তার দিকে লন্ঠনের গায়ে একটা বই হেলান দিয়ে আলোটাকে আড়াল করে দেয়া হতো যাতে তার ঘুমের কোন অসুবিধে না হয়। আবার কেউ শরীরের কোন অংশে ব‍্যথা পেলে কিংবা বড়দের কোমর ব‍্যথায়, ব‍্যথার যায়গায় মালিশের তেল লাগিয়ে লন্ঠনের গায়ে একটি কাপড় গরম করে শেক দেয়া। এসব এখন কেবলই স্মৃতি।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে লন্ঠন বা হারিকেন বাতি। একসময় গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে আলোর জন্য ব্যবহৃত হতো লন্ঠন। লন্ঠনের আলো জ্বালিয়ে রাতে হাট-বাজারে যেত গ্রামের লোকজন। রাতের আঁধারে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে একমাত্র ভরসা ছিলো লন্ঠনের। রিক্সাওয়ালারা রিক্সায় লন্ঠনের ব‍্যবহার করত। গরুর গাড়িতেও লন্ঠন ব‍্যবহার হতো। দোকানদাররা বেচাকেনাও করত লন্ঠন তথা হারিকেনের আলোতে। অমাবস্যার রাতের ঘোর অন্ধকারে লন্ঠনের আলো জ্বালিয়ে রাস্তা চলার স্মৃতি এখনো অনেককে আবেগতাড়িত করে।

———————-
ফিচার গ্রুপ ~~
আগামী শুক্রবার অর্থাৎ ২৭ মে দেখুন ” : দ্যা পিয়েতা- রেনেসাঁ যুগের মহান শিল্পী মাইকেলেএঞ্জেলো/মিকেলাঞ্জেলোর দ্যা পিয়েতা ” ।




একটি ‘এমকে ( MK ) ‘সংগ্রহ এবং লিখনি ~~




ফিচার গ্রুপ ।
————-

একসময় লন্ঠন জ্বালিয়ে বাড়ির উঠানে কিংবা ঘরের বারান্দায় ছোট্ট শিশুরা একসাথে পড়াশোনা করতো। রানার চিঠির বোঝা পিঠে করে হাতে লন্ঠন নিয়ে ছুটে চলতো। কবি সুকান্তের ভাষায়-

‘হাতে লন্ঠন করে ঠন্‌ঠন্, জোনাকিরা দেয় আলো
মাভৈঃ রানার ! এখনো রাতের কালো।’

লন্ঠন বা হারিকেন হচ্ছে মূলত কাঁচের আবরণ বিশিষ্ট একটি আলোর প্রদীপ। গোলাকার কাঁচের চিমনির নিচের অংশে টিনের তৈরি তেলের ট্যাংক থাকত, যা দেখতে উপরে ও নিচে আনারসের মতো। আর ট্যাংকের ভেতর ঢালা হতো কেরোসিন তেল। প্রায় এক ইঞ্চির মত চ‍্যাপ্টা এবং ৬/৭ ইঞ্চির মতো লম্বা একটি ফিতাকে সলতে হিসেবে ব‍্যবহার করা হতো। সেই ফিতার এক চতুর্থাংশ তেলের ট্যাংকটিতে চুবিয়ে রেগুলেটরের ভেতরে দিয়ে চাবি ঘোরানো হতো। বাকি অংশ তেলের ট‍্যাংকে থাকতো। দিয়াশলাই দিয়ে রেগুলেটরের মুখের ফিতায় আগুন দিলেই আলো দিতে শুরু করতো লন্ঠন। আর রেগুলেটরটি দিয়ে ফিতে কমানো-বাড়ানোর মাধ্যমে আলো নিয়ন্ত্রণ করা যেতো। উপরের অংশে তারের একটি হাতল থাকতো। মূলত এই হাতল দিয়ে সহজেই লন্ঠন বহন করা যেত।

সন্ধ্যা হলেই বাংলার ঘরে ঘরে জ্বলে উঠতো লন্ঠন। সন্ধার পূর্বেই গৃহিণীরা এর চিমনিটি খুলে শুকনো ছাই এবং কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে রাখতেন। এতে আলো একটু ভালো পাওয়া যেতো।

আজকাল আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে গেছে সব। সেই হারিয়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় হারিয়ে গেছে এক সময়ের রাতের সঙ্গী লন্ঠন। আগে যে লন্ঠন আলোর অন্যতম বাহন ছিল, সেই লন্ঠন এখন খুঁজলে হয়তো দুই একটা বাড়িতে পাওয়া যাবে। আর সেটাই হয়তো শখের বশে রেখে দিয়েছেন কেউ, কিংবা অগোচরে রয়ে গেছে অথবা ভুলেই গেছেন সেটির কথা।

আকরাম উদ্দিন আহমেদ
লেখক
কুড়িগ্রাম।
২১/০৫/২০২২
আকরাম উদ্দিন আহমেদ।




# জনাব আকরাম উদ্দিন আহমেদ হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয় ।।
# লেখাটি আমাদের ব্লগেও পাবেন ।

হ্যালো জনতা ডট কম ।
hellojanata.com .

হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
কপি অ্যান্ড পেস্ট টু ইওর ব্রাউসার ।
https://hellojanata350.blogspot.com–

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।