ভ্রমনঃআমেরিকা ও সুন্দরবন ভ্রমন”- লিখেছেন খসরু খান ।

  ## A hellojanata.com Presentation  --


ভ্রমনঃআমেরিকা ও সুন্দরবন ভ্রমন”- লিখেছেন খসরু খান ।



আমার এই লেখা কোন গল্প কাহিনী নয়, আমার দেখা বাস্তবতা, আপনাদের সামনে সেটাই তুলে ধরলাম। আমেেরিকা ভ্রমন করতে গিয়ে হরিণ দেখে,আমি সত্যি হতভম্ব হয়ে গেলাম।

মানুষ দেখে তারা তেমন ভয় পায় না, ঠিক আমাদের দেশের হরিণ এর মতো এতো ভয় ভীতি নিয়ে থাকে না, শত শত গাড়ী যাচ্ছে, রাস্তার নিকটেই তারা ঘাস খাচ্ছে। আমাদের দেশের হরিণ যেমন সুন্দর বনে, বন্দি জীবন নিয়ে, ভয় ভীতি মধ্যে দিন পার করে, একদিকে মানুষের ভয় অন্য দিকে বাঘের ভয়, কে কখন তাদের উপর আক্রমন করে, তাদের জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেয়, এই চিন্তায় হরিণ সব সময় আতংকিত থাকে।

আমি দেখেছি সুন্দর বনের হিরণ পয়েণ্টে বাঘের ভয়ে, সন্ধার পর মানুষের কাছাকাছি হরিণ থাকতে চায়, তার জন্য ঐ হিরণ পয়েণ্ট এলাকার, বাংলো কিংবা জেলে পাড়ার ঘরের বারান্দায় অথবা ঘরের নীচে শত শত হরিণ এসে আশ্রয় নেয়। ( হিরন পয়েন্ট এর ঘর গুলো ৩/৪ হাত উঁচুতে তৈরী করা হয় নীচ থাকে ফাকা)

আমাদের দেশে কঠিন আইন আছে হরিণ নিধন না করতে, তারপরও মানুষ হরিণ মারার চেষ্টা করে বা মারে, কিন্তু বাঘের বেলা কোন আইন হয়তো নাই। তারা হরিণ মেরে খায়।

আমি শুরু করেছি সুদূর আমেরিকার হরিণ নিয়ে, আমার মনে হলো, এমন কোন পাহাড়/ জঙ্গল নাই যেখানে হরিণ নাই, বাসা বাড়ীর আসে পাসে যেখানেই পাহাড়ের সংযোগ আছে ওখানেই হরিণ আছে, সেই আমেরিকার জঙ্গল / পাহাড়/ বাসা বাড়ির আসে পাসে লক্ষ লক্ষ হরিণ আছে ছাগলের মত ঘুরা ফেরা করে, কেউ তাদেরকে ধরেও না, মারেও না, স্বাধীন ভাবে ওরা চলাফেরা করে, তার কারন হলো ঐ দেশে যারা বসবাস করে, সবাই আইন মেনে চলে, আর না মানলে তার খেসারত দিতে হয়, জেল কিংবা বড় অংকের ডলার গুনতে হবে।

আমাদের দেশে হরিণ মারা দন্ডনীয় অপরাধ, কিন্তু আমেরিকায় হরিণ মারা যায়,তবে তার জন্য সময় নির্ধারণ করা আছে, এই সময় এর মধ্যে হরিণ মারা কোন অপরাধ নয়, কিন্তু থাকতে হবে হরিণ শিকার এর লাইসেন্স, যার লাইসেন্স আছে তার সাথে ২/১ জন শিকারে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য শিকারীর সাথে যেতে পারবে। ঐ দেশে আমিও হরিণ শিকার করতে গিয়েছি। ১৫ দিন থাকবে তীর ধনুক দিয়ে হরিণ শিকার, ঐ সময় বন্দুক দিয়ে হরিণ শিকার করা যাবে না। তারপর আসবে বন্দুক দিয়ে শিকার করার সময়, ওখানে কোন কোন সময় আছে, মাদী হরিণ শিকার করার কিছু বিধিনিষেধ, আবার পুরুষ হরিণ মারতে তেমন কোন সমস্যা নাই। হরিণ শিকার করতে পারলে, জবাই করে সবগুলো হরিণ গাড়ির ছাদে করে নিয়ে আসতে হবে, গাড়ির বুটে কিংবা গাড়ির ভিতরে করে নিয়ে আসা অপরাধ। আমেরিকায় যতো হরিণ আছে, সেই আতুলনায় আমাদের দেশে ১% ও হরিণ হবে না।


আমি ডেলওয়ার নামের আমেরিকার একটি স্টেইট এ ছিলাম, আসে পাসে জঙ্গল আছে, প্রায় প্রতিদিন হরিণ দেখতে বিভিন্ন জঙ্গল এর পাসে গাড়ি নিয়ে চুপ করে, কোন একটা যায়গায় গাড়ির ভিতর বসে বসে থাকতাম, আমি অনেক দিন দেখেছি, আমার গাড়ির পাসে আসতো মাদী হরিণ ও কিছু বাচ্চা হরিণ, ঘাষ খেতো তারপর খেতে খেতে অন্য দিকে চলে যেতো, এরপর আরও নতুন হরিণ আসতো,এরা কাছাকাছি আসতো, আবার একই ভাবে ওরাও চলে যেতো। আমি একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি,প্রতিটি দলে ১ টি করে বড় পুরুষ হরিণ থাকে, সেটা একসাথে আসবে না, অনেক পিছনে থাকে, এরপর ঐ দলের আর পুরুষ কোন হরিণ আছে বলে মনে হয়না। সেই পুরুষ হরিণ-টি কমপক্ষে আধঘন্টা পরে আসে। তার কারণ আমি বুঝতে পারি নাই। আমি অনেক দিন এভাবেই আসতে দেখেছি। এই হরিণ এতোকাছে থেকে দেখা আমার কাছে একটা আনন্দের বিষয় ছিল।





এখন একটু ভাবুন, ওখানের হরিণ এর এতো সাহস বাড়ির আসে পাসে এসে খাবার খায়, আর আমাদের দেশের হরিণ কাছে আসা বা বাড়ির পাসে আসা দুরে থাক, মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়, আমাদের দেশের হরিণ আমেরিকার হরিণ এর মতো এতো বাড়তে পারছে না, একদিকে আছে বড় বড় বাঘ অন্যদিকে আছে চোরের ফাদ। হরিণ মেরে খেতে না পারলেও
চামড়া বিক্রি করে টাকা উপার্জন করে থাকে,তারপর আছে ঝড়, এই ঝড়ে অনেক হরিণ মারা যায়। জোয়ারের পানি আছে , সুন্দরবনে উঁচু পাহাড় নাই, যেখানে ইচ্ছে সেখানে যেতে পারে না, যখন জোয়ার হয় অনেক যায়গা পানির নীচে তলিয়ে যায়, হরিণ তখন জড়ো হতে থাকে শুকনো এলাকায়, আর সেখানে তখন চলে বাঘের আক্রমণ আর শিকারীদের ফাঁদে পড়ে ধরা।

সুন্দরবনে ৩০০ শত এর কমবেশি বাঘ আছে, তাদের মূল খাদ্য হলো হরিণ এর মাংস। তাহলে আমাদের দেশে হরিণ এর সংখ্যা বাড়বে কিভাবে? এই বিষয়গুলো নিয়ে বন বিভাগ, দেশের উচ্চ পর্যায়ের চিন্তাবীধরা বিদেশের আইন কানুন এবং সুন্দর বনের হরিণ নিয়ে একটু চিন্তা কাজে লাগালে হয়তো দেশে অনেক হরিণ বৃদ্ধি পেতো।অন্যান্য এলাকা গুলোতে হরিন সম্প্রসারিত করা যেতে পারে । TV ‘র সামনে বসলে দেখা যায় কত বুদ্ধিজীবি দেশ নিয়ে ভাবেন, দেশের উন্নতির চিন্তা করেন, পশু পাখি নিয়ে কত আলোচনা সমালোচনা করেন,এই সুন্দর বনের অবস্থা নিয়ে একটু ভাবলে হয়তো দেশের কিছু মঙ্গল হতো। দেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, এই পশু-গুলোর বংশ বৃদ্ধি পেতো।

দেশের মানুষ আইন বুঝে, কিন্তু মানতে কষ্ট হয় বা মানতে চায় না। তবে কোন এক সময় সবই হবে, অনেক হয়তো তা দেখে যেতে পারবে না। আমি বিষয়টি নিয়ে বুদ্ধিজীবিগনের এবং বন বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সবাই ভালো থাকুন আসসালামু আলাইকুম।


খসরু খান
২২মে ২০২২ ইং।

খসরু খান ।
লেখক ।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রাক্তন অফিসার ।




হ্যালো জনতা ডট কম ।
hellojanata.com .
# নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত অধিকাংশ অকৃত্রিম লেখা আমাদের ব্লগে নিয়মিত সম্প্রসারিত হয় ।
কাজেই লেখা ডিলিটের কারনে লেখা এখানে না পেলে ব্লগে পাবেন ।
হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
কপি অ্যান্ড পেস্ট টু ইওর ব্রাউসার ।
https://hellojanata350.blogspot.com

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।