Sundorban:এক ভয়ংকর বাঘে মানুষে লড়াইয়ের গল্প-সুন্দরবনের সত্য গল্প - তৌহিদুস সালাম।।

  ## A hellojanata.com Presentation  -- 

Sundorban:এক ভয়ংকর বাঘে মানুষে লড়াইয়ের গল্প-সুন্দরবনের সত্য গল্প ।

তৌহিদুস সালাম ।




# লেখাটি সংগ্রহ । লেখককে শুভেচ্ছা । Collected .

এক ভয়ংকর বাঘে মানুষে লড়াইয়ের গল্প #
—————————————————–
বৃষ্টি ভেজা রাতে গরম চায়ের সঙ্গে রোমহর্ষক গল্প পড়তে পড়তে হারিয়ে যেতে পারেন গহীন সুন্দরবনের কোনও সরু খালে । অথবা মাছ ধরায় রত এই দুই ভায়ের সঙ্গে। কিন্তু যারাই এ বনে প্রবেশ করেন তাঁরা সকলেই প্রায়শই বিপদ গ্রস্ত ! কেননা জানেন তো ? সুন্দরবনে বাঘ(রয়েল বেঙ্গল টাইগার)বাস করে । এদিকটায় প্রচলিত একটি বাক্য আছে- ” সুন্দরবনে আপনি বাঘের দেখা না পেলেও ‘বাঘ’ কিন্তু আপনাকে দেখছে এখানে প্রবেশের পর থেকেই “। ভীতিকর এক বাক্য ।
তাছাড়া খেয়াল করে দেখবেন যে কোন ছবিতেই বাঘ চোখ কটমট করে দৃষ্টি হীন ভাবে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে- এটিও এক বিস্ময় !




নিমাই ও কানাই মন্ডল। মায়ের পেটের দুই ভাই। সুন্দরবনের উপর নির্ভর করেই তাদের জীবন অতিবাহিত হয়। বাড়ি পাথরঘাটা উপজেলার বড় টেংরা গ্রামে। ওদের বাড়ি থেকে সুন্দরবন অনেকটা দূরে। তাই একবার গেলে বেশ কিছুদিন জঙ্গলে থাকতে হয়। আর বাড়ির পাশেই বলেশ্বর নদী।
বলেশ্বর নদী নিয়ে দুটো কথা না বললেই নয়। সাগর সমান বিশাল নদীটি সুন্দরবনের পাশ ঘেঁষে চলে গেছে। একসময় এই নদীর দুপাশেই সুন্দরবনের বিস্তৃতি ছিল। আজ নেই। এক দিকে মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটার মতো লোকালয় অন্য পাশে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরন্য। মাঝে বিশাল জল রাশি। বলেশ্বর নদীর জলের সঙ্গে এখানে মিলিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরের নীল জল। পাথরঘাটার মূল ভূমি থেকে নদী পথে এক কিলোমিটার গেলেই পাওয়া যাবে মাঝের চর / বিহঙ্গ দ্বীপ। দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশির ভেতর এক টুকরো সবুজ । বিহঙ্গ দ্বীপ পাশ কাটিয়ে নীল জলের সাগর সমান বলেশ্বর নদীর বিশাল মোহনা পাড়ি দিলেই পেয়ে যাবেন সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের অধীন ভয়ঙ্কর ব্যাঘ্র অধ্যুষিত গভীর জঙ্গল। জঙ্গল ঘেঁষে নদী পথে উত্তর দিকে এগুতে থাকলে পাওয়া যাবে সুপতি খাল। নদী সদৃশ্য বিশাল এই খাল একে বেঁকে সাপের মত চলে গিয়েছে গভীর অরন্যে।
নির্দিষ্ট করে ওদের যাত্রা পথের বর্ণনা এখানে দেয়া যাচ্ছে না। তবে ঘটনার বর্ণনা কারীর তথ্য ও আমার ঐ এলাকায় ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতার আলোকে সম্ভাব্য যাত্রা পথের একটা ছবি আঁকার চেষ্টা করেছি মাত্র।

ঘটনাটা ক’বছর আগের।
ওরা দুই ভাই সুন্দরবনের ছোট্ট একটা খাঁড়ি তে মাছ ধরতে এসেছে। খাঁড়ি ধরে চলতে চলতে অনেকটাই ভিতরে চলে এসেছে। বনের যতো গভীরে প্রবেশ করা যাবে বেশি মাছ পাবার সম্ভাবনা ততই বাড়বে।সুন্দরবনের মাছ বলতে বিভিন্ন প্রকারের চিংড়ি যেমন গলদা, বাগদা ও হরিণা এছাড়াও কাইন, দাঁতনে, পারশে, টেংরা সহ বিভিন্ন প্রকারের মাছ ও কাঁকড়া।
ভাটার টানে স্রোত যেদিকে যাবে সেদিকেই জাল পাততে হবে। ইতিমধ্যে ভাটার টানে খাঁড়ির জল অনেক খানি নেমে গেছে। এখন জালটা বাঁধতে হবে উপর দিকে। দুই আল দু পাশের গাছের গুড়িতে। একপাশে ছইলা আর অন্য পাশে কাঁকড়া গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে। পরে যখন জোয়ার আসবে, তখন জালের নিচের দিকটা ডুবে ডুবে খুঁটি দিয়ে ভাল করে আটকে দিতে হবে। তারপর জোয়ার শেষে ভাটিতে জলের স্রোত জালের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হলে মাছের ঝাঁক আটকে পরবে ওদের পাতা জালে। সুন্দরবনের জেলেদের জন্য এইটে খুব আনন্দের সময়। তবে বনের গভীরে নিরিবিলি অঞ্চলে মাছ ধরার এক মস্ত বিপদ আছে।

জোয়ার আসছে দেখে ওরা দ্রুত কাজে নেমে পড়ে। নিমাই জলে নেমে ডুবে ডুবে জালের গোরা মারতে থাকে। এ কাজটা খুব দ্রুত করতে হবে। এদিকে কানাই মন্ডল বনের মধ্যে গেছে খড়ি আনতে। যেহেতু বেশ কিছুদিন থাকতে হবে এই জঙ্গলে, তাই রান্নার খড়ি যতো টা সম্ভব যোগাড় করে রাখতে হবে। সপাং সপাং শব্দে ধারালো দা দিয়ে কানাই মন্ডল ডাল কাটতে থাকে।



নীরব নিস্তব্ধ বনে ডাল পালা ভাঙ্গার শব্দ অনেক দূর পর্যন্ত শোনা যায়। বনের পশু মাত্রই আগ্রহ খুব বেশি। সহসা কোনো শব্দ হলে ওরা ভয়ে আগেই পালিয়ে যায় না। হরিণ, শূকর, বানর আগে আগ্রহ ভরে দেখে নিতে চায় ‘হচ্ছে টা কি?’ যদি বিপদ বোঝে তাহলে নিমেষে যে কোথায় হারাবে আর টিকিও দেখা যাবে না। উৎসাহ নিয়ে দেখতে আসবে কিন্তু পালিয়ে যাবে না, এমন আরো একজন আছেন সুন্দরবনে। উনি চারিদিকে লক্ষ্য রাখেন । উনি ঘণ্টার পরে ঘণ্টা খেয়াল রাখেন । কে উনার এলাকায় ঢুকেছে তার কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটি ভাবেন বুঝিবা সেই লম্বা সময় ধরে ! উনি এ বনের রাজা ।তিনি কেউ তাঁকে দেখল নাকি দেখল না তার ধার ধারেন না, তবে তিনি সকল অনুপ্রবেশ কারীকেই দেখেন । উনি আবার বিশ্ববিখ্যাত। সারা পৃথিবীর মানুষ উনাকে এক নামে চেনে। আর সেই চেনা তাঁর রাগ, আক্রোশ, ক্ষীপ্রতা,মেঘগম্ভির গর্জন আর অপার সৌন্দর্যের জন্য।





জাল পাতা হয়ে গেলে দুই ভাইতে মিলে রান্নার আয়োজন করতে থাকে। এখন অনেকক্ষন বিরতি। এই অবসরে রান্না খাওয়া সেরে নিতে হবে। খাওয়ার মেনুটা শোনা যাক – মোটা লাল চালের ভাত, শুকনা মরিচের আলুর ভর্তা আর বাড়ি থেকে আনা টেংরা মাছের বাসি তরকারি। বেলা গড়িয়ে সূর্য পশ্চিম কোনে মোড় নিয়েছে। আর ভাটার টান শুরু হয়ে গেছে অনেক আগেই। পেতে রাখা জালের কাছে এসে ওদের চোখ ছানাবড়া। অনেক মাছ বেঁধেছে। এর আকর্ষণ দুর্নিবার। আর এই সময়টাই বিপদ আসার মোক্ষম সময়।
নিমাই অন্য মনষ্ক। ওর সব মনোযোগ মাছের দিকে।




শিকারের এই অনমণষ্কতায় বাঘের জন্য সবচেয়ে চরম মূহুর্ত। এই সুযোগের অপেক্ষায় বাঘ ঘন্টার পর ঘন্টা ঝোপের আড়ালে বসে থাকে। মানুষের মত ধৈর্যচ্যুতি ঘটে না।
চোখের পলক পড়তে না পড়তে ঝোপের আড়াল থেকে বেড়িয়ে এক লাফে নিমাইয়ের উপর। বাঘেরা এমনিতে ধীর গতির কিন্তু শিকারের সময় ক্ষণিকের এই ক্ষীপ্রতার তুলনা মেলা ভার।
নিমাই ধরাশায়ী। পিছন থেকে আসা থাবার আঘাতে মুখ থুবড়ে পড়ে খাল পারের নরম কাদায়। নিমেষে নিমাইয়ের পিঠের উপর উঠে ওকে চেপে ধরে ঘার মটকায়। নৌকার উপর বসে সব দেখছিল কানাই মন্ডল। এত বড় ঘটনা এত দ্রুত ঘটে চলেছে যে কানাই হতভম্ব। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে পশুর গাছের ডাল বা কান্ড থেকে তৈরি এক প্রকারের শক্ত লাঠি বাগিয়ে ধরে নৌকা থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়ে। অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুঠাম দেহের অধিকারী কানাই কোন ভাবেই তার দাদাকে নিয়ে যেতে দেবে না। প্রচন্ড আঘাত হানে বাঘের ঘার বরাবর।

যেভাবে আচমকা বাঘ আক্রমণ করেছিল ওদের উপর তেমন করে আচমকা প্রত্যাঘাতে ভেবাচেকা খেয়ে যায় বাঘ। কিন্তু সুন্দরবনের মানুষ খেকোর শক্তি ও সাহস অপরিসীম। মহারাজের জাত্যাভিমানে আঘাত লাগে। নিথর নিমাইয়ের দেহটি মুখ থেকে নামিয়ে প্রচন্ড গর্জন করে ঘুরে দাঁড়াল। মুখোমুখি মহা পরাক্রমশালী সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার বনাম বীর পুরুষ কানাই মন্ডল। দুজনাই মরণ পণ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। বাঘের গর্জন আর গোঙানি তে বনভূমি থরথর করে কাঁপছে। কানাই ও কম যায় না। তার চিত্কারের দমকে দমকে মুখ দিয়ে থুথু ছিটকে পড়ছে।

বাঘ দুরন্ত বেগে ছুটেছে কানাইয়ের দিকে। লাঠি হাতে প্রস্তুত কানাই মন্ডল। ঝাঁপিয়ে পড়ে কানাইয়ের উপর। চকিতে সরে যায় বাঘের গতিপথ থেকে। সরে গিয়েই লাঠির বেদম আঘাত হানে বাঘের পিঠ বরাবর। সহজে হার মানবার পাত্র নয় সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার। শিকার ফেলে সহজে যেতে চায় না বাঘ। আবারও কানাই কে আক্রমণ করে। এতটাই বিদ্যুত বেগে তেড়ে আসে কানাইয়ের দিকে যে, কানাই লাঠি উঁচু করার অবকাশ পায় না।
খালের গড়ানে পড়ে শিকার আর শিকারী জড়াজড়ি করে সোজা জল কাদায়। বাঘ কাত হয়ে কামড় বসিয়েছে কানাইয়ের বা হাতে। বাঘ পড়েছে জলের দিকে কাদার মধ্যে আর কানাই উপরের দিকে। কামড়ে ধরা হাত ছাড়া কানাই মণ্ডলের পুরো শরীর বাঘের আয়ত্তের বাইরে রয়েছে। দৃঢ় পেশীবহুল কানাই শরীরের সব শক্তি জড়ো করে ডান হাতের মোক্ষম ঘুশি চালায় বাঘের নাক বরাবর। উপর্যুপুরি আঘাত করতে থাকে।

ধস্তাধস্তি তে ইতিমধ্যে কাদায় পিছল খেয়ে, বাঘের পিছনের পা দুটো কাদার মধ্যে গেড়ে আছে। পিছনের পা দুটো ব্যবহার করে যে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াবে সে অবস্থাও নেই ওর। নাকে প্রচন্ড আঘাতে আঘাতে মুখের কামড় আলগা হয়ে পড়ে। ছাড়া পেয়ে কানাই এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে, পড়ে থাকা লাঠিটা নিতে এগিয়ে যায়। আর এদিকে ব্যাঘ্র মহারাজ মহা বিপদে। জীবনে এতবার শিকার করেছে কখনও এমন বিপদে পড়েনি। এই মানুষটা গায়ে যেন অসুরের শক্তি ধরে।

শিকার ফসকে যাওয়াই বাঘ সামনের দু পা, বুক আর পিঠের সম্মিলিত ঝাঁকুনীতে কাদা থেকে উঠে পরে। উঠেই নিমাইয়ের দিকে তাকিয়ে মাটির কাছে মুখ নিয়ে ভয়ংকর গর্জন করে ওঠে। সেই গর্জনের ধ্বনি প্রতিধ্বনিতে নিস্তব্ধ অরন্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। যেমন করে শিকারীর বন্দুকের গুলির শব্দে পাখি সব কলরব করতে করতে উড়ে পালায় তেমনিই এ বিভতস্ আওয়াজে আশপাশের গাছে থাকা পাখির দল কিচিরমিচির করতে করতে উড়ান দেয়। অসীম সাহসী নিমাইয়ের বুকটাও ভয়ে নিঃসার হয়ে যায়। তবে মানুষ খেকো এবার বনের পথ ধরে। ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় গভীর জঙ্গলে।

নিমাই তার বড়দার নিথর দেহ টাকে টেনে হিঁচড়ে নৌকাই তুলে নেয়। তখনও বা হাত থেকে রক্ত ঝরছে, যন্ত্রনাও অপরিসীম। তীব্র ব্যাথার অনুভূতিও তখন ফিকে হয়ে আসে ভাই হারাবার বেদনায়।

লেখক – তৌহিদুস সালাম ।
সংগ্রহ এবং ঈষৎ পরিবর্তিত ।
লেখককে ধন্যবাদ ।
আমাদের সুন্দরবন ওয়েব সাইট টিকে ধন্যবাদ ।
ছবি – সংগ্রহ /ফাইল।
হ্যালো জনতা ডট কম ।
hellojanata.com .


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।