Travel: থাইল্যান্ডের পুকেট বীচ ভ্রমন-খসরু খান ।

  ## A hellojanata.com Presentation  --


Travel: থাইল্যান্ডের পুকেট বীচ ভ্রমন-খসরু খান ।



পুকেট বীচ-থাইল্যান্ড কেউ যদি ঘুরতে যান, বীচে গেলে দেখতে পাবেন একঝাক বিদেশী পর্যটক বালির মধ্যে গড়াগড়ি করছে, কেউবা বালির উপর উপুড় হয়ে শুয়ে আছে,অনেক ঘুমিয়ে থাকে, গায়ের সাদা চামড়া কালো করছে, শরীর গরম হয়ে গেলে, তারপর সমুদ্রের নীল সচ্ছ পানিতে নেমে সাঁতার কেটে আবার সেই বালির উপর শুয়ে থাকে এভাবেই কাটে সুর্যের আলো থাকা অবধি ।

আবার কেউ কেউ সমুদ্র তীরের কাছাকাছি সী-বাইক নিয়ে ঐ বীচে ঘুরা ফেরা করে, আবার যখন ক্লান্ত হয়,সেই বালির উপর বিছানো চাদর কিংবা মাদুরের উপর টান টান হয়ে শুয়ে থাকে, গায়ে থাকে নামে মাত্র কাপড়, যদিও আমাদের কাছে এধরনের কাপড় পরিহিতা মহিলা একেবারেই বেমানান কিন্তু এ ধরনের কাপড় পরা ওই এলাকার মানুষের কাছে একেবারেই স্বাভাবিক একটা বিষয়, বীচের এর পাসেই আছে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ। তারা বিদেশী পর্যটক-দের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। এভাবেই চলে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। বীচে যখন থাকে তাদের কাপড় চোপড় দেখলে মনে হবে গরীব মানুয ( সেখানের জন্য)।

তারপর হলো বীচের আসল মেলা, সন্ধার পর ধীরে ধীরে সবাই বাহির হতে থাকে বারে যাওয়ার জন্য ।

 সকাল বেলা যাদের দেখলে মনে হতো গরীব, টাকা পয়সার অভাব, কোন রকম বীচ দেখতে আসছে, ঠিক ওরাই সন্ধার পর একজন রাজরানি মত কাপড় পরে দিনের ফকির রাতের রাতের রাজা,রানি সেজে গুঁজে বারে যাচ্ছে খাওয়া দাওয়া আর আনন্দ ফুর্তি করতে।

সব দেশেই আছে ধান্দাবাজ মানুষ। ধান্ধার খেলা ওখানে এর ব্যতিক্রম নয়। বারের বাহিরে আছে বিভিন্ন খেলার আয়োজন, মাতাল নাহলে অনেক খেলায় অংশ নিতে দেবে না। আমি একটি খেলার উদাহরণ এখানে তুলে ধরছি। প্রতিটি বারের সামনে আছে এই খেলার আয়োজন। ঠিক যে দিকে বার থেকে মানুষ বাহির হবে তার সামনে। একটি বড় গাছের টুকরো ১ হাত উঁচু হবে, ওখানে ৩/৪” লম্বা ৪টা লোহা থাকে এবং একটা হাতুড়ি থাকে ৪ জন খেলায় অংশ নিতে পারবে একটি বড় গাছের টুকরোতে, এই রকম অনেকগুলো গাছের টুকরো রেডি থাকে খেলার জন্য। ৫/১০ ডলারের বোর্ড আছে বা তারও বেশি দামের বোর্ড আছে। এখন খেলার নিয়ম হলো এভাবে সবাই ৫ টা করে হাতুড়ি দিয়ে লোহাতে মারতে পারবে তবে একসাথে ৫ টা মারতে পারবে না, একটা করে বাড়ি মারতে পারবে,সবাই টার্ন বাই টার্ন মারতে হবে। যে লোহা গাছে গাছে আগে ঢোকাবে কম বাড়ি মেরে সব ডলার তার হয়ে যাবে। আর যদি ৫টা মেরে কেউ ঢোকাতে না পারে বা ৫ টা টার্ন শেষ হয়ে গেলো, লোহা একজনও ঢোকাতে পারলো না, তখন সব টাকা হয়ে যাবে যারা খেলার আয়োজন করছে তাদেরমজার বিষয় হলো, মাতাল ছাড়া ঐ খেলায় কেউ অংশ নিতে পারবে না, এখন মাতাল অবস্থায় একটা লোহা দেখতে পায় ৩/৪ টা লোহা, ওরা বুঝতে পারে না কোনটা আসল লোহা আর কোনটা মাতাল অবস্থায় দেখা নকল লোহা। খেলা শুরু হলো, তারপর ২/১ টা সঠিক যায়গায় মারতে পারলেও পরবর্তীতে আসে পাসে সব লোহার বাড়ি পড়ে ব্যাকা হয়ে গাছের উপর পড়ে তারপরও লোহার বাড়ি মারতে থাকে এভাবে ৫ টা মারার পর কেউ লোহা গাছে ঢুকাতে পারে না, ওরা সব ডলার নিয়ে যায়। অনেক রাত অব্দি খেলা চলে, লোহা ঢোকাতে পারে না ডলার দিতে থাকে, তবে কম মাতাল হলে ২/১ জন ঢোকাতে ও পারে। তবে বেশির ভাগ মানুষ ডলার দিয়েই যায়। এই খেলার কোন পুঁজির দরকার হয় না, ভাজা মাছের তৈল দিয়ে মাচ ভাজি করার মত। এখানে খেলার জন্য আয়োজকদের টাকার দরকার পড়ে না শুধু লোহার খরচ, আর এটাই হলো আয়োজকদের মূলধন।

আমরা ৪/৫ জন সহযোদ্ধা/সহকর্মী হেঁটে হেঁটে বারের কাছ দিয়ে যাচ্ছি, তখন সন্ধা হয়ে আসছে, হঠাৎ সামনে দেখলাম ঐ খেলা, তখন আমরা ঐ খেলা খেলতে চাইলাম, তখন হেসে দিলো ওরা এবং বললো আপনারা এই খেলায় অংশ নিতে পারবেন না স্যার, এই খেলা খেলতে হলে মাতাল অবস্থায় খেলতে হয়, আপনারা তো মাতাল না ( তাদের ভাষায়,কিছু ইংরেজি ভাষায় আমাদের বিস্তারিত বুঝালো আমরা ছিলাম নৌবাহিনীর ড্রেস পরা অবস্থায়) আমাদের সম্মান দেখিয়ে বললো আপনার এক বোর্ড খেলেন ,আপনাদের কিছু দিতে হবে না। আমরা লোহার দাম দিতে চাইলাম সেটাও নিলো না। এরপর তাদের নিয়মে খেলা শুরু করলাম আমরা ৪ জন। কিন্তু আমাদের লোহা গাছে ঢোকানো সম্ভব হলো না। ২/৩ টার্নের মধ্যেই লোহা ব্যাকা হয়ে গেলো।একটু ভাবুন একজন সুস্থ মানুষ যেখানে ঢোকাতে পারে না মাতাল হলে তার পক্ষে লোহা ঢোকানো কতটুকু সম্ভব? তারপর ওদের ধন্যবাদ জানিয়ে আমরা অন্য দিকে মার্কেটিং করতে চলে গেলাম।

২ ঘন্টা পর আবার ঐ দিকে ফিরে যাচ্ছি, তখন দেখতে পেলাম বার থেকে লোকজন বাহির হচ্ছে, অনেকেই এই খেলায় অংশ নিচ্ছে কৌতুহল আর থামাতে পারলাম না, খেলার কাছে গেলাম, দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলাম, এই মাতাল মানুষগুলো লোহার উপর বাড়ি মারছে, নিজের লোহা রেখে অন্যের লোহায় হাতুড়ির বাড়ি দেয়, অন্যের লোহায় বাড়ি মারলে সে আবার বোল্ড আউট হয়ে যায়। যার লোহার মারলো ওকে আবার একটি লোহা দেওয়া হয় এবং যে কয় টার্ন গেছে ঐ কয়বার মারতে দেওয়া হয়। এই সমস্যা নিয়ে অনেক সময় ঝামেলা বাঁধে। এভাবে অনেক রাত খেলা চলে। এটা দেখা ও জানার সুযাগ আমার হয়ে ছিল। মাতাল হওয়া বিদেশি মানুষকে বোকা বানিয়ে কিভাবে ডলার হাতিয়ে নেয়। আমার এই বিদেশ ভ্রমন এর অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করলাম।

সমুদ্রের ধার ধরেই পাহাড় ঘেরা পুকেট এর বীচ গুলো অনেক সুন্দর। নীল পানির অনেক গুলো বীচ আছে। একবার গেলে ওখানে বার বার যেতে ইচ্ছে করবে। পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে ঘন্টা হিসাবে গাড়ি রেন্ট এ পাওয়া যায়।
পাসপোর্ট রেখে আপনাকে গাড়ির চাবি দিয়ে দেবে। পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে অনেক সুন্দর রাস্তা আছে। আমার এই লেখাগুলো পুকেট বীচে গেলে সবই লেখার সাথে মিলে যাবে। এই লেখা হয়তোবা পকেট ভ্রমন-কারীদের কোন কাজেও আসতে পারে। আপনাদের একটু কাজে আসলে আমার লেখা কিছুটা সার্থকতা পারে।

সবার জন্য ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

খসরু খান
৭ মে ২০২২ ইং।


খসরু খান ।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রাক্তন অফিসার ।


# জনাব খসরু খান হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয় ।।
# লেখাটি আমাদের ব্লগেও পাবেন ।
হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
hellojanata.com —
https://hellojanata350.blogspot.com–

হ্যালো জনতা ডট কম ।
hellojanata.com .

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।