এই বাংলায় বারো মাসে তেরো পার্বণ-তার একটি জামাই ষষ্ঠী-সালমা চৌধুরী।

 ## A hellojanata.com Presentation  -- 


এই বাংলায় বারো মাসে তেরো পার্বণ-তার একটি জামাই ষষ্ঠী-সালমা চৌধুরী।


জামাই ষষ্ঠী !
সালমা চৌধুরী ।
বারো মাসে তেরো পার্বণ পালন করা বাঙালীর এ যেন এক নিজস্ব উৎসব। সেই মঙ্গল কাব্যের সময় থেকেই
জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তে এই পার্বণ পালিত হয়ে আসছে।

পুরোনো ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালী শাশুড়ী মায়েরা মেয়ে ও জামাইয়ের মঙ্গল কামনায় এই ব্রত পালন করে থাকেন।
তবে “জামাই ষষ্ঠী” আসলেই জামাই খাওয়ানোর অনুষ্ঠান কি না সেটাই সন্দেহের ব্যাপার। এ অনুষ্ঠানটিকে বরং নারীদের অনুষ্ঠান বলেই অনুমান করেন অনেকে। বলা হয়ে থাকে, নারীদের অনুষ্ঠান ‘জামিষষ্ঠী’ বা ‘জাময়ষষ্ঠী’ থেকে কালক্রমে “জামাইষষ্ঠী” শব্দটির উদ্ভব।

‘জামি’ শব্দটি অর্থ সধবা বধূ, কুলবধূ বা এয়োস্ত্রী। মূলত সন্তানলাভের জন্য ‘মা ষষ্ঠীর’ ব্রত এটি। আগে নাম ছিল “অরণ্যষষ্ঠী।” বনে গিয়ে তাল পাখার হাওয়ায় মা ষষ্ঠীকে তুষ্ট করা হত তখন। ফলমূল আহার বিধেয় ছিল। এখনকার মতো জামাইদের কিন্তু ভূরিভোজের আয়োজন হত না। মূলত পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চাপে প্রাচীন এই লোকাচারটি নাম বদলে “জামাইষষ্ঠী” তে রূপে নিয়েছে।

তবে একটা সময় গ্রামবাংলায় রীতি ছিল, যতদিন না মেয়ে সন্তানসম্ভবা হচ্ছে, ততদিন মেয়ের বাড়িতে বাবা-মা পা রাখতে পারতেন না। দীর্ঘদিন মেয়েকে না দেখে মন আনচান করত বাবা-মায়েদের। তাই বছরের এই সময়টা মেয়ে-জামাইকে নেমন্তন্ন করে নিজে হাতে রেঁধে খাওয়াতেন শাশুড়ী মা। আর এ প্রথাই কালক্রমে “জামাইষষ্ঠী।”

গ্রামাঞ্চলে সাধারণতঃ জামাই আদরের জন্য জ্যৈষ্ঠ মাসই আদর্শ বলে মনে করা হয়। কারণ এ সময় গাছে গাছে আম-কাঁঠালের ছড়াছড়ি। পুকুর-নদীতে মাছেও ভরপুর। জামাইকে পাত পেড়ে খাওয়াতে কোনও অসুবিধাই হয় না শাশুড়ী মায়ের।

যাই হোক বাংলাদেশে বেশিরভাগ পরিবারেই এর প্রচলন তেমনভাবে নেই। তবে ”জামাই ষষ্ঠী” বিক্রমপুরের কিছু জায়গায় এখনো টিকে আছে।

জামাইষষ্ঠীর ভোরবেলাতেই মা বা শাশুড়ি “বিয়ইন” বা সুপারির খোল সাথে করে স্নান করে নেন। এরপর সেই “বিয়ইনে” রাখেন আম, কলা, লটকন, সুপারি, করুল(বাশের অপক্ক পাতা), দূর্বা, ধান ইত্যাদি।

স্নান করার সময় “বিয়ইন” এর মাঝে জল রাখা হয়। স্নান করে এসে সন্তান অথবা জামাইয়ের মাথায় সেই জল দেওয়া হয়, সাথে চলে করুল, ধান, দূর্বা ও কপালে দইয়ের বা চন্দনের ফোঁটা দিয়ে আশীর্বাদ। সাত পদের ফল খাওয়ানো হয়। অনেক বাড়িতে আবার তাল পাখা ভিজিয়ে বাতাস দেয়া হয় জামাইকে।

তারপর একটা ‘শিল’কে মা ষষ্ঠী কল্পনা করে পুজো করা হয়। অবশেষে এই “বিয়ইন” কে “মধুখাম” বা ঠাকুর মন্দিরে রাখা হয়।

সত্যি বলতে কি এসবের কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই, আসলে একেকজন একেকভাবে এ রীতি পালন করে থাকেন।


এছাড়া এই দিন দুধ, দই,ক্ষীর, চিড়া,মুড়ি,খই,মোয়া,আম,কাঁঠাল,লিচু সহ রকমারি খাবার দিয়ে জামাই আপ্যায়ন করার রীতি রয়েছে। সেই সাথে নতুন জামা কাপড় কেনাকাটা করা হয় জামাই এর জন্য।

তবে যুগের প্রবাহে, বর্তমানে এই আচার অনুষ্ঠানে তেমন সাড়া পাওয়া যায় না।

এছাড়াও বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে “আমাইত ভার” দেওয়ার প্রচলন আছে। “আমাইত ভার” এ জামাইর বাড়িতে আম- কাঁঠাল সহ কিছু ফল এবং অন্যান্য জিনিসপত্র উপহার পাঠানো হয়। তবে এখন সেটাও কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।

“জামাইষষ্ঠী” এর রীতিটা এখন হয়তোবা আর তেমন ঘটা করে পালন করা হয় না। তবে অনেকের কাছেই “স্বপ্নে বহুদূরের আভাস আসে” এরকম ব্যাপার। বয়স্কদের কাছে বহুদুরে ফেলে আসা পুরোনো এই “জামাইষষ্ঠী” এর স্মৃতি যেন স্বপ্নের মতই তাদের মানস পটে ফুটে ওঠে।

অস্ফুট স্বরে তাই বলে উঠেন, “হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার এসব লোকাচার…..”




লেখক – সালমা চৌধুরী।
আমন্ত্রিত লেখক ।
হ্যালো জনতা ডট কম ।
hellojanata.com .
# লেখাটি আমাদের ব্লগে প্রকাশিত এবং সংরক্ষিত হবে আজকেই ।
# এ ছাড়াও সব লেখার মতই ফেসবুক,টুইটার ও লিঙ্কেডিনে প্রচারিত ।
হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
কপি অ্যান্ড পেস্ট টু ইওর ব্রাউসার ।
https://hellojanata350.blogspot.com–

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।