প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৪৯ – নতুন বই!আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

  ## A hellojanata.com Presentation  -


প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৪৯ – নতুন বই!আকরাম উদ্দিন আহমেদ।





প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৪৯ –
নতুন বই !!
আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

নতুন বই!!

রাজধানী এক্সপ্রেস!
না আমার রাজধানী এক্সপ্রেসে কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার কোন পরিকল্পনা নেই। বলছিলাম কি নিমাই ভট্রাচার্যের লিখা “রাজধানী এক্সপ্রেস” বইটি পড়া সম্পর্কে।

বইটির প্রতি আমার আকর্ষণ সেই ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় থেকেই। কিন্তু সুযোগ না হওয়ার কারণে পড়া হয়ে ওঠেনি। এই বইটির প্রতি আমার আবেগ দেখে আজ থেকে প্রায় মাস খানিক আগে আমার স্নেহধন্য সুমন পড়ার জন্য বইটা আমাকে দেয়। কিন্তু বইটি আমি আজ পযর্ন্ত মাত্র একুশ পৃষ্টা পড়েছি। সমস্যা হলো বইটা যখনই হাতে নিয়েছি, বইটির অবয়ব দেখে তখনই পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি । কারণ বইটি পুরোনো। বইটি মনে হয় সেই দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে মুদ্রিত। ঢাকায় মূদ্রিত, মূদ্রনের সাল লিখা নেই, মনে হয় পাইরেটেড। মূল্য সাত টাকা। পৃষ্টা পচাঁনব্বই। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের বই গুলি পাইরেট হতো। ছাপার হরফ গুলো পুরোনো, কাগজও পুরোনো হয়ে বাদামি রঙ ধরেছে, কেমন যেন ম‍্যার মেরে। এখন আমি চিন্তায় পরে গেছি কবে এটি পড়া শেষ করতে পারব।

পুরোনো জিনিসের প্রতি আগ্রহ বরাবরই সকলের কম। এর আগে আমি কখনো পুরোনো বই হাতে নিয়ে পড়িনি। তবে বইয়ের ব‍্যাপারে বলা হয়ে থাকে বই পড়া শেষ হয়ে গেলেই তার আবেদন শেষ হয়ে যায়। তাই পড়ুয়ারা পড়া শেষে বই সের দরে ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করে তাদের বইয়ের আলমারি খালি করে নতুন বইয়ের যায়গা সঙ্কুলানের ব‍্যবস্থা করেন। আর পুরোনো বই ফেরিওয়ালার হাত ঘুরে চলে যায় নীলক্ষেতের ফুটপাতে। তবুও যাদের ক্রয় ক্ষমতা কম তাদের কাছে পুরোনো বইয়ের মূল্য কোন অংশেই কম নয়। তবে আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি আরও একটি কারণে। তা হলো হাতে আমার এন্ড্রয়েড ফোন এবং ঘরে এন্ড্রয়েড টিভি রয়েছে। এন্ড্রয়েড ফোন আর টিভির বৈশিষ্ট্য কি তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। হাতের মুঠোয় গোটা দুনিয়া। আর এই ফোন ও টিভির কাছেই রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো উপন‍্যাস মার খেয়ে গেল, বইটি নতুন হলে কথা ছিলনা। বইটি আসলেই পুরোনো।



নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরন্তন। আর তাই নতুন কোন কিছুর সন্ধান পেলে মানুষ প্রথমে সেদিকেই মনযোগ দেয়। হুমরি খেয়ে পড়ে নতুনের প্রতি। সেটা ভালোবেসেই হোক কিংবা না বেসে। এই যেমনটি দেখুন, নতুন বৌ। কত আদর কত কদর। অনেকে হয়তো বলেন, পুরোনো পাগলে ভাত পায়না নতুন পাগলে ধরে বায়না। তবে যাই বলুন ভাই নতুন বউয়ের বেলায় সেটা খাটেনা। নতুন বৌয়ের বায়না মেটাতে হবে সবার আগে। নতুন বাড়ি নতুন গাড়ি নতুন গয়না নতুন পোষাক নতুন জুতো কি অপছন্দের। এক কথায় বলা যায় নতুনের জয় জয়কার অর্থাৎ ঐ নতুনের কেতন উড়ে। বরোঞ্চ পুরোনোটাই সবার অপছন্দের। নতুন প্রজন্মের ভাষায় যতো সব ব‍্যাক ডেটেড, টিউব লাইট।

এখন দেখাযাক নতুন বই। নতুন বই সেতো নতুনই। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ আপনাকে টেনে নেবে বইটির গভীরে, যা মনোযোগকে আরো গাঢ় করে দেবে। কত সুন্দর বাঁধাই, কত সুন্দর প্রচ্ছদ, কি ঝকঝকে তকতকে ফটো প্রিন্টে লেখা, সাজিয়ে রাখা আলমারির দিকে তাকিয়ে দেখলে দৃষ্টি ফেরানো যাবেনা, টেনে হাতে নিয়ে পড়তে ইচ্ছে করবে। পড়তে শুরু করলে মনে হবে এক বসাতেই বইটা শেষ করে ফেলি।



এই ধরুন না, প্রতি বছর বাংলা একাডেমির তত্বাবধানে একুশের বই মেলা হয়ে থাকে। এই মেলা উপলক্ষ্যে লেখককেরা নতুন নতুন বইয়ের পান্ডুলিপি নিয়ে প্রকাশকের স্মরনাপন্ন হন। প্রকাশকেরা দিনরাত পরিশ্রম করে ছোট বড় নতুন পুরাতন সব ধরনের লেখকদের বই প্রকাশনার ব‍্যবস্থা করে থাকেন। এই বই গুলির প্রচ্ছদ প্রিন্ট কোয়ালিটি এবং কাগজের মান নিয়ে কোন প্রশ্নই আসেনা। এক কথায় অনবদ্য। তারপর মেলায় পাঠকের ঢল নামে। বিক্রি হয় কোটি কোটি টাকার বই। পুরাতন পাঠক তো আছেই নতুন নতুন পাঠকও মেলায় চলে আসেন। ষ্টলে ষ্টলে বই গুলো নাড়াচাড়া করেন পাতা উলটিয়ে দেখেন পছন্দের বইটি কিনে বাসায় চলে যান। তারপর দিন নেই রাত নেই, নাওয়া নেই খাওয়া নেই সবকিছু ভূলে কত তাড়াতাড়ি বইটি পড়া শেষ করে আরও একটি নতুন বই পড়া যায় যেন তার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন। মজার ব‍্যাপার হচ্ছে কি এই মেলায়ও কিন্তু পুরোনো বইয়ের কোন স্থান নেই।

আবার প্রতি বছর সরকার তার নিজস্ব উদ্দোগে স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে নতুন বই তুলে দেন। এখানেও কিন্তু পুরোনো বইয়ের কোন স্থান নেই। আমাদের অভিভাবকেরাও কিন্তু ছোট বেলায় প্রতিবছর আমাদের হাতে নতুন নতুন পাঠ‍্য বই তুলে দিয়েছেন। তারপর সেই বই নিয়ে আমাদের কত যত্ন আত্তী। নতুন বই হাতে পেয়েই শুকে দেখা, পুরোনো বছরের ক‍‍্যালেন্ডারের পাতা দিয়ে সেই বই মলাট করে ইস্কুলে সহপাঠীদের দেখানো। সে এক অনাবিল আনন্দ। যা পুরোনো বই নেড়েচেড়ে পাওয়ার কথা নয়। তথাপি আমাকে স্কুলের কিছু পাঠ‍্য বই পুরোনো পড়তে হয়েছে, কারণ আমার মেজ ভাই আমার দুই ক্লাশ উপরে পড়তেন। ওর ছেড়ে দেওয়া বই এক বছর পরেই আমাকে পড়তে হয়েছে। তবে মলাট করে অতি যত্ন করে ব‍্যবহারের কারণে তা প্রায় নতুনই থেকেছে।

পুরোনোর প্রতি সকলের অনাগ্রহ বরাবরই। পুরোনো সেতো পুরোনই। পুরোনো বই আমাদের দেশের বুড়ো মানুষের সাথেই তুলনীয়। কারণ মানুষ যখন বুড়ো হয় তখন তার কদর কমে যায়। একই ভাবে বই পুরোনো হলে তারও কদর কমে। অথচ পুরোনোর মাঝেই নতুনের ভিত্তি স্থাপিত হয়। পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে। পুরোনোকে অবহেলা করতে নেই। নতুন বই ক্রয়ে বিত্তবানদের অসুবিধা হয়না। কিন্তু নিম্ন বিত্তের জন্য তো নীলক্ষেতের ফুটপাতই ভরসা। আর কোন বইয়ের প্রকাশনা যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন তো পুরোনোই খুঁজতে হবে। অন্যদিকে নোতুন বইয়ের ক্রয় ক্ষমতা যতদিন আমাদের সামর্থ্যের বাইরে থাকবে ততদিন নীলক্ষেতের পুরোনো বইয়ের মার্কেটও চলবে।

আকরাম উদ্দিন আহমেদ
লেখক
কুড়িগ্রাম।
১৮/০৬/২০২২

hellojanata.com
আকরাম উদ্দিন আহমেদ।




# জনাব আকরাম উদ্দিন আহমেদ হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয় ।।

হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
hellojanata.com —
https://hellojanata350.blogspot.com

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।