Sundarbon: অনাদিকালের যুদ্ধ – বনবিবি আর দক্ষিন রায়-সুন্দরবনের উপাখ্যান- ম ম রবি ডাকুয়া ।

  ## A hellojanata.com Presentation  -- 


Sundarbon: অনাদিকালের যুদ্ধ – বনবিবি আর দক্ষিন রায়-সুন্দরবনের উপাখ্যান- ম ম রবি ডাকুয়া ।


সুন্দরবনের আশে পাশে হাজারো বনজীবিদের মনে জায়গা করে আছে বনদেবী,যারা পরম ভক্তিতে শ্মরণ করে।আজো বিপদ আপদে পূজা আর্চনার মাধ্যমে পরিত্রান চায়। এখানে আছেন দক্ষিন রায় । সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার দক্ষিন রায়ের ডান হাত আর বাম হাত । দক্ষিন রায়ের আদেশে সুন্দরবনের বাঘ ঝাঁপিয়ে পরে মানুষের উপর । আর বনদেবী বা বনবিবি বা বনমা বা পীর মা সুন্দরবনের ভেতরে জীবিকার অন্বেষণে যাওয়া কাঠুরে,জেলে,মধু সংগ্রহ কারী,বন রক্ষী সকলের জীবনের আর জীবন রক্ষার শেষ আশ্রয় স্থল । সকলেই লুকাতে চান দেবীর শাড়ীর আঁচলের নিচে ।

এলাকার জীবিকা অন্বেষণকারিরা বনে যান বনবিবির নাম জপতে জপতে , করেন পুজো ,মানতি করেন , করেন সিন্নি চলে আরাধনা , আর তা যে কোন ধর্মের মানুষ হোক না কেন ,মুসলিম ,হিন্দু ।খ্রিষ্টান যে ধর্মের হোক না কেন ! আবার পুজো চলে রাজা দক্ষিন রায়েরও!


বহু গভীরতর ঘটনা অঘটন আর দুর্ঘটনার আঁধার এই সুন্দরবনে নানান কথিত লোকজ ও কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। ছড়িয়ে রয়েছে মীথ । যা কিনা হাজার বছরের ইতিহাসে আর লোক কাহিনীর লোক গাঁথা হয়ে আছে।

বনদেবী বা বনমা ব্যাঘ্রদেবী হিন্দু ধর্মের দেবী ও বনবাসী মুসলমানদের পীর মা ।সুন্দরবনের বাংলাদেশ ও ভারতীয় কিছু অংশে ও এর আশেপাশের অনেকের মধ্যে মানত করার প্রবনতা আছে যেমন মুরগী ছাগল বা গরুও এরা বন দেবী বা বনমার নামে ছেড়ে আসে।স্থানীয় বনজীবিদের জনগোষ্ঠী বাঘের আক্রমণ হতে রক্ষা পাবার জন্যে বনবিবির পূজো করেন। কেউ কেউ আবার দয়াল পীর গাজি কালুর নামে শিন্নি মানত করেন।

তবে এ কথাও মানেন এ এলাকার সকলেই যে, নিষ্ঠুর রাজা দক্ষিণরায় (রায়মণি) হিংস্র বাঘের ছদ্মবেশে মানুষের উপর হামলা করেন। রাজা দক্ষিন রায় হত্যা,মৃত্যু আর জীবন হরণের প্রতিক । তিনি হিংস্র, তিনি দ্রুত গামী- চকিতে আক্রমনে সিদ্ধ ,তিনি শক্তিশালী,তিনি সীমানা মানেন না,তিনি প্রান হরনে পটু । কেউ বলেন বাঘের ছদ্মবেশে চলেন তিনি,কেউ বলেন সুন্দরবনের বাঘ রাজার সেনা সামন্ত । রাজা দক্ষিন রায়ের নির্দেশেই মানুষের প্রান হরণ করে বাঘ । আর রাজা দক্ষিন রায় মানুষের বানানো সীমান্ত (বাংলাদেশ-ভারত) মানেন না । সীমান্ত তিনি কচুই তোয়াক্কা করেন । চলাফেরা করেন দুই দেশের মাঝে বিস্তৃত সুন্দরবনে ।



# রাজা দক্ষিন রায় ।

সুন্দরবনে ঘুরতে গেলে হঠাৎ চোখে পড়বে আচমকা হঠাৎ কোন মন্দিরের।কোনও কোনও ভক্তরা মন্দির তৈরী করে ব্যাঘ্র-দেবদেবী বনবিবি, দক্ষিণরায় ও কালুর একসঙ্গে পূজা আর্চনা করেন।

সুন্দরবন অঞ্চলের লোকায়ত দেবী যিনি হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে উভয়ের দ্বারা পূজিত হন তিনি বনবিবি । মধু সংগ্রাহক, কাঠুরে, মৎসজীবীদের দেবী তিনি , বাঘের তথা দক্ষিণ রায়ের হাত থেকে তাদের রক্ষা করবেন এই বিশ্বাস তারা আজও লালন করে।




# বনের মাঝে বনবিবি’র পুজো। এখানে লাগে না কোন ঠাকুর বা পুরোহিত ।

ইতিহাসবিদদের মতে খুলনার বিভাগের ইতিহাস বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৫০০ সালের সময়ে সুন্দরবন এলাকায় দক্ষিণ রায়, বণিক ধোনাই-মোনাই এবং আলোচনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বনবিবি ইব্রাহিম (মতান্তরে বেরাহিম) নামে এক আরবদেশি ব্যক্তির কন্যা। ইব্রাহিমের স্ত্রী গুলাল বিবি সতিনের প্রতিহিংসার প্ররোচনায় সুন্দরবনে পরিত্যক্ত হন। সেখানে বনবিবির জন্ম লাভ হয়। দক্ষিণ রায় যশোরের ব্রাহ্মণনগরের রাজা মুকুট রায়ের অধীন ভাটির দেশের রাজা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে বনবিবির একাধিক যুদ্ধ হয়। দক্ষিণ রায় পরাজিত হয়ে সন্ধি করেন। দক্ষিণ রায়ের পরাজয় অর্থে বাঘ বা অপশক্তির পরাজয়। বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবনের বহু অঞ্চলে লোকসংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই বনবিবি। দেবীর পীরমাহাত্ম্য বিষয়ক কাব্যের নাম ‘বনবিবির জহুরানামা’। এই আখ্যান মঙ্গলকাব্যের ঢঙে রচিত হলেও আল্লাহ-রসুল, মক্কা, পীর-পীরানি যুক্ত আছে। অরণ্যচারী মানুষের বিশ্বাস, ভক্তি ও জীবনধারা এতে বর্ণিত হয়েছে। কিছু গবেষক দের মতে তিনি হিন্দু দেবী বনদুর্গা‌,বনচণ্ডী,বনষষ্ঠী বা বিশালাক্ষী । বাংলাতে ইসলামিক প্রভাবে বনবিবি হয়েছেন।

বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার সুন্দরবন অঞ্চলে বনবিবিকে নিয়ে কিছু কিংবদন্তি প্রচলিত আছে:


এক সওদাগরের দুই স্ত্রীর কাহিনী আছে। ছোটো বউয়ের কূচক্রান্তে সন্তানসম্ভবা বড়ো বউ গুলালবিবি সুন্দরবনে নির্বাসিতা হন। কয়েকদিন পর সেখানেই যমজ পুত্র-কন্যার জন্ম দিতে সক্ষম হন অতপর মৃত্যু বরন করেন। জন্মজাত শিশু দ্বয়ের কান্না শুনে বনের বাঘ, কুমির, হরিণ, অজগর, বানর সবাই ছুটে আসে। তারাই দুই ভাইবোনকে লালনপালন করে বড়ো করে তোলে। কৈশোর পেরিয়ে ছেলেটি বড়ো হয়ে বাঘের রাজা এবং মেয়েটি বনবিবি নামে পরিচিত হয়। স্থানীয়রা আজো বিশ্বাস করে এই বনবিবি হলেন মানুষের রক্ষাকর্ত্রী। তাঁরা মনে করেন, বনের বাওয়ালি-মাওয়ালি- সকলেই বাঘের মুখে পড়লে বনবিবির নাম স্মরণ করে মন্ত্র পড়ে আর সঙ্গে সঙ্গে বাঘও দৌড়ে পালিয়ে যায়। অদ্যাবধি স্থানীয় মানুষ বনে কাজে যাওয়ার আগে বনবিবির পূজা করে।

এখানে প্রচারিত যে, গুলালবিবি শাহ জংগলীর হাতে বনবিবিকে রেখে চলে যান। বনবিবি জঙ্গলে প্রকৃতির সন্তান হিসেবে লালিত পালিত ও বড় হয়। সাত বছর পর, ইব্রাহিম তার ভুল বুঝলেন এবং গুলালবিবি ও তার দুই সন্তানকে মক্কাতে নিয়ে যাওয়ার কাহিনী শোনা যায়।একবার, নবীর মসজিদে প্রার্থনা করার সময়, বনবিবি এবং শাহ জঙ্গলীর দুটি যাদুর টুপি পেয়েছিল বলে জানা যায়। ঐ ঐন্দ্রজালিক টুপিগুলির সাহায্যে তারা ভারতের আঠারোটি জোয়ারের দেশে চলে আসেন । এখানে আসার পর, শাহ জঙ্গলী প্রার্থনা করার আহ্বান করেন। আঠারো জোয়ারের(সুন্দরবনের) দেশ তাদের আগমনের পূর্ব থেকে দানব রাজা দক্ষিণ রায়ের নিয়ন্ত্রণে ছিল। প্রার্থনার শব্দ তার কানে যখন পৌঁছালো। তিনি তার বন্ধু সনাতন রায়কে তাদের বিষয়ে জানার জন্য করার পাঠালেন। যখন সনাতন তাদের দুজনের ব্যাপারে অবহিত হলেন তখন রাজা তাদের এলাকা থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে উপনিত হলেন।

বারিজহতি নামে এক গ্রামে দুইজন ‘মৌয়াল(মধু সংগ্রাহক) ধনাই ও মানাই ছিল।এরা সম্পর্কে দু ভাই আঠারো জোয়ারের দেশের একটি জঙ্গল’মহলে’ (ঘন জঙ্গলে) মধু সংগ্রহের জন্য ধনাই সাতটি নৌকা নিয়ে একটি অভিযানের জন্য যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার ভাই মানাই তার বিরোধিতা করে বসেন।তিনি একটি গরীব মেষপালক ছেলে, দুখেকে তার সাথে নেন।নৌকা ছাড়ার আগে, দুখের মা তাকে কোন গুরুতর সমস্যায় বনদেবীকে স্মরণ করার আদেশ করেন।যখন তারা কেন্দুখালি চর পৌঁছেছিল ( যা তখন ডাকাত রায়ের রাজত্বের অংশ ছিল) , তখন দক্ষিণ রায়কে উপহার দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। যার কারনে সে তিন দিবসের জন্য কোন মধু সংগ্রহ করতে সক্ষম হন নি। তৃতীয় রাতে, দখিন রায় তার স্বপ্নে হাজির হল এবং মানুষের বলিদানের জন্য বলল।দক্ষিণ রায়ের সাথে কিছু বিতর্কের পর, লোভী ধনাই মধু ও মোমের বিনিময়ে দুখেকে উৎসর্গ করার জন্য রাজি হন। তাই, যথেষ্ট পরিমাণে মোম এবং মধু সংগ্রহের পর তিনি দুখেকে ছেড়ে গ্রামে ফিরে যান। বাঘের ছদ্মবেশে দক্ষিণ রায় যখন দুখেকে হত্যা করতে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বনদেবীকে স্মরণ করেন। তাঁর প্রার্থনা শুনে বনদেবী তার ভাই জঙ্গলীর সাথে এসেছিলেন।দক্ষিণ রায়কে পরাজিত করে জংগলী। পরাজয়ের পর,দক্ষিণ রায় খান গাজী (গাজী পীর) -এর আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারা সেখানে দক্ষিণ রায়ের পিছু পিছু যান। অবশেষে,খান গাজী দক্ষিণ রায়ের ক্ষতি সাধন না করার জন্য বনদেবীকে রাজি করান। পরিবর্তে, গাজী দুখেকে মূল্যবান সাতটি কার্টুলি দিয়েছিলেন, আর রায় তাকে যথেষ্ট মোম এবং মধু দিয়েছিলেন। এ ও কথিত আছে পীর গাজী তার এক ধরনের বিশেষ শক্তি সম্পন্ন (আশা)নামে পরিচিত বর সম্বলিত এক পিতল বা কাঁশা ধাতব দিয়ে গেছেন তার একান্ত ভক্তকে যা দ্বারা তারা অলৈকিক প্রতিভা সাধন করতে পারেন ।বনবিবি তার পোষা মুরগিদের আদেশ দেন, দুখেকে তার গ্রামে রেখে আসার জন্য। গ্রামে ফিরে আসার পর, দুখে আশেপাশে বনদেবীর উপাসনাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। পরবর্তীকালে,তিনি ধনাইয়ের মেয়ে চম্পাকে বিয়ে করেন এবং তিনি গ্রাম প্রধান হন।

আর শুধুই কি মিথ ? শুধুই কি অন্ধ বিশ্বাস ? বনবিবি’র একটি অতি পুরাতন বৃক্ষ আছে । সকলেই বলেন বৃক্ষটি আনুমানিক ৪০০/৫০০ শত বৎসরের পুরাতন । সকলেই সাবধান হয়ে এই গাছ পেরিয়ে যান অতীব সম্মানে,অতি বিনয়ে ।সে গাছের পাতা ,ডাল যদি কেউ কাটেন বা ছিঁড়েন তবে বনবিবি রুষ্ট হন , সরিয়ে নেন তাঁর আশীর্বাদের হাত আর আক্রমনে এগিয়ে আসে রাজা দক্ষিন রায় – কখনো ছদ্দবেশে বা আক্রমন করান তাঁর অনুচর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার দিয়ে ।দেখুন সেই বৃক্ষ —



তাই এই সুন্দরবন এলাকায় জীবিকার সন্ধানে প্রবেশের আগে সেখানে বা তার উদ্দেশ্যে নানা রকম পূজা আর্চনা করে থাকেন। এটি প্রচলিত প্রথা আর এভাবেই শত শত বছর নানান ভাবে স্থানীয় হিন্দু মুসলিম খ্রিস্টান( খুবই কম বা নাই বললেই চলে ) বনদেবী কে স্মরণ ও পূজা আর্চনা করেন।তারা তাঁকে মানত করেন বিধায় তারা বিপদআপদ থেকে মুক্ত থাকেন । বনবিবির আশির্বাদ পুষ্ট হতে এ ধরনের ভক্তি আজও প্রচলিত আছে।



ম ম রবি ডাকুয়া ।

ফটো সংগ্রহ / ফাইল ।
হ্যালো জনতা ডট কম ।
# লেখাটি আমাদের ব্লগে প্রচারিত ।
hellojanata.com .
হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
hellojanata.com —
https://hellojanata350.blogspot.com–

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।