প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৫১ – বাঙ্গালীর সংস্কৃতিতে পান- আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

  ## A hellojanata.com Presentation  - 

প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৫১ – বাঙ্গালীর সংস্কৃতিতে পান- 

আকরাম উদ্দিন আহমেদ।



প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৫১ –
বাঙ্গালীর সংস্কৃতিতে পান !!
আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

বাঙ্গালীর সংস্কৃতিতে পান !!



উপমহাদেশে, বিশেষ করে বাঙালী জীবনে, তথা গ্রামবাংলায় পান খাওয়ার চল দীর্ঘদিনের। বাড়ীতে কেউ এলে, তাঁকে খাওয়ার পর, সেটা ভাতই হোক বা চা নাস্তাই হোক, এক খিলি পান দেয়া হতো। অতিথি এলে পান না দিয়ে বিদায় করা- গ্রামাঞ্চলে এটা কোনোমতেই ভালো চোখে দেখা হতো না । যুগ যুগ ধরে পান খেয়ে মুখ লাল করেছেন দাদি-নানিরা।
রুনা লায়লার জনপ্রিয় একটি গানই রয়েছে-

পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম
বন্ধু ভাগ্য হইলো না….

ওদিকে শেফালী ঘোষও মনের মানুষকে পানের খিলি দিয়েই আপ্পায়িত করতে চাচ্ছেন-

যদি সুন্দর একটা মুখ পাইতাম
যদি সুন্দর একটা মন পাইতাম
সদর ঘাটের পানের খিলি তারে
বানাই খাওয়াইতাম ।।…

এ থেকেই বুঝা যায় আমাদের বাঙালী সংস্কৃতিতে পানের ভূমিকা কতটুকু। এখনও অজপাড়া গাঁয়ের কৃষাণী আর বুড়োরা পান খাওয়ার অভ্যাস বজায় রেখেছেন। বাড়িতে চেনা-পরিচিত কিংবা কোনো আগন্তুক এলে আর কিছু না হোক এগিয়ে দেওয়া হয় পানের বাটা। নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে প্রায় উচ্চবিত্তের মধ্যেও দেখা মেলে পানের কদর। ক্রমে পান খাওয়ার চল শহরেও চলে আসে। কালক্রমে তা লোকজ সংস্কৃতিতে ঢুকে পরে।

বাংলাদেশে ঐতিহ্যগতভাবে সামাজিক রীতি, ভদ্রতা এবং আচার-আচরণের অংশ হিসেবেই পানের ব্যবহার চলে আসছে। এক সময় বিয়ে-শাদি পূজা-পার্বনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান পান ছাড়া চলতোই না। কনের বাড়িতে বর পক্ষ পান না নিয়ে এলে বিয়ে পর্যন্ত ভেঙে যেত।

প্রাচীন অভিজাত জনগোষ্ঠীর মাঝে বিভিন্ন উপকরণে পান তৈরি এবং তা সুন্দরভাবে পানদানিতে সাজানো লোকজ শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেত। ওই সময়ের নানী দাদিদের পান খাওয়ার শখ ছিল গল্পের মতো। তারা খুবই শৌখিনতার আদলে পান খেতেন। ছিল পানের বাটা। সরতা। যুগ পরিবর্তনে পানের বাটা, সরতা সোনালী অতীতে ঠাঁই নিলেও বাঙালী সমাজে পানের সমাদর কমেনি। ঐতিহ্য পরম্পরায় গ্রামের অধিকাংশ নারীরা এখনো পান খায়। নতুন বৌ এলে শখ করে নানী দাদীরা তাদের পান খাওয়ানো শেখায়। পান খেয়ে ঠোঁট লাল করলে নাকি স্বামীর আদর বেশি পাওয়া যায়! গ্রামের মুরব্বি গোছের মোড়ল চাচাদের পান চিবাতে চিবাতে শালিস-দরবার করার বিষয়টি এ দেশে দীর্ঘকাল থেকে পরিচিত। পুরান ঢাকার লোকদের মুখভর্তি পান নিয়ে পিচকি ফেলতে ফেলতে শাদা লুঙ্গির এক কোণে ধরে বনেদী ধাঁচে রাস্তায় হাঁটার বিষয়টিও সবার কাছে পরিচিত দৃশ্য।

তবে পানের পরিবেশনায় পানের বাটা বা পানদানি, কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। গেরস্থের অন্দরমহলে দুপুরে চুল এলিয়ে গায়ে রোদ লাগাতে লাগাতে মহিলাদের গল্পকথার সঙ্গী হতো পানের বাটা।
পান রাখা ও খাওয়ার পদ্ধতির মধ্যে বৈচিত্র্য দেখা যায় সারা ভারতজুড়ে। পান যেখানে রাখা হয় তাকে বলে ডাবর এবং পান যাতে করে পরিবেশন করা হয় তাকে বলে বাটা। ডাবরে পান ধুয়ে পানিতে ভেজা লাল সালু কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়, যাতে শুকিয়ে না যায়। সাধারণত পেতল অথবা রুপো দিয়ে তৈরি হয় পানের বাটা। তবে এদের আকার আকৃতি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন হয়।

সময়ের পরিবর্তনে এখন পান খাওয়ার প্রচলনে ভিন্নতা এসেছে। এখন বাজারে বিভিন্ন উপকরণ মেশানো রেডিমেট পান পাওয়া যায়। যেটাকে বলা হয় ‘খিলিপান’। একটি বড় পান বা একাধিক পান ঠোঙার মতো করে প্যাঁচিয়ে বানানো হয় এ পান। এ পানে থাকে কুচিকুচি করে কাটা সুপারি, জর্দা, খয়ের, বিভিন্ন ধরণের মিষ্টিযুক্ত মসলা, সুগন্ধি ইত্যাদি। ঢাকা শহরের বিশেষ করে পুরনো ঢাকার বাসিন্দারা এসব পানের বেশী সমজদার।

একসময় বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে ক্ষণে-ক্ষণে পান সাজা অথবা শেষ পাতে পান খাওয়ার রেওয়াজ আজ আর নেই। প্রজন্মের পরিবর্তনে এ সব দৃশ্য এখন অদৃশ্য হয়েছে। শুধু আজও বেশ কিছু বাড়িতে স্মৃতি চিহ্ন হয়ে রয়ে গিয়েছে পূর্বপুরুষদের ব্যবহৃত আকর্ষণীয় পানের ডাবর, বাটা আর রকমারি মশলার বাহারি কৌটা।

আকরাম উদ্দিন আহমেদ
লেখক
কুড়িগ্রাম।
০২/০৭/২০২২।

আকরাম উদ্দিন আহমেদ।


# জনাব আকরাম উদ্দিন আহমেদ হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয় ।।
# লেখাটি আমাদের ব্লগেও পাবেন ।
হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
hellojanata.com —
https://hellojanata350.blogspot.com

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।