প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৫৪ – হাত পাখার বাতাসে- আকরাম উদ্দিন আহমেদ।।

    ## A hellojanata.com Presentation  - 

প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৫৪ – হাত পাখার বাতাসে- আকরাম উদ্দিন আহমেদ।




প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৫৪ –
হাত পাখার বাতাসে —
আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
হাত পাখার বাতাসে !!


তোমার হাত পাখার বাতাসে
প্রাণ জুড়িয়ে আসে,
কিছু সময় আরো তুমি;
থাক আমার পাশে।।

শিল্লী আকবরের কন্ঠে গান আর মিউজিক ভিডিওতে পূর্ণিমার অভিনয়, অপূর্ব এই গানটি এখনো আমাদের অনেকের মনে দাগ কেটে আছে। গানের সাথে প্রাণের আবেগ সত্যিই আমাদের প্রিয়জনদের অনেক অনেক কাছে নিয়ে আসে। আর এই আবেগের মেলবন্ধনে হাত পাখার অবদান অনশ্বিকার্য‍‍্য। ভেবে দেখুন, কর্ম ক্লান্ত এক কৃষক খাচ্ছে আর গৃহবধু তার হাত পাখা দিয়ে স্বামীকে বাতাস দিচ্ছে। অথবা শিশু তার মায়ের হাত পাখার বাতাস খেতে খেতে তার রূপকথার গল্পের রাজকুমারের ঘোড়ায় চড়ে আনন্দে ঘুমপাড়ানির দেশে চলে যাচ্ছে। এ যেন প্রাণের কাছে হ্নদয়ের টানের মূর্ত প্রতীক। মধ‍্যিখানে অনুঘটক হাত পাখা।

হাতপাখার বিবর্তনের ইতিহাস আজ থেকে প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বে। এমনকি গ্রিক রোমানদের যুগেও এই হাতপাখার প্রচলন ছিল। প্রথম দিকটায় পাখাগুলো ছিল একটা সম্পূর্ণ অংশ। ভাঁজ বা ফোল্ডিং পাখা এসেছে আরো অনেক পরে। ইউরোপীয় বণিকরা প্রথম এই ধরনের পাখা নিয়ে আসে চীন ও জাপান থেকে। তখন এসব পাখা বেশ দুর্মূল্যই ছিল। এগুলোতে ব্যবহার করা হতো মণিমুক্তো ও হাতির দাঁত। সোনা-রুপোর পাত বসানো হাতপাখাগুলোয় নিপুণ হাতে শিল্পীরা আঁকতেন সেই সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক চেতনা কিংবা ধর্মীয় নানা কাহিনী, ফুল লতাপাতাসহ সমসাময়িক নানান বিষয়াবলী। আঠারো শতকের গোড়া থেকে ইউরোপে হাতপাখা তৈরি শুরু হয়। তবুও চীন থেকে আসা পাখার আবেদন তখনও ছিল তুঙ্গে।

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। এই ইংরেজ আমলে, এমনকি ইংরেজ আমলের পরেও পাকিস্তানি আমলে জজ-ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে এ ধরনের পাখা টেনে বাতাস করার ব্যবস্থা ছিল। তখন এ কাজের জন্য সরকারি কর্মচারীও নিযুক্ত ছিল। আর আজকের দিনের মাননীয় বিচারকেরা কি আরামে আছেন, সর্বক্ষণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে, গাড়িতে অথবা আদালতে।

সে সময়ে সৌন্দর্যের দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রাখার মতো যে পাখা, সেটি ছিল রঙিন সুতোর ‘নকশি পাখা’। অনেকটা নকশিকাঁথার মতো। তবে পাখার জমিন যেহেতু ছোট, সেহেতু সেখানে কারুকাজের সুযোগও কম। তবে সুতো দিয়েই পাখার গায়ে পাখি, ফুল, লতা-পাতা কিংবা ভালোবাসার মানুষের নাম অথবা ভালোবাসার চিহ্ন ফুটিয়ে তোলা হতো। পাখার বাতাসে প্রাণ যেমন জুড়ায়, তেমনি বাহারি সব পাখা দেখে চোখও জুড়ায়। কত রকমের পাখা থাকতো সেই সময় বাড়িতে, কাপড়ের পাখা, বাঁশের চাটাইয়ের রঙিন পাখা, তালপাতার পাখা, ভাজ পাখা, চায়না পাখা, ঘোরানো পাখা। প্রচণ্ড গরমে তাল পাতার পাখা পানিতে ভিজিয়ে সেই হাওয়ার মিষ্টতা আজকের এসি তে থাকা মানুষ বুঝবে না।

তবে কালের বিবর্তনে বিজ্ঞানের কাছে আবেগের স্থান নেই। বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ কেড়ে নিয়েছে আবেগ। এসে গেছে শীততাপ নিয়ন্ত্রণকারী এসি এবং বিদুৎ চালিত পাখা। যা মাথার উপরে স্বশব্দে অনবরত বন্ বন্ করে ঘুরছে। আর এই বিদ্যুৎ চালিত পাখার দাপটে এমনিতেই গৃহস্থের ঘর থেকে হারিয়ে গেছে তাল পাতার হাতপাখা।

এখন শহরে এই ধরনের হাত পাখা অনেক কম দেখা যায়। তবে গ্রাম বাংলায় হাত পাখার কদর এখনো কমে নি। কৃষক মাঠে কাজ করছে, আর তার স্ত্রী তার জন্য খাবার নিয়ে আসছে এবং সাথে একটি হাত পাখা। কৃষক খাচ্ছে আর গৃহবধু হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে। এই ছবি যেন মনে দাগ কেটে যায়।

তবে ছোটও অনেক সময় বড়দের উপকারে আসে এই আপ্তবাক্যটি আবারও প্রমাণ করে অসহনীয় লোডশেডিংয়ে এখনো এই হাত পাখাই অনেকের কাছে ভরসা। বিশেষ করে যাদের কাছে আইপিএস অথবা ইলেকট্রিক জেনারেটার ক্রয়ের সামর্থ্য নেই।

আকরাম উদ্দিন আহমেদ
লেখক
কুড়িগ্রাম ।
২৩/০৭/২০২২

আকরাম উদ্দিন আহমেদ।



# জনাব আকরাম উদ্দিন আহমেদ হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয় ।।
# লেখাটি আমাদের ব্লগেও পাবেন ।
হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
hellojanata.com —
https://hellojanata350.blogspot.com

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।