প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৫৬ – প্রেমের সেকাল ও একাল- আকরাম উদ্দিন আহমেদ।

   ## A hellojanata.com Presentation  - 

প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়’ ৫৬ – প্রেমের সেকাল ও একাল- আকরাম উদ্দিন আহমেদ।



প্রেমের সেকাল ও একাল !!

আকরাম উদ্দিন আহমেদ ।

প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে
আমারই এ দুয়ার প্রান্তে
সে তো হায় মৃদু পায়
এসেছিল পারি নি তো জানতে।।


আসলে সেকালে প্রেম আসতো নীরবে। কেউ যে একজনকে ভালোবাসে, তা জানতেও তার অনেক সময় লেগে যেতো। একদিকে সিনেমা হলে চলতো উত্তম সুচিত্রা জুটির অনবদ্য প্রেমের উপাখ‍্যান। অপর দিকে তাদের অনুপ্রেরণার প্রতিফলন দেখা যেত সেসময়ের প্রেমিক প্রেমিকাদের মাঝে।

সেকালে ভালোবাসার গল্প শুরু হতো চোখে চোখে।
ভালোবাসা গাঢ় হতো চিঠি আদান প্রদানের মাধ্যমে। ভালোবাসা শেষ হতো প্রেমিকার অন্য পুরুষের সঙ্গে বিয়ে আর প্রেমিকের চোখের পানি ফেলার মধ্য দিয়ে।

আর এখন ভালোবাসার গল্প শুরু হয় ফেসবুকে।
ভালোবাসা গাঢ় হয় রাত জেগে চ্যাট করার মাধ্যমে। ভালোবাসা শেষ হয় ফেসবুক একাউন্ট ডি-এক্টিভেট করার মধ্য দিয়ে।

একালের প্রেম-ভালবাসা আর সেকালের ভালবাসার মধ্যে ব‍্যবধান অনেক। সেকালে ভালোবাসা এত সহজ ছিলনা। তখন তো একালের মতো সেলফোন ছিলনা। যে একটা টেক্সট করে দিলাম। তখন ভালোবাসি কথাটা বলায় অনেক সময় লাগত, কথাটা বলতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হতো, ভাবের আদান প্রদানের মাধ্যম হিসাবে চিঠিই ছিল একমাত্র ভরসা, হুটকরে ভালোবাসার নাগাল পাওয়া যেতনা। আজকাল ভালবাসাটা একটা স্মার্টনেসে এ পরিনত হয়েছে। দুদিন কফিশপে গিয়ে আর সেলফোনে চ‍্যাটিং করে তৃতীয় দিনেই প্রপোজ করা যায়।

সেকালে প্রেমিক-প্রেমিকা দেখা করত কোন এক নিবিড় পরিবেশে। এক পলকে মিটে যেত সকল আশা। একবার দেখা করতে কয়েক মাস বা কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হতো। দূরে থেকে যোগাযোগ করার একটাই মাধ্যম ছিল চিঠি। সেই চিঠি লিখতেও আছে অনেক প‍্যারা। চিঠিতে ভালবাসি কথাটা বলতে লেগেছে অনেক সময়। চিঠি লিখতে প্রথমেই একটা সুন্দর প‍্যাডের প্রয়োজন পড়ত। অনেকেই ‘ভুলোনা আমায়’ চিঠির প‍্যাড পছন্দ করত। চিঠিটা কিভাবে লিখা যায় এর জন্য ক্লাশের অপেক্ষাকৃত ভালো ছাত্রদের সাহায্য নেয়া নতুবা শব্দ চয়ন করতে বাণী চিরন্তন বইয়ের আশ্রয় নেয়া কিংবা কোন কবির ভাষা ব‍্যবহার করা যায় কিনা সেই নিয়ে কতশত চিন্তা করে বেচারা প্রেমিকের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেত। ওদিকে মেয়েরা চিঠি লিখত হাতে সময় কম নিয়ে। কারণ বাসায় কেউ যদি দেখে ফেলে তাই তাড়াহুড়ো করে ভূল বানানে লিখে ফেলতো। তবে তাদের চিঠির শেষে থাকত কিছু আলপনা অথবা কোন কোটেশন। চিঠিতো লিখা হল এখন পাঠাতে হবে- প্রেমিকা অন্য জেলার হলে অতি সাবধানে ডাক মারফত পত্র প্রেরণ। সেখানেও চিন্তা, চিঠিটা কার হাতে পড়ে। সঠিক প্রাপকের হাতে পড়বেতো? প্রেমিকা স্থানীয় হলে চিঠিটা পাঠাতে বিশ্বস্থত কোন বন্ধু বা প্রেমিকার বিশ্বস্থত কোন বান্ধবীর সাহায্যের প্রয়োজন হতো। আর যদি কোন ভাবে তা বড়দের হাতে পড়ে যায়, তাহলে তো আর কোন কথাই নেই। একশন শুরু- প্রেমিকার স্কুলে যাওয়া বন্ধ। প্রেমিকের গুরুজনের কাছে নালিশ। এতে কাজ নাহলে অভিভাবকের সহায়তায় প্রেমিকার স্কুল পরিবর্তন। এদিকে চিঠির উত্তরের প্রত‍্যাশায় প্রেমিকের দিন যেন কাটেনা, অনেক অপেক্ষার পর উত্তর পাওয়া চিঠিটা কতবার যে পড়া হতো তার কোন হিসেব থাকতনা।

চিঠিতো আদান প্রদান হলো, এবার সকলের অগচরে দেখা-সাক্ষাৎ কিভাবে করা যায়। আবারও বান্ধবীর সহযোগিতায় সামাজিক কোন অনুষ্ঠানে যেমন বিয়ে বাড়িতে বা হলুদের কোন অনুষ্ঠানে দেখা করে কিছু কথা বলা। তবে এখনকার মতো নির্জনে বসে হাতে হাত অথবা কাঁধে কাঁধ রেখে আলাপচারিতায় সময় পার করে দেওয়া, এটি খুবই কঠিন কাজ ছিল। যারা অতি সাহসি তাদের পক্ষেই এটা সম্ভব হতো। আর কোন কারণে প্রেমিকার অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে গেলে প্রেমিকের সেকি যাতনা, নাওয়া নেই খাওয়া নেই আলুথালু কেশ-দাড়ি, বেশভুষার প্রতি নজর নেই, একেবারে দেবদাস বনে যাওয়া। পড়াশোনা একেবারেই চাঙ্গে, সেই বিরহের ঘোর কাটাতে অনেক সময় লেগে যেত।

আর একালের প্রেম-ভালবাসাগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় যেভাবে “ফল ইন লাভ”ㅡ”ব্রেকিং আপ” হচ্ছে, কাউকে আর কষ্ট করে প্রেমের জন্য মরে গিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরী করতে হবে না, প্রেমই একদিন মরে গিয়ে মানবজাতির জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে রইবে।

সত্যি কথা বলতে কি, প্রযুক্তির সাথে সাথে প্রেমটাও এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। চিঠির জন্য অপেক্ষা করে করে এখন অনুভূতিগুলোকে আর বাড়তে দেওয়া হয় না। এখন আর প্রিয়তমার প্রেরিত বার্তাগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ার সময় নেই। কে কত তাড়াতাড়ি টেক্সট করতে পারে তার উপরই প্রেমের আয়ুষ্কাল নির্ভর করে। টেক্সট করতে দেরী হলেই সন্দেহ, আর সন্দেহ হলেই ফেইসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেইঞ্জড টু সিঙ্গেল। এই গতির যুগে প্রেমও এতোটাই গতিশীল হয়ে গেছে যে, প্রেমিক-প্রেমিকারা এখন আর দৌড়েও প্রেমের নাগাল পায় না।

আকরাম উদ্দিন আহমেদ
লেখক
কুড়িগ্রাম।
২০/০৮/২০২২






# জনাব আকরাম উদ্দিন আহমেদ হ্যালো জনতার নিয়মিত লেখক ।।
# তাঁর সকল লেখা আমাদের ব্লগ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয় ।।
# লেখাটি আমাদের ব্লগেও পাবেন ।
হ্যালো জনতার ব্লগ সাবস্ক্রাইব করুন।।
hellojanata.com —
https://hellojanata350.blogspot.com

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি-রবি ডাকুয়ার বিজয় দিবসের কবিতা ‘বিজয়ের জন্যে’।।

তাল বা খেজুর রসের বিকল্প, গোলফল দিয়ে হতে পারে রস গুড়-রবি ডাকুয়া ।।

কেন আমাদের এমন মাথা নিচু ছবি দেখতে হবে ? মুসা কামাল-সম্পাদক- হ্যালো জনতা .কম ।।